নওগাঁয় বিএনপি নেতার প্রভাব খাটিয়ে ১৭ একর সম্পত্তি দখলের অভিযোগ

নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলায় বিএনপি নেতার প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক একটি পরিবারের ১৭ দশমিক ৫৩ একর সম্পত্তি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ‘ভূমি দস্যুরা’ নিজেদের বিএনপি কর্মী দাবি করে ওই পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশসহ তাঁদের মালিকানাধীন অন্যান্য সম্পদ দখলের হুমকি দিচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) দুপুরে নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভুক্তভোগী মো. মামুন। এ সময় তাঁর ছোট বোন সুরাইয়া নাজনীন সুলতানা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে মো. মামুন অভিযোগ করে বলেন, তাঁর দাদা হাজী মফি উদ্দিন একমাত্র ছেলে ময়েন উদ্দিনকে মোতোয়াল্লি করে প্রায় ৮০০ বিঘা সম্পত্তি ওয়াকফ আওলাদ হিসেবে লিখে দিয়ে যান। ময়েন উদ্দিনের মৃত্যুর তাঁর তিন ছেলে ইমরান, এনামুল ও মামুন এবং এক মেয়ে সুরাইয়া নাজনীন সুলতানা ওয়াকফ সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করে আসতেছেন।

মামুন ও তাঁর অন্য ভাই-বোনেরা দীর্ঘদিন যাবৎ রজাশাহীতে বসবাস করে আসতেছেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তাঁদের বসতবাড়ি, পুকুর, আবাদি জমি দখল করবে বলে রসুলপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সুজা উদ্দিন ও রসুলপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি পলাশ বিভিন্ন সময় আস্ফালন করতে থাকে।

বিএনপির ওই দুই নেতার প্রভাব খাটিয়ে ডাহুকা গ্রামের বাবুল দেওয়ান ও জিএম দেওয়ান তাঁদের মাটির একটি দোতলা বাড়ি জোর করে দখল করে বসবাস করতে শুরু করে। ওই সম্পত্তি ওয়াকফ এস্টেটভুক্ত। ঢাকায় ওয়াকফ এস্টেটের প্রশাসকের কাছে বাড়ি দখল উচ্ছেদের অভিযোগ করলে নওগাঁকে জেলা প্রশাসককে দখল উচ্ছেদের নির্দেশ দেন।

এই নির্দেশনা অনুযায়ী গত ১৫ মে নিয়ামতপুর উপজেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) দখল উচ্ছেদ করে তাঁদেরকে দখল বুঝে দেন। এ ঘটনার পর গত ১৬ মে বিএনপি নেতা সুজা ও পলাশ দলীয় লোকজন নিয়ে ডাহুকা গ্রামে গিয়ে মামুন, তাঁর ভাই এনামুল ও ইমরানকে প্রাণনাশের হুমকি দেন।

বিএনপি নেতা সুজা গ্রামবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘ময়েন উদ্দিনের ছেলে ইমরান, এনামুল ও মামুন রাজশাহী থেকে জমি দেখার জন্য গ্রামে আসলে তাঁদেরকে ঘর থেকে টেনে বের করে আমাদের হাতে দেবেন আমরা তাঁদের বিচার করব। কারণ এরা খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের লোক।’ এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

এ ঘটনার পর মামুন বাদী হয়ে বিএনপি নেতা সুজা ও পলাশসহ অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিয়ামতপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

লিখিত বক্তব্যে মামুন আরও বলেন, ‘আমাকে ও আমার ভাইদের আওয়ামী লীগ সমর্থক এবং সাধন চন্দ্র মজুমদারের লোক আখ্যা দিয়ে অন্যায়ভাবে আমাদের জমি দখল করা হচ্ছে। অথচ আমরা কোনো দিনই কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম না। আমাদের একটি প্রতিপক্ষ আমার দাদার করে যাওয়া ওয়াকফ এস্টেটের ১৭ দশমিক ৫৩ একর জমির জাল দলিল তৈরি করে দখলের অপচেষ্টা করে আসছিল।

এ ঘটনায় আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। ৫ আগস্টের পর বিএনপি নেতার প্রভাব খাটিয়ে বিবদমান ১৭ দশমিক ৫৩ একর জমি দখল করে নিয়েছে ওই পক্ষটি। ভূমি দস্যুরা নিজেদের বিএনপি কর্মী দাবি করে ওই পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশসহ তাঁদের মালিকানাধীন অন্যান্য সম্পদ দখলের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।

এ অবস্থায় ওয়াকফ এস্টেট সম্পত্তির বৈধ মোতোয়াল্লি হওয়া সত্ত্বেও আমরা আমাদের জমিতে যেতে পারছি না। এমন পরিস্থিতে প্রশাসন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট পক্ষের কাছে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রসুলপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সুজা উদ্দিন বলেন, ‘মামুনের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগ করে।

তাঁর বড় ভাই ইমরান সাবেক খাদ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন। তাঁরা জোর করে এলাকার অনেক মানুষের সম্পত্তি করেছে। এখনও তাঁরা অর্থের প্রভাব খাটিয়ে জাল-জালিয়াতি করে অন্য মানুষের জমি দখল করছে। সম্প্রতি প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে বাবুল দেওয়ান ও জিএম দেওয়ানের মাটির দোতলা বাড়ি ভেঙে দিয়েছে।

ডাহুকা গ্রামের সেলিম হোসেন নামের এক ব্যক্তির মামলার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের এই অভিযানের পর আদালত ডিসি, ইউএনও ও এসিল্যান্ডকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করেছে। ৭০-৮০ বছর ধরে পরিবার নিয়ে বসবাস করে একটি বাড়ি ভেঙে ফেলা নিয়ে এলাকার মানুষই ক্ষিপ্ত হয়েছেন।

এলাকার বিবেকবান মানুষ হিসেবে আমিও ওই গ্রামে গিয়েছিলাম এবং মামুন ও তাঁর ভাইদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। মানুষ যাতে ন্যায়বিচার পায় সেই লক্ষ্যে কথা বলেছি। জোর করে কাউকে জমি দখল করে দিই নাই।’

এ ব্যাপারে সেলিম হোসেন বলেন, ‘আমার নানা হাজী মফি উদ্দিনের প্রথম স্ত্রীর ছয় মেয়ে। আর দ্বিতীয় স্ত্রীর একমাত্র সন্তান হলেন মামুনের বাবা ময়েন উদ্দিন। মফি উদ্দিন তাঁর একটি দলিলে তাঁর ছয় মেয়ের নামে ৬৮৯ বিঘা এবং আরেকটি দলিলে ছেলে ময়েন উদ্দিনের নামে ৩৬৫ বিঘা জমি ওয়াকফ আওলাদ হিসেবে লিখে দিয়ে যান।

কিন্তু ময়েন উদ্দিন জাল জালিয়াতি করে দুই দলিলের সকল সম্পত্তির মোতোয়াল্লি সেজে ভোগ দখল করতে থাকেন। তাঁর ছেলে-মেয়েরাও একইভাবে দখল করে আছেন এবং অনেক সম্পত্তি বিক্রিও করে দিয়েছেন। জমির মালিকানা নিয়ে আদালতে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। যে ১৭ একর সম্পত্তি দখলের কথা বলা হচ্ছে এটা আমরা হাজী মফি উদ্দিনের বৈধ ওয়ারিশ হিসেবে দীর্ঘ দিন ধরে ভোগদখল করে আসছি।

আমরা কোনো জমি দখল করি নাই। বরং তাঁরাই অন্যায়ভাবে ৭০-৮০ বছর ধরে বসবাস করে আসা মানুষকে উচ্ছেদ করে একটি বাড়ি ভেঙে দিয়েছে। এটা অমানুবিক একটা ব্যাপার। তাও সেটা করা হয়েছে প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে।’