নওগাঁয় বৃদ্ধ মা কে খোলা আকাশের নিচে রেখে গেলো ছেলে-মেয়েরা

বৃদ্ধা সুফিয়া বেগম বয়স প্রায় ৯০ বছর। কথা বলতে পারে না। বয়সের ভারে অচল প্রায় বৃদ্ধা চলাফেরাও করতে পারে না। তার ৮টি ছেলে মেয়ে। কেউ সরকারি চাকরি করেন, কেউ আবার কৃষি কাজ করেন। স্বামীর প্রায় ৪০ বিঘা জমি।

৮ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ার নিয়ে ছেলে মেয়ের মাঝে বাধে বিরোধ। কেউ মায়ের ভরোণ পোষনের দায়িত্ব নিতে চায় না। তাইতো সম্পত্তির জন্য বৃদ্ধা মা কে খোলা আকাশের নিচে ফেলে গেল তার আপন ছেলে মেয়েরা। ঘটনাটি ঘটেছে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মথুরা ইউপির জগতনগড় গ্রামে।

গতকাল (৩ এপিল) বৃহস্পতিবার সন্ধা ৭ টায় উপজেলার মথুরাপুর ইউপির জগতনগড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এলাকায় জানাজানি হলে সন্ধার পর বৃদ্ধা সুফিয়া বেগম কে এক নজর দেখতে গ্রাম বাসির ঢল নামে।

সংবাদ পেয়ে জগতনগড় গ্রামে গিয়ে দেখা যায় বৃদ্ধা সুফিয়া বেগম খোলা আকাশের নিচে একটি বালিশের নিচে মাথা দিয়ে শুয়ে আছেন। কথা বলার চেষ্ঠা করলে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কিছু বলতে পারে না। বৃদ্ধা সুফিয়া বেগম কে রাতে মশার হাত রক্ষার জন্য গ্রামবাসি মশারী টাঙিয়ে দিয়েছেন। কেউ আবার কয়েল জালিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু পরিবারের লোকজন কেউ এক নজর দেখতেও আসে নি।

ছেলেদের সাথে কথা বলার জন্য গেলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর দরজা বন্ধ করে দেয়। তবে ঘটনার এক ঘন্টা পর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে মশিউর নামের এক ছেলে তার মা সুফিয়া বেগম কে খোলা মাঠ থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে তার বাড়িতে জায়গা দেন।

গ্রামবাসিরা বলেন,“ তার স্বামীর প্রায় ৪০ বিঘা জমি ছেলেরা আগেই তার বাবার কাছে থেকে লিখে নেয়। বিষয়টি জানতে পেরে বৃদ্ধা সুফিয়া বেগম তার পাঁচ মেয়েদের কে তিন বিঘা জমি লিখে দেন। তারপর থেকেই মায়ের খোঁজ নেয় না ছেলেরা।

আর জামাই ফিরোজ হোসেন বলেন,“ আমার শ্বাশুরী আমার কাছেই ছিলো। কোন ছেলেরা তার খোঁজ খবর নেয় না। অসুস্থ হওয়ার খবর শোনার পরও তার ছেলেরা মা কে দেখতে আসে নি। তাই রাগ করে আজকে তার মেয়ে আঙ্গুর বেগম আমার শাশুড়ীকে ফাঁকা মাঠে ফেলে আসে।

মথুরাপুর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান আহসান হাবিব লিটন ও বদলগাছী থানার উপ-পরিদর্শক নিহার চন্দ্র বলেন, ঘটনা জানার পর এখানে এসেছি। তার ছেলেদের সাথে কথা বলেছি, তার ছেলে মশিউরের কাছে আছে বৃদ্ধা মা সুফিয়া বেগম। মায়ের ভরণ পোষনের দায়িত্ব না নিলে ছেলে- মেয়েদের বিরুদ্ধে ভরণ পোষন আইনে মামলা করা হবে।