নওগাঁয় বিদেশ যাত্রার টাকা, স্বর্ণ লুট! জমি নিয়ে হামলার শিকার মা-মেয়ে, মামলা করায় হুমকি

‎নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার বৈকুণ্ঠপুর গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে নারীসহ অন্তত দু’জনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে এক প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, হামলা চালিয়ে গাছ কেটে, বাথরুমের টিন ভেঙে বসতঘরের মধ্যে ঢুকে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ অর্থ লুট করে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার।

এ ঘটনায় গত ১৩ জুলাই বদলগাছী থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী পরিবার। অভিযুক্তরা হলেন বদলগাছী উপজেলার বৈকুণ্ঠপুর গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের বড় ছেলে মো. গোলাপ (৩৮), ছোট ছেলে মো. সোহাগ (৩৬), সোহাগের ছেলে মো. শুভ, স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন এবং মো. গোলাপের স্ত্রী মোছা: রিনা বেগম।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, রসিদা বেগম (৬১) বদলগাছী থানায় দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করেন, গত ৯ জুলাই দুপুর দুইটার দিকে তার অনুপস্থিতিতে বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে পূর্ব শত্রুতার জেরে অভিযুক্তরা দলবদ্ধ হয়ে তার বাড়িতে হামলা চালায়। অভিযুক্তরা হলেন সোহাগ, গোলাপ, শুভ (২০), রিনা ও সাবিনা ইয়াসমিন।

তারা তার বাড়ির বাগানে থাকা পেয়ারা, বাদাম ও আম গাছসহ বিভিন্ন গাছ কেটে ফেলেন, যার ফলে প্রায় ৪১ হাজার টাকার ক্ষতি হয়। পরে তাকে ও তার মেয়ে শাবনাজ (৩৫) কে বেধড়ক মারধর করা হয়। বাঁশ ও লোহার রড দিয়ে আঘাত করে শরীরের বিভিন্ন অংশে ফোলা ও জখম করা হয়। হামলার সময় ঘরের আলমারি ভেঙে আট আনার একটি স্বর্ণের চেইন (মূল্য আনুমানিক ৮০,০০০ টাকা) ও বিদেশযাত্রার জন্য জমাকৃত নগদ ১,২০,০০০ টাকা লুট করে নিয়ে যায় অভিযুক্তরা।

বাধা দিলে রসিদা বেগমের মেয়ে শাবনাজের পোশাক ছিঁড়ে শ্লীলতাহানির ঘটায়। শাবনাজকে বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং রসিদা বেগম নিজেও স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ বিষয়ে রসিদা বেগম বলেন, “আমি বাড়িতে একাই থাকি। আমার ছেলে-মেয়ে সবাই ঢাকায় থাকে। আমি অসুস্থ, এজন্য দেখতে এসেছিল।

এর মধ্যে তারা আমাদের জমি তাদের বলে দাবি করে। কিন্তু আমি দলিল বের করতে বললে, এ নিয়ে কয়েক দফায় কথা কাটাকাটি হয় এবং সুযোগ বুঝে বাড়িতে যখন পুরুষ মানুষ ছিল না, তখন তারা দলবল নিয়ে হামলা চালিয়ে আমার বাড়ি, গাছ, মেয়ের বিদেশ যাওয়ার জন্য রাখা টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে গেছে। থানায় মামলা করেছি, কিন্তু তারা আমাদের প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে।

আমরা অসহায় পরিবার। এর আগেও তারা অনেকবার হামলা করেছে আমাদের উপর। আমি তাদের বিচার দাবি করছি।”রসিদা বেগমের মেয়ে শাবনাজ বলেন, “আমার মাকে তারা মেরে ফেলবে, একা বাড়িতে পেলে—এমন অনেকবার হুমকি দিয়েছে এবং মারধরও করেছে। এসব বিষয় নিয়ে একাধিকবার গ্রামে শালিস হয়েছে।

আমি বিদেশ চলে যাব কিছুদিনের মধ্যে, কিন্তু এখন আর যাওয়া হচ্ছে না। তারা আমার টাকা ছিনতাই করে নিয়ে গেছে, আমাকে মারধর করেছে ও শ্লীলতাহানি করেছে। গোলাপ, সোহাগ, শুভ আমাকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারে এবং তাদের স্ত্রীরা আমাকে ধরে রেখেছিল, তারাও গলায় চাপ দিয়ে ধরে হত্যাচেষ্টা করে।

আমরা থানায় মামলা করেছি, কিন্তু মামলার পর থেকে তারা আরও বেপরোয়া আচরণ করছে এবং বাড়িতে এসে আবারো হুমকি দিচ্ছে যে তারা আমাদের মেরে ফেলবে। এজন্য আমরা বাড়িতে ঠিকমতো থাকতে পারছি না।” হাফিজুল ইসলাম বলেন, “আমরা বাড়িতে থাকি না, বাড়িতে আমার বৃদ্ধা মা থাকেন। এর আগেও আমার মায়ের উপর হামলা করেছে তারা এবং স্থানীয়ভাবে মীমাংসা হয়।

কিন্তু বারবার হামলা চালিয়ে এখন আমরা জীবন নিয়ে ঝুঁকিতে আছি। আমাদের বাড়ি বা জমি নাকি তাদের—এ বিষয়ে তাদেরকে বলেছি, খতিয়ান-দলিল এগুলো বের করতে। কিন্তু সেটা না করে এবার বাড়িতে হামলা চালিয়ে আমার বোনের বিদেশ যাওয়ার জন্য টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ছিনতাই করে এবং আমার মা-বোনকে মারধর করে তারা।

মামলা করেছি আমরা, কিন্তু তারা আবারো বাড়িতে এসে মারমুখী আচরণ করছে প্রতিনিয়ত। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।”স্থানীয়রা জানান, ওই জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলছিল। কিন্তু এমন সহিংস ঘটনায় গোটা গ্রামে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

‎অভিযুক্তদের মধ্যে মো. সোহাগ মুঠোফোনে বলেন, “আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না। যা হবার কোর্টে হবে।”এ বিষয়ে বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনিছুর রহমান বলেন, “এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার।

এরপর একজনকে গ্রেফতার করে কোর্টে চালান দেওয়া হয়েছে। মামলা করার পরে যদি অভিযুক্তরা হুমকি দেন, তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”