দেশে এতিম প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র মাত্র ৬টি

সরকারি ভাষ্য মতে, দেশে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ১৫ লাখ ৫৮ হাজার ৫৪৩ জন। কিন্তু এদের নিয়ে কাজ করা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মতে, দেশে প্রায় দেড় কোটি প্রতিবন্ধী রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে বিশ্বের মোট জনগোষ্ঠীর শতকরা ১৫ শতাংশ কোনো না কোনোভাবে প্রতিবন্ধী।

এতিমদের নিয়ে সরকারি পরিসংখ্যান বিশেষ করে বাৎসরিক অর্থনৈতিক সমীক্ষা রিপোর্ট নেই। সরকারের দাবি, এতিমদের সংখ্যা সাড়ে চার লাখ থেকে চার লাখ ৮০ হাজার।

তবে বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী এই সংখ্যা ১৫ লক্ষাধিক। কিন্তু এসব এতিম ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারি মাত্র ৬টি কারিগরি প্রক্ষিক্ষণ কেন্দ্র আছে। আর সেই কেন্দ্রে মাত্র ১৭৯ জন প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। জনবল রয়েছে অর্ধেকেরও কম।

অথচ রাষ্ট্রীয়ভাবে এদের প্রশিক্ষণে ও পুনবার্সনের এই বেহাল চিত্রের তথ্য পেলেও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। তবে এর সুফল মিলছে না।

রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৩৩তম বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, ৬টি কারিগরি প্রশিক্ষণের জন্য অনুমোদিত পদ ৯০টি হলেও কাজ করছেন মাত্র ৪০ জন। এসব কেন্দ্র বগুড়ার শিবগঞ্জ, সাতক্ষীরার আশাশুনি, পটুয়াখালীর সদর, মৌলভীবাজার সদর, মাদারীপুরের শিবচর ও কুমিল্লার দাউদকান্দিতে অবস্থিত।

জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের অধীনে দেশে ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র চালু আছে। আরও ৪০টি চালুর প্রক্রিয়া চলছে। আর এতিম শিশুদের সরকারিভাবে তাদের দেখভাল না করে তিন হাজার ৮১৭টি প্রতিষ্ঠানকে টাকা দিচ্ছে মন্ত্রণালয়।

এ জন্য ২০১৭-২০১৮ সালের অর্থবছরে ৮৪ হাজার ৬১৫ জন শিশুর ৫০ কোটি ৭৬ লাখ ৯০ হাজার টাকার প্রথম কিস্তি বাবদ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আর এসব বরাদ্দ ও তার সঠিক ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কমিটির সদস্য এমপি বেগম লুৎফা তাহের।

তিনি বলেন, কমিটি সরকারের পক্ষ থেকে এসব এতিম প্রতিবন্ধীদের জন্য বেশি করে প্রশিক্ষণ ও পুনবার্সন কেন্দ্র স্থাপনের কথা বলেছে সংসদীয় কমিটি। বৈঠকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা এবং রাজশাহী বিভাগে একটি করে ‘প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সুপারিশ করে কমিটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, প্রতিবন্ধীর তুলনায় সরকারি প্রশিক্ষণ কম হলেও বেসরকারিভাবে তাদের নানাভাবে সুবিধা দেয়া হয়। আগামীতে প্রশিক্ষণ ও পুনবার্সন সংখ্যা বাড়ানো হবে।

সংবিধানের মৌলিক অধিকার অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সেখানে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা অপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির মতো সমান অধিকার ভোগ করবে। এখানে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন দ্বারা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার স্বীকৃত রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মৃত্তিকা প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহবুব ভুইয়া বলেন, সরকারি এসব প্রতিষ্ঠান ভোকেশনাল। চলছে নামে মাত্র। নেই লোকবল। আর প্রতিবন্ধীরা জানেনই না তাদের জন্য এই ধরনের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা আছে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো এখানে যারা আছেন তারা প্রতিবন্ধী বান্ধব না। সংখ্যা বাড়ানো ছাড়াও এ ব্যাপারে সরকারি উদ্যোগ নেয়া দরকার। বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্র নিজেরাই এসব করে।

বৈঠক সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালে প্রকল্পে নিয়োগকৃত কর্মকর্তা যাদের ২০০২ সালে আত্তীকরণ করা হয়েছে এবং ২০০৬ সালে নিয়োগকৃত কর্মকর্তাদের মধ্যে ন্যায় বিচারের ভিত্তিতে পদোন্নতি দেয়ার সুপারিশ করে কমিটি। এছাড়া প্রতিটি বিভাগে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা আলাদাভাবে একটি করে সেফ হোম করার সুপারিশ করে।

কমিটির সভাপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন এমপির সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন মনোরঞ্জন শীল গোপাল এমপি, বেগম আয়েশা ফেরদাউস এমপি, শেখ হাফিজুর রহমান এমপি ও মো. আব্দুল মতিন এমপি। এছাড়াও বৈঠকে বিশেষ আমন্ত্রণে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ অংশ নেন।

বৈঠকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজকল্যাণ অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।