দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে সরকার সামনে এগিয়ে যাচ্ছে : মিয়া গোলাম পরওয়ার

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, দেশের জনগণ ১৫ টি বছর ধরে হত্যা, খুন, গুম সহ চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আহত হয়েছেন, চোখ হারিয়েছেন, পা হারিয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন, ব্যবসা হারিয়েছেন , সম্পদ হারিয়েছেন । আমরা যেটি দীর্ঘদিন যাবৎ করতে পারিনি এই ছাত্র আন্দোলন এক মাসেই তা করে দেখিয়েছে। তাই নির্বাচন নিয়ে কোন ব্যস্ততা নয়। দেশি-বিদেশি সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে বর্তমান সরকার সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে সহযোগী করা আমারে প্রত্যেকের নৈতিক দায়িত্ব।

শনিবার (২৪ আগস্ট) সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শাহাদাত বরণকারী ৪ শহীদ পরিবারের সম্মানে আয়োজিত দোয়া ও নগদ অর্থ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমীর মুহাদ্দিস রবিউর বাশারের সভাপতিত্বে এবং জেলা সেক্রেটারী মাওলানা আজিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারী ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ও মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী। এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম মুকুল, সাবেক এমপি গাজী নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের জেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুল বারী, শহর ছাত্র শিবিরের সভাপতি আল মামুন, জেলা শিবিরের সভাপতি ইমামুল ইসলাম, শহর জামায়াতের আমীর মোঃ জাহিদুল ইসলাম, সদর উপজেলা জামায়াতের আমীর মাও. শাহাদাৎ হুসাইন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমস্বয়ক রিফাত হোসেন, নাজমুল ইসলাম রনি, নাহিদ হাসান এবং ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আসিফ হুসাইনের পিতা মাহবুবুল আলম। এসময় শহীদ আলম সরদার, হাফেজ আনাছ বিল্লাহ এবং আদম আলীর পরিবার উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা নায়েবে আমীর শেখ নুরুল হুদা, আব্দুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারী মাহবুবুল আলম, অধ্যাপক গাজী সুজায়াত আলী, প্রভাষক ওমর ফারুক, কর্মপরিষদ জামশেদ আলম, রুহুল আমিন, এড. আব্দুস সুবহান মুকুল, মাওলানা ওসমান গণি, সমন্বয়ক সুহাইল মাহদীন সাদি, সদর উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারী মাও. মোশাররফ হুসাইন, শহর জামায়াতের সেক্রেটারী খোরশেদ আলম, কলারোয়া উপজেলা জামায়াতের আমীর মাও. কামরুজ্জামান, আশাশুনি উপজেলা জামায়াতের তারিকুজ্জামান তুষার, সেক্রেটারী মাও. মোশাররফ হুসাইন, দেবহাটা উপজেলা জামায়াতের আমীর মাও. ওলিউল ইসলাম, সেক্রেটারী হাফেজ এমদাদুল হক, কালিগঞ্জ উপজেলা জামায়াতে আমীর মাও. আব্দুল ওহাব সিদ্দিকী, শ্যামনগর উপজেলা জামায়াতের আমীর মাও. আব্দুর রহমান, সেক্রেটারী মাও. গোলাম মোস্তফা, শহর নায়েবে আমীর মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারী হাবিবুর রহমান, এড. আবু তালেব, মাষ্টার বদিউজ্জামান, আনিছুর রহমানসহ অনেকে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, কোন অনুষ্ঠান করতে গেলে পুলিশ বাধা দিতো, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের পর সেই পুলিশ ফোন করে খোজ খবর নিচ্ছে। এর জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করতে হবে। তিনি আরো বলেন, পতনের ৪ দিন আগে হাসিনা জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিল। হাসিনা ভেবেছিল জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ করে বাঁচতে পারবে। কিন্তু সে বাঁচতে পারেনাই বরং তাকেই দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। তুমি জামায়াত নিষিদ্ধ করেছো? অন্য দিকে বাংলাদেশের মানুষ তোমাকে নিষিদ্ধ করেছে। জামায়াতকে সম্মান দিয়েছে দেশের জনগন।

মিয়া গোলাম পরওয়ার সাতক্ষীরার গণমানুষের ত্যাগের কথা স্বীকার করে বলেন ১৫ বছরের আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের প্রায় অর্ধশতাধিক ভাইকে শহীদ করা হয়েছে, আহত করা হয়েছে দেড় শতাধিক। ২৫৬ টি বাড়ি ঘরে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট করে ছাত্রলীগ যুবলীগের সন্ত্রাসীরা।

সাতক্ষীরা জামায়তে ইসলামীর প্রাণপুরুষ কাজী শামসুর রহমান সাহেবের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন তার অবদান আজকের এই জামায়াতে ইসলামের বর্তমান অবস্থা। সাবেক এমপি আব্দুল খালেক মন্ডল এর কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, জেলখানায় থাকাকালিন তিনি কুরআনের হাফেজ হয়েছেন এবং সেখানেই তাকে তিলে তিলে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর এ ত্যাগ সাতক্ষীরা বাসি স্মরণ রাখবে।

গোলাম পরওয়ার আরো বলেন, শেখ হাসিনার পেটুয়া বাহিনীর হাতে ১০০০ ছাত্র জনতা শহীদ হয়েছেন। কয়েক হাজার আহত হয়েছেন। আহতরা হাত হারিয়ে পা হারিয়ে চোখ হারিয়ে বিছানায় চোখের পানি ফেলছে তাদের চোখের পানি এখনো শুকায়নি। এখন ভোটের জন্য আপনারা ব্যাস্ত হবেন না। আমরা তো ১৫ বছর ভোট দিতে পারিনি,যদি আরো একটু দেরিতে হলে সকল জনগন তাদের ভোটাধিকার নির্বিঘ্নে প্রদান করতে পারে সেটাই ভালো হবে। কারণ আওয়ামী ষড়যন্ত্রকারীরা সক্রিয় না থাকলেও বিদেশে বসে তারা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখে তারা দুই দুইবার পাল্টা অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছিল। দেশের জনগণ তা প্রতিহত করেছে।

এরপর সেক্রেটারি জেনারেল সাতক্ষীরায় কোটা আন্দোলনে শহীদ চারজন ভাইয়ের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করেন। দোয়া মোনাজাতে তিনি বন্যার্তদের জন্য আল্লাহর কাছে সহযোগিতা কামনা করেন প্রতিবেশী দেশ শত্রুতা করে দেশের মানুষকে ভাসিয়ে দিতে চাই আল্লাহ তুমি তাদেরকে ষড়যন্ত্র থেকে বিরত রাখুন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারী ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক বলেন, শেখ হাসিনা পালাই না কিন্তু এ কথা বলার পরদিনই দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। জামাতে ইসলামী পালাই না জামাতের নেতারা হাসি মুখে ফাঁশির রশিকে চুম্বন করেছে। এদেশের জনগণ তাদেরকে আর কোন ষড়যন্ত্র করতে দেবে না। তিনি শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যেখানের মাল সেখানে চলে গেছে। ছাত্র আন্দোলনে আহতদের স্মরণে তিনি বলেন এই জীবন্ত শহীদদের রক্তে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি এখনো তাদের শরীর থেকে বুলেট বের করা সম্ভব হয়নি। তিনি জনশক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলেন আমীরে জামাত বলেছেন আমরা প্রতশোধ নেবে না তবে যারা সন্তান হারিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, সেসকলা ভিকটিমরা মামলা করতে চাইলে আমরা অবশ্যই তাদেরকে সহযোগিতা করব । আইন হাতে তুলে নেবেন না পুলিশকে সহযোগিতা করুন, পুলিশের উপর চড়াও হবেন না। আপনারা যেভাবে হিন্দুদের মন্দির পাহারা দিয়েছেন আগামীতে তাদের বড় উৎসব এই উৎসবের দিনগুলোতে তাদের মন্দির এবং তাদের নিরাপত্তা দায়িত্বে আপনাদেরকে পালন করতে হবে। আইন হাতে তুলে নেবেন না। আপনাদের সমস্যা থাকলে দেশের গর্বিত সন্তান সেনাবাহিনী দায়িত্ব হচ্ছে তাদেরকে বলুন। ডিসি সাহেব কে বলুন। এসপি সাহেবকে বলুন । আমরা তাদের মাধ্যমে আপনাদের সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করব।
মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী তার বক্তব্যে কুরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন স্বৈরাচার সরকার চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র করেছিলো আল্লাহ তাদের সকল চক্রান্ত ষড়যন্ত্রে তাদেরকেই গ্রাস করেছে।
কেন্দ্রয়ি কর্মপরিষদ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ তার বক্তব্যে বলেন আল্লাহর কাছে দুটি জিনিস সবচাইতে প্রিয় ১. শহীদের এক ফোটা রক্ত এবং মুত্তাকির এক ফোটা চোখের পানি। স্কুল-কলেজের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের অশ্রুসিক্ত চোখ নিয়ে বলেছিল এই সরকার স্বৈরাচার সরকারকে আমরা চাই না আল্লাহ তাদের এই দোয়াকে কবুল করেছেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতি মুহাদ্দিস রবিউল বাশার বলেন. বাংলাদেশ নতুনভাবে স্বাধীন হয়েছে এই স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য আমরা অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করব দেশের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখব।

অনুষ্ঠানে শহর জামাতের আমির জাহিদুল ও সাধারণ সম্পাদক বৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।