দেড় বছরের মধ্যেই বিশ্বমানের শেয়ারবাজার পাচ্ছে বাংলাদেশ
চীনের সেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম যুক্ত হওয়ার পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে শতভাগ প্রফেশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ হিসেবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন ২০১৯ সালের জুনের পর সম্পূর্ণ বদলে যাবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। আর আগামী দেড় বছরের মধ্যে বিশ্বমানের শেয়ারবাজার পাবে বাংলাদেশ। এ জন্য দুই ধরনের (দীর্ঘ ও স্বল্প মেয়াদি) উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে, শেয়ারবাজারকে আধুনিক করে গড়ে তুলতে অল্প দিনের মধ্যে চীনের দুই প্রতিষ্ঠান ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া শুরু করবে। এ ছাড়া ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণও দেবে তারা।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক মো. রকিবুর রহমান বলেন, ‘চীনের সেনজেন ও সাংহাই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণে আগামী দেড় বছরের মধ্যে আমরা বিশ্বমানের শেয়ারবাজার পাবো, আর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ হবে আন্তর্জাতিক মানের।’ ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বদলে যাবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘চীনের সেনজেন ও সাংহাই থেকে আমরা যে প্রযুক্তিগত শিক্ষা পাবো তা দিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে শতভাগ প্রফেশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদী ও স্বল্প মেয়াদী দুই ধরনের উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে।
রকিবুর রহমান বলেন, চীনের সেনজেন ও সাংহাই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণে চীনের ভালো ভালো কোম্পানিগুলো আমাদের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারবে। এতে বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগও বাড়বে। আর চীনের কোম্পানিগুলো যদি আমাদের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়, তাহলে অন্যদেশের কোম্পানিও বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে আসবে। এতে আমাদের শেয়ারবাজার শুধু শক্তিশালীই হবে না, আমরা বিশ্বের প্রধান প্রধান শেয়ারবাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা পাবো। বাংলাদেশের অর্থনীতিও শক্তিশালী হবে।
জানা গেছে, শিগগিরই বিনিয়োগকারীদের সেবা স্বয়ংক্রিয় ফ্রেমওয়ার্কে আনার উদ্যোগ নেবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। লেনদেনে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, পণ্যের উন্নয়ন ও বাজারের বিভিন্ন বিষয়ের উন্নয়নকে গুরুত্ব দিতে ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের প্রযুক্তিগত সহায়তা (টেকনিক্যাল সাপোর্ট) দেবে চীনা কনসোর্টিয়াম। দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসাবে তারা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মানবসম্পদ উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের বাজারে একটি এসএমই বা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের বাজার তৈরিতেও ভূমিকা রাখবে চীনা কনসোর্টিয়াম।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বলেন, সেনজেন ও সাংহাই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে বিশ্বমানের স্টক এক্সচেঞ্জে পরিণত করতে চায়। তাদের প্রযুক্তিগত ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সহায়তায় অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ একটি প্রফেশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ হিসাবে পরিচালিত হবে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘সামনের দিনগুলোতে অনেক পরিবর্তন আসবে। স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে বাজার। বাংলাদেশ ব্যাংকের দিকে তখন চেয়ে থাকতে হবে না। দেড় বছরের মধ্যে চোখে পড়ার মতো অনেক কিছু দেখা যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মার্কেটকে শক্তিশালী করতে বন্ড মার্কেট চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া এসএমই বোর্ড বা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ৫ কোটি টাকার কোম্পানিগুলো এসএমই বোর্ডে তালিকাভুক্ত হবে। এছাড়া ২০২০ সালের শুরুতে রিস্ক বেইজড ক্যাপিটাল অ্যাডিকোয়েন্সি আসবে। এটি তুন দিগন্ত উম্মোচন করবে।’
ডিমিউচুয়ালাইজেশনের শর্ত বাস্তবায়নে ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার চীনা কনসোর্টিয়ামের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে শেয়ার হস্তান্তর করেছে ডিএসই। শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের আইটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল জি ওয়েনহাইকে ডিএসই পরিচালনা পর্ষদের সদস্যও করা হয়েছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রায় ৯৬২ কোটি টাকা ডিএসইর ব্যাংক হিসাবে জমা দিয়েছে চীনা কনসোর্টিয়াম। এর মধ্যে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হওয়ার কথা রয়েছে।
চীনের সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ায় দেশের শেয়ারবাজারে তিন ধরনের উপকার বা সুবিধা হবে বলে মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।
বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন,‘চীনা কনসোর্টিয়াম ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ায় প্রথমত, শেয়ারবাজারে কারসাজি কমবে। তারা বাংলাদেশে শেয়ারবাজারে গর্ভনেন্সের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে। ফলে এই বাজার তারা স্বচ্ছ রাখার চেষ্টা করবে। তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে বাজার ম্যানুপুলেশন বন্ধ করা যাবে। দ্বিতীয়ত তারা যেহেতু বিদেশি প্রতিষ্ঠান, সেহেতু তাদের দেখে এই বাজারে আরও বিদেশি প্রতিষ্ঠান আকৃষ্ট হবে। বিদেশিদের আস্থা বাড়বে। বাড়বে বিদেশি বিনিয়োগ। পাশাপাশি বিদেশি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগও সৃষ্টি হবে। তৃতীয়ত দেশের শেয়ারবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্তরা আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ পাবে। ফলে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার আর্ন্তজাতিক মানের শেয়ারবাজারে রূপ নেবে।’
পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদও মনে করেন শিগগিরই বাংলাদেশের শেয়ারবাজার আর্ন্তজাতিক মানের শেয়ারবাজারে রূপ নেবে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বাজারে চীনা প্রতিষ্ঠান প্রবেশের কারণে স্টক মার্কেটের করপোরেট গভর্নেন্স উন্নত হবে। কারণ তারা (চীনা প্রতিষ্ঠান) যেহেতু গ্লোবাল স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে জড়িত সে জন্য তারা ভালোভাবে জানে স্টক ডেভেলপমেন্টে কী ধরনের কন্ট্রিবিউশন রাখা যায়।’ সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন