ধর্ষককে ছিনিয়ে নিলো ইউপি সদস্য, সালিসে ধর্ষিতাকেই বেত্রাঘাত, অর্থদণ্ড
পীরগঞ্জে জুয়েল রানা (২২) নামের এক যুবক ও এক আদিবাসী কিশোরীকে হাতেনাতে আপত্তিকর অবস্থায় ধরে তাদের গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে আদিবাসী পল্লীর লোকজন। এ ঘটনা জুয়েল রানার পরিবার জানতে পারলে ইউপি সদস্যসহ তার লোকজন আদিবাসীদের নানা ভয়-ভীতি দেখিয়ে পরবর্তীতে বিচারের আশ্বাস দিয়ে ওই ধর্ষককে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার চৈত্রকোল ইউনিয়নের চককৃষ্ণপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
পরে ধর্ষকের লোকজনের ইশারায় কথিত আদিবাসী নেতাকে ম্যানেজ করে শুক্রবার দিনগত গভীর রাতে আদিবাসী পল্লীতে গ্রাম্য সালিস বাসায়। এতে অসহায় ধর্ষিতা কিশোরীকেই দোষী সাব্যস্ত করে প্রকাশ্যে ১০ বেত্রাঘাত ও তার পরিবারকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ অমানবিক ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চৈত্রকোল ইউনিয়নের হাজিপুর গ্রামের খট্টা মিয়ার পুত্র জুয়েল রানা (২২) রাইদা এন্ড রাবেয়া এগ্রো কমপ্লেক্স লিঃ (পোল্ট্রি, ফিসারিজ এন্ড গরু খামার) এর একজন শ্রমিক। শুক্রবার দুপুরে ওই কিশোরী (১৬) তার ৬/৭ বছরের ভাগ্নিকে নিয়ে বাড়ি সংলগ্ন প্রজেক্টের পাশে গরুর ঘাস কাটতে যায়। এ সময় ওঁতপেতে থাকা জুয়েল রানা সাথে থাকা শিশুটিকে এক যায়গায় বসিয়ে রেখে কিশোরীকে ফুসলিয়ে নির্জন খাস বাগানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করতে থাকে।
এ ঘটনা ৫তলা বিশিষ্ট পোল্ট্রি ফার্মে কর্মরত আদিবাসী যুবক উপর থেকে দেখতে পেয়ে গ্রামের বিভিন্ন ব্যক্তিকে মোবাইল ফোনে জানায় এবং মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে। এদিকে খবর পেয়ে গ্রামবাসী দ্রæত ওই ঘাস বাগান ঘিরে দু’জনকে আপত্তিকর অবস্থায় ধরে ফেলে এবং তাদের গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। এ সময় ক্ষিপ্ত লোকজন তাদের উত্তম মধ্যম দিলে তারা স্বীকার করে যে, পর্ব পরিচয়ের ভিত্তিতে ইতি পূর্বেও তাদের একাধিকবার দেহ মিলনের ঘটনা ঘটেছে।
এ ব্যাপারে শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) চককৃষ্টপুর গ্রামের হুড়া হাঁসদা ওরফে চৌধুরী, মঙ্গল হেমরন, রিমি হাঁসদা, মরহিল মর্মু’র সঙ্গে কথা হলে জানান, এই ওয়ার্ডের মেম্বার আকতার হোসেন ও তার লোকজন আমাদের নানা ভয়-ভীতি দেখিয়ে বিচারের আশ্বাস দিয়ে ধর্ষক জুয়েলকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে ইউপি সদস্য আকতার হোসেন ধর্ষককে ছিনিয়ে আনার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কারো কোন অভিযোগ না থাকায় তাকে (ধর্ষক জুয়েল) বাড়িতে নিয়ে এসেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আদিবাসী নারি-পুরুষ অভিযোগ করে বলেন, চককৃষ্টপুর গ্রামের কথিত আদিবাসী নেতা মিস্ত্রি হেমরন মোটা অংকের বিনিময়ে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহের জন্য বিশেষ করে ওই ধর্ষককে বাঁচাতে কৌশলে গ্রাম্য সালিসের আয়োজন করে এবং রায় কার্যকর করে।
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান সবুজের সঙ্গে কথা হলে বলেন, বিষয়টি আমার অজানা, ইউপি সদ্যস্য কিছুই জানায়নি। এ বিষয়ে ভেন্ডাবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত) তোজাম্মল হোসেন জানান, নারী ঘটিত একটা বিষয় জেনেছিলাম। কিন্তু কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন