দেশের বাইরে যেতে হতে পারে খালেদা জিয়াকে

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে সুস্থ না অসুস্থ এ নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ, তাকে মুক্তি দিতে হবে। এছাড়া ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের মাধ্যমে অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ দিতে হবে। চিকিৎসকদের সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা করতে হবে। আর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেনে, চিকিৎসা যদি দেশে হয়, তাহলে বিদেশ নিতে হবে কেন? যদি বিদেশ নেওয়া প্রয়োজন পড়ে অবশ্যই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানো হবে। আর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, কারামুক্তির পর খালেদা জিয়া দেশে নাকি বিদেশে চিকিৎসা করাবেন- সে বিষয়ে তিনি নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর তার শারীরিক অবস্থা দেখার জন্য গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবের সাতজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে কারাগারের সামনে দেখা করতে যান। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পেয়ে তারা ফিরে যান। এ সময় কারা সড়কে ড্যাবের সভাপতি একেএম আজিজুল হক সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা জানার জন্য আমরা এসেছিলাম। তার হাঁটুতে সমস্যা থাকায় নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। এ কারণেই আমরা এসেছিলাম। অনুমতি না পাওয়ার কারণে দেখা করতে পারলাম না। গত ২৮ মার্চ একটি মামলায় খালেদা জিয়াকে আদালতে উপস্থিত করার কথা ছিল। কিন্তু অসুস্থতার কারণে তাকে আদালতে উপস্থিত করা সম্ভব হয়নি।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি আবদুল্লা আবু গণমাধ্যমকে জানান, খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করতে না পারায় কারা কর্তৃপক্ষ কাস্টডি ওয়ারেন্ট পাঠিয়েছে। শারীরিকভাবে অসুস্থ, তাই খালেদা জিয়াকে আদালতে আনা হয়নি।

এরপর থেকেই খালেদা জিয়া সুস্থ না অসুস্থ তা নিয়ে সর্বত্রই তোলপাড় চলছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র নেতারা। গতকাল শুক্রবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ দাবি জানান। এ সময় দলের সিনিয়র নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের সুস্পষ্ট প্রস্তাব রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের অবিলম্বে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য যেতে দেওয়া। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য সর্বোত্তম ব্যবস্থা হচ্ছে, অবিলম্বে খালেদা জিয়ার প্রাপ্য তাকে জামিন দিয়ে মুক্তি দিয়ে তার চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আপনারা (সাংবাদিকরা) জানেন যে, ইতোমধ্যে তিনি (খালেদা জিয়া) যে চিকিৎসাগুলো নিয়েছেন সবই প্রায় বিদেশে। সেটার ফলোআপ করাটা অত্যন্ত জরুরি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে যে পরিবেশে তাকে রাখা হয়েছে, সেটা তার প্রাপ্য নয় এবং এতে করে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সরকারপ্রধান প্রতিপক্ষ মনে করে তাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। সর্বশেষ, তাকে একটি মামলায় সাজা দিয়ে কারারুদ্ধ রাখা হয়েছে।

আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়া হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে জামিনটি পর্যন্ত কার্যকর করা হচ্ছে না। যেভাবেই হোক, তাকে কারারুদ্ধ করে রাখার জন্য প্রতিটি বিষয়কে বিলম্বিত করা হচ্ছে।
চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এ শীর্ষ নেতা বলেন, আমরা প্রথমত তার মুক্তির দাবি করছি। এরপর তিনি ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি দেশে নাকি দেশের বাইরে চিকিৎসা নেবেন।

এদিকে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, চিকিৎসা যদি দেশে হয় তাহলে বিদেশ নিতে হবে কেন? যদি বিদেশ নেওয়া প্রয়োজন পড়ে অবশ্যই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানো হবে। সরকার এতটা অমানবিক হবে না।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, যদি সত্যিকার অর্থে বিএনপি নেত্রী অসুস্থ হন, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নেবে সরকার।

তিনি বলেন, বেগম জিয়া জেলে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে তার দলের মহাসচিব জোর গলায় বলে যাচ্ছেন। খালেদা জিয়া যে ধরনের অসুস্থ, তার জন্য সে ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জেলে আছেন বলে তার প্রতি সরকার কখনোই অমানবিক আচরণ করবে না। তার অসুস্থতা কেমন, তার ওপর নির্ভর করেই চিকিৎসা করানো হবে।

অন্যদিকে কারান্তরীণ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল শুক্রবার দুপুরে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তিনি বলেন, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। সেখানে বিএনপি মহাসচিব অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলেন, কারাগারে অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে এবং কারামুক্তির পর দেশনেত্রী দেশে নাকি বিদেশে চিকিৎসা করাবেন- সে বিষয়ে তিনি নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন।’

রিজভী বলেন, ইতোমধ্যে কিছু কিছু অনলাইনে মহাসচিবের এ বক্তব্যকে বিকৃত করে প্রচার করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে যে বিষয়টি পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, সেটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মনগড়া বক্তব্য হিসেবে প্রচার করা সৎ সাংবাদিকতাসুলভ নয়। এতে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট অনলাইনগুলোকে সঠিক বক্তব্যটি প্রচারের জন্যও আহ্বান জানান তিনি।