দ্বিতীয় মেয়াদেও আ’লীগের পছন্দ আবদুল হামিদ
রাষ্ট্রপতি পদে দ্বিতীয় মেয়াদে আবদুল হামিদকেই পছন্দ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। বিশ্বস্তের জায়গা থেকে বিকল্প কাউকে ভাবছে না দলটি। বিষয়টি চূড়ান্ত বলেই মতপ্রকাশ করেছেন দলটির একাধিক নীতিনির্ধারক। ফলে স্থানীয় সরকার, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করলেও রাষ্ট্রপতি পদের জন্য এটা করবে না আওয়ামী লীগ। রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. আবদুল হামিদের পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে আগামী ২৩ এপ্রিল।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আগামীকাল বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর আগে ওইদিন কমিশন সভায় বসবেন নির্বাচন কমিশনাররা। এদিকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা। আজ বিকাল ৩টায় সংসদ সচিবালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল নিয়ে মূলত বৈঠকে আলোচনা হবে।
সোমবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি পদে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ মঙ্গলবার বলেন, সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডে প্রার্থী চূড়ান্ত করে সংসদে উত্থাপন করা হবে। সংসদ ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবেন। তবে দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রার্থীদের কাছে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হবে না। আওয়ামী লীগের জাতীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছরের শেষের দিকে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতিটি নির্বাচনের আগে প্রতিপক্ষ পানি ঘোলা করার চেষ্টা করে। সে সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয় রাষ্ট্রপতিকে। তাই নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রপতি নিয়ে বড় কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না আওয়ামী লীগ। তারা মনে করেন, বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ পরীক্ষিত। অনেক জাতীয় বিষয়ে তিনি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। রাজনৈতিক ও জাতীয়ভাবে তার একটি আলাদা গ্রহণযোগ্যতা আছে। সব মতের নেতাদের কাছে প্রিয় ব্যক্তিও তিনি। গত পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনকালে তার কোনো কালিমা নেই। এমন বিশ্বস্ত রাষ্ট্রপতিকে বাদ দিয়ে নতুন কাউকে আনার কোনো যুক্তি দেখছে না আওয়ামী লীগ। তাছাড়া সংবিধানের ৫০(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একজন রাষ্ট্রপতি পরপর দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। এ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘একাদিক্রমে হউক বা না হউক- দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতির পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকিবেন না।’
সেহেতু আইনি ক্ষেত্রেও আবদুল হাদিমকে দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি পদে রাখার পক্ষে আওয়ামী লীগের সমর্থনের মাত্রা জুগিয়েছে। সোমবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দুই নেতা দেখা করেছেন। তারা দুপুরে গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা মঙ্গলবার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমান সরকারে অনেক বিতর্কিত মন্ত্রী আছেন, যারা বিভিন্ন সময়ে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন। সংসদে একাধিক এমপি আছেন যারা বিতর্কিত। এতকিছুর পরও তারা বহাল আছেন। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে পারে তাই তাদের পদত্যাগ করানো হয়নি। সেখানে আবদুল হামিদের মতো জনপ্রিয় ও সমাদৃত ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে নতুন কাউকে এই পদে আনবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা- এটা মনে করি না।
রাষ্ট্রপতির চলতি মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিধান আছে সংবিধানে। সে অনুযায়ী দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে ২৪ জানুয়ারি (আজ) থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে, রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ অবসানের কারণে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে। আইনজ্ঞদের মতে, প্রথম ৩০ দিনকে বোঝাবে। নির্বাচন কমিশনও তা-ই মনে করে।
এ বিষয়ে সোমবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনটি ১৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।
রাষ্ট্রপতি সরাসরি ভোটে নয়, সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। তফসিল ঘোষণাসহ এই নির্বাচন পরিচালনা করে নির্বাচন কমিশন। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আগামী ২৩ এপ্রিল তার ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ হবে। আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং স্পিকার হিসেবে দু’বার দায়িত্ব পালন করেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন