দোকানের ছুরি দিয়েই দোকানদারকে খুন করল ছিনতাইকারী
দুই ভাই মো. নুরনবী (২৩) ও শাহপরান (২১)। জীবিকার তাড়নায় প্রতিদিনের মতো আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর শাহবাগে ফুটওভার ব্রিজের উপর দোকান খুলে বসেছিলেন। এই দোকানে সাধারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনী জিনিসপত্র বিক্রি করতেন তারা। এ জন্য দরকারি জিনিস হিসেবে রাখা ছিল কয়েকটি ছুরিও। অার এ ছুরি দিয়েই ছিনতাইকারী খুন করলো বড় ভাই নুরনবীকে।
তিন ভাই তিন বোনের মধ্যে নুরনবী ছিলেন সবার বড়। পরিবারে মা-বাবাসহ ৮ সদস্যের মুখে দুবেলা দুমুঠো ভাত তুলে দেয়ার ভরসা ছিলেন নিহত নুরনবী। যে বয়সে স্কুল-কলেজে পড়ালেখা করে বড় হওয়ার স্বপ্নে বিভোর থাকার কথা ছিল নুরনবীর, সে বয়সে পরিবারের ভাই-বোনদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে হয়েছিল তাকে।
৪ বছর অাগে জীবিকার তাড়নায় এপাড় থেকে ওপাড়, এ ফুটপাত থেকে ওই ফুটপাতে হকারের কাজ করে সর্বশেষ ঠাঁয় নিয়েছিল শাহবাগের ফুটওভার ব্রিজে। বছরখানেক অাগে তার উপার্জনে সাহায্যে করতে যোগ দেন ছোট ভাই শাহপরান। তাদের দুই ভাইয়ের উপার্জিত অায়ে ভালোই চলছিল গ্রামে থাকা মা-বাবা ও ভাই বোনদের জীবন। কিন্তু অাজ সকালেই যেনো সবকিছু ওলট-পালট হয়ে গেছে ছিনতাইকারীর ছুরির অাঘাতে।
নিহতের ছোট ভাই শাহপরান বলেন, সকাল সাড়ে ৬টায় বাসা থেকে বের হয়ে সাড়ে ৭টার দিকে দোকান খুলছিলাম অামরা দুই ভাই। তখনও কোনো কাস্টমার অাসেনি। তাই অামার বড় ভাই মালপত্র রাখার বাক্সের মধ্যে স্কসটেপ লাগাচ্ছিল। এ সময় হেরোইনসির মতো দেখতে ছেঁড়া গেঞ্জি পরা একজন লোক এসে অামাদের দোকানে বিক্রির জন্য বিছিয়ে রাখা ছুরি নিয়ে নাড়াচাড়া করছিল। কিন্তু কোনোকিছু বলছিল না। হাতে ছুরি নিয়ে নাড়াচাড়া করতে দেখে অামার ভাই ভয় পেয়ে যায়। এ জন্য অামার ভাই জিজ্ঞেস করল ছুরি কিনবেন কি না। এটা বলা মাত্রই লোকটা অামার ভাইয়ের গলার মাঝখানে ছুরি দিয়ে টান মেরে দৌড় দিয়ে চলে যায়।
তিনি জানান, এমন দৃশ্য নিজ চোখে দেখে নির্বাক হয়ে যান তিনি। চিৎকার দিতে গিয়েও যেন গলা ধরে অাসছিল তার। এমন ঘটনায় ভাইকে ধরবেন নাকি ছিনতাইকারীকে ধরবেন সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না তিনি। পরে পাশে থাকা অন্য দোকানদারদের চিৎকারে জনতার সহযোগিতায় ছিনতাইকারীকে অাটক করে পুলিশ।
কথাগুলো বলার সময় শাহপরানের চোখ ছলছল করছিল। একমাত্র ভরসা ভাইকে হারিয়ে এখন ছন্নছাড়া হয়ে গেছেন। বারবার বলছিলেন, অামি এখন কি করমু। কেমনে থাকমু এ শহরে। বাড়িতে টাকা পাঠামু কী করে। অামার ভাইবোন চলবো কী করে। অাল্লাহ এটা কী হলো অামাদের জীবনে। এসব বলতে বলতেই বাড়িতে বাবা মায়ের খোঁজ নিচ্ছিলেন তিনি। তার বাবা মা লঞ্চযোগে ঢাকায় অাসছেন ছেলের মরদেহ নিতে।
ওই ছিনতাইকারীর নাম খায়রুল অানাম (৪৫)। বাবার নাম সানারুল অানাম। গ্রামের বাড়ি রংপুর সদরে। তিনি পুলিশ হেফাজতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন।
হকার নুরনবীকে খুন করে পালিয়ে যাওয়ার সময় জনতার সহযোগিতায় ছিনতাইকারী খায়রুলকে অাটক করে রমনা জোনের ট্রাফিক সার্জেন্ট এসএম সিহাব মামুন।
তিনি বলেন, জনতার চিৎকার শুনে দৌড়ে গিয়ে সকাল ৯টার দিকে খায়রুলকে অাটক করি অামি। পরে রমনা পুলিশ হেফাজতে ঢামেকে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয় তাকে। তবে ছুরিকাঘাতে হকার নুরনবী ঘটনাস্থলেই মারা যান। তার মরদেহ ঢামেক হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে রমনা থানা পুলিশ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন