দেশের স্বার্থে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রয়োজন
রাজধানীতে এক সেমিনারে বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, দেশের স্বার্থে একাদশ সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু হতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা দেখা যাচ্ছে না। এক দল নির্বাচনের প্রচার শুরু করেছে, আর অন্য দল বন্দী।
আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সেমিনারে বিশিষ্টজনেরা এসব কথা বলেছেন। বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে ওই সেমিনারের আয়োজন করে ঢাকা ফোরাম।
সেমিনারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, এখন যে প্রস্তুতি ও পরিবেশ, তাতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। সংসদ ভেঙে নির্বাচন দেওয়া ও নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয় আমলে নেওয়া হচ্ছে না। একদল নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিয়েছে, আরেক দল বন্দী। কিন্তু এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন (ইসি) অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ইসির কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করা। এ জন্য যা যা দরকার, তা তাদের করতে হবে। প্রয়োজনে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হবে।
ভারতীয় সেনাপ্রধানের বক্তব্যের বিষয়ে হাফিজউদ্দিন বলেন, এখন পর্যন্ত তাঁর বক্তব্যের কোনো প্রতিবাদ হয়নি, এটা দুঃখজনক। কেউ কেউ প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশ কী ভারতের স্বায়ত্তশাসিত অংশ হয়ে যাবে নাকি।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সুষ্ঠু গণতন্ত্র আনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা ভারত। ২০১৪ সালেও তা দেখা গেছে।
দেশের দলগুলোর অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চর্চা না হলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে না, উল্লেখ করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী সুশীল সমাজকে গাধা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য তিনি সমর্থন করেন। কারণ, সুশীল সমাজের পদলেহনের যে মনোবৃত্তি, তাতে এটাই তাদের প্রাপ্য সম্মান।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দীন আহমেদ বলেন, হাল ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না। তিনি আশা করেন, একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে। দেশ যে অবস্থায় এসেছে, অর্জনগুলো দৃঢ় করতে হলে গণতন্ত্র ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। আলাপ আলোচনার সুযোগ না থাকলে গণতন্ত্র ও সুশাসন থাকবে না।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মঈনুল হোসেন বলেন, প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে। দেশে গণতন্ত্র ও নির্বাচন না থাকলে চাটুকারদের বিজয় হয়। বর্তমান অবস্থায় সুশীল সমাজের কিছু করার সুযোগ আছে বলে তিনি মনে করেন না। কারণ সবাই ভয়ভীতি আতঙ্কের মধ্যে আছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এ মুহূর্ত পর্যন্ত ইসির কাছে মানুষের কোনো প্রত্যাশা নেই। প্রধানমন্ত্রী সরকারি সুবিধা ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। আর বিরোধীরা ঘরেও অনুষ্ঠান করতে পারছে না। ইসি বলছে, তারা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করবে। কিন্তু তার কোনো আলামত নেই। ইসির ভূমিকা কী, এমন প্রশ্ন রেখে আমীর খসরু বলেন, ভবিষ্যতে ইসি কোনো পদক্ষেপ নেবে, তা বিশ্বাস করারও কোনো কারণ নেই।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, গণতন্ত্র ও নির্বাচন ফলপ্রসূ করতে রাজনৈতিক দলগুলোর যে ভূমিকা রাখা প্রয়োজন, তা তারা রাখছে না। ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনও হয়েছিল সংবিধানের কথা বলে। কোনো দল নিজেদের দলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেনি। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তারা ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে চায়।
অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্রের দুর্বলতার বড় কারণ নাগরিক সমাজের দুর্বলতা। জনগণ বুঝতে পারে নির্বাচন প্রহসন হবে। জনমত সংগঠিত করার দায়িত্ব নাগরিক সমাজের। তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করা যাবে। যারা দলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারে না, তারা কীভাবে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে। তিনি রাজনৈতিক দলের ছায়ার বাইরে নাগরিক সমাজের একটি নিরপেক্ষ ‘প্ল্যাটফর্ম’ গঠন করার পরামর্শ দেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন সাবেক কূটনীতিক সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আশা অনেকটা নিভে গেছে। ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন হবে না, তা বিশ্বাস করার মতো উপাদান কমই আছে। কোনো দলের জন্য নয়, দেশের স্বার্থে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন জরুরি। না হলে দেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন