দেয়াল ও ছাদহীন এক কক্ষের হোটেল
শূন্য তারকাবিশিষ্ট (নাল স্টার্ন) এক হোটেল আছে সুইজারল্যান্ডে। হোটেলটি একেবারে খোলা আকাশের নিচে। এক কক্ষের এ হোটেলে না আছে ছাদ, না আছে দেয়াল। তারপরও সেখানে থাকার মানুষের অভাব নেই। সুইজারল্যান্ডের গনটেন গ্রামের কাছে গোবসি পাহাড়ের চূড়ায় এটির অবস্থান।
১ হাজার ২০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত একটি পরমাণু বাঙ্কারকে হোটেলে পরিণত করার পরিকল্পনা করেন যমজ দুই ভাই ফ্রাংক ও পাট্রিক রিকলিন।
ফ্রাংক রিকলিন বলেন, ‘শূন্য তারকা হোটেলের অন্যতম আকর্ষণ হল, অনেক অতিথি বুঝতে পারেন না, এটি আসলে কী। এটি কি একটি শিল্পকর্ম, নাকি পর্যটনের জন্য উদ্ভাবন? তাদের একটু অনিশ্চয়তায় ফেলে দেয়ার বিষয়টি দারুণ।’
কোনো ওয়ালপেপার নেই, আশপাশের দারুণ পাহাড়ি দৃশ্যের টানে সারা বিশ্ব থেকে মানুষ সেখানে যান। পাট্রিক রিকলিন বলেন, ‘আমরা হোটেলের বিছানার নকশা করেছি এবং শুরু থেকে সবসময় এ হোটেলে অতিথিরা থাকছেন।’
ফ্রাংক রিকলিনের মতে, ‘এটি আসলে বিলাসিতা উপভোগের অন্য ধরনের বিশেষ এক উপায়।’
রিসেপশনিস্ট কাম হোটেল বয় হলেন ক্যোবি ডিটরিশ। কৃষিকাজের পাশাপাশি তিনি এ কাজ করেন। ডিটরিশ বলেন, ‘প্রথমে আমি বুঝতে পারিনি আমার জন্য এমন অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছে। আমি এ হোটেলের অংশ হতে পেরে আনন্দিত।’
সারা দিন গরু চরানোর পর সন্ধ্যায় তিনি এ কাজ করেন। ডিটরিশ সম্পর্কে পাট্রিক রিকলিন বলেন, ‘ভাবনা ছিল, কিভাবে এই আর্টকে জীবন্ত করে তোলা যায়। যারা এর চারপাশে থাকছেন, তারাও এর অংশ হয়ে যান। ডিটরিশকে ছাড়া এই শিল্পকর্ম একেবারে গতানুগতিক হয়ে যেত। শিল্পী হিসেবে মূল্যায়ন করলে এটি আমার কাছে একটি পেন্টিংয়ের মতো, তবে জীবন্ত।’
এ হোটেলের পাশের এলাকায় একসময় স্ত্রী, সন্তান ও গরুদের নিয়ে একাকী জীবন যাপন করতেন ডিটরিশ।
এ হোটেলের একমাত্র তারকা হলেন অতিথিরা। এটিই শূন্য তারকা হোটেলের দর্শন। প্রতি রাতের জন্য অতিথিদের এখানে গুনতে হয় ২০০ সুইস ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৬ হাজার টাকা। হোটেলের এক অতিথি আন্দ্রেয়া তাসির্তো বলেন, ‘প্রথমে স্বপ্ন মনে হয়েছিল। তারপর সকালে উঠে মনে হল, না, ওটা কোনো স্বপ্ন ছিল না।’
আরেক অতিথি রাফায়েল টামান বলেন, ‘দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমি আসলে খুবই ভালো ঘুমিয়েছি। বিছানাটা বেশ আরামদায়ক ছিল। একটু মশা ছিল, তবে সমস্যা হয়নি।’
অনেক কোম্পানি দুই শিল্পীকে তাদের অভিনব ধারণা নিয়ে ব্যবসা করার প্রস্তাব দিয়েছিল। এর মধ্যে একটির মূল্য ছিল কয়েক মিলিয়ন ইউরো। কিন্তু তারা রাজি হননি। কারণ হোটেলের ভবিষ্যতের বিষয়টি তারা নিজেদের হাতেই রাখতে চান। ২০১০ সালে ইউরোপের ১০০ হোটেলের মধ্যে শীর্ষস্থান অর্জন করে শূন্য তারকার এ হোটেলটি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন