নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী প্রেমগোসাই মেলা বন্ধ হলো অশ্লীল যাত্রাপালার কারণে, ১ লাখ টাকা জরিমানা

নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার গুজিশহরে চলছিল একটি ঐতিহ্যবাহী প্রেমগোসাই মেলা ও যাত্রাপালার নামে অশ্লীল নৃত্য পরিবেশন। চলতি মাসের ২১ তারিখ থেকে এই যাত্রাপালার নামে নগ্ন নৃত্য চলছিল, যা স্থানীয় মানুষের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল।

এতে তরুণ, যুবক এবং কিশোররা জমায়েত হয়ে অশ্লীলতা উপভোগ করছিল। স্থানীয় সচেতন মহল এই যাত্রাপালার বিরোধিতা করে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেয়। পরে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেয় এবং এই যাত্রাপালার আয়োজন বন্ধ করে দেয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছরই প্রেমগোসাই মেলা আয়োজন করা হয়। তবে এবার ২১ জানুয়ারি থেকে এই মেলার মাঠ ১ কোটি ২ লাখ টাকা দিয়ে ইজারা নেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি যাত্রাপালা আয়োজনের মাধ্যমে ব্যাপক টাকা উপার্জনের চেষ্টা করেছিলেন।

এজন্যই মেলার মাঠের ইজারার পরিমাণ এত বেশি বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তবে মেলা পরিচালনার নামে সেখানে অশ্লীলতা পরিবেশন করা হয়, যা সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

যাত্রাপালা আয়োজনে প্রতি রাতে নগ্ন নৃত্য পরিবেশন হতো। রাত ১১টার পর শুরু হয়ে ভোর অবধি চলতো এই অনুষ্ঠান। দর্শকদের মধ্যে ছিল বিভিন্ন বয়সী মানুষ, যারা ৪০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা দিয়ে টিকিট কিনে এসব অনুষ্ঠান উপভোগ করতেন। অভিযোগ উঠেছিল, গুজিশহর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরুল আমিন এই মেলার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন এবং তার তত্ত্বাবধানে এই অশ্লীলতা চলছিল।

তার সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিলেন যারা এই আয়োজনে আর্থিক লাভের জন্য জড়িত ছিলেন। এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান জানান, স্থানীয় প্রশাসন অভিযোগ পেয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। তিনি বলেন, গুজিশহরে যাত্রাপালার নামে অশ্লীল নৃত্য পরিবেশন চলছিল এবং তার কিছু প্রমাণও তারা পেয়েছেন।

এ কারণে মেলা কমিটিকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যেন এমন অশ্লীলতা না হয়, সেদিকে কঠোর নজরদারি রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে, মেলা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চলবে, কিন্তু যাত্রাপালা বন্ধ রাখা হয়েছে।স্থানীয়দের দাবি, এমন ধরনের অশ্লীলতা ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে, সে বিষয়ে প্রশাসনকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ এসব অনুষ্ঠানের ফলে যুব সমাজের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, যা সমাজের জন্য ক্ষতিকর।

তাদের মতে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং গ্রামীণ ঐতিহ্যকে সুষ্ঠুভাবে পরিবেশন করা উচিত, যাতে দর্শকরা সংস্কৃতির সত্যিকারের আনন্দ পায়। এই ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা প্রশংসনীয় হলেও, স্থানীয়দের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা রয়েছে যে, ভবিষ্যতে যদি এমন ঘটনা আবার ঘটে, তবে তাদের পক্ষ থেকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা তা নির্ভর করবে প্রশাসনের সতর্কতার উপর।

এজন্য স্থানীয় সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজন বলে মনে করছেন তাঁরা। মেলা চলাকালীন সময়েই বিষয়টি নজরে আসে স্থানীয় জনগণের এবং তারা প্রশাসনকে বিষয়টি জানাতে এগিয়ে আসেন। মেলা পরিচালকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ফলে এবার অশ্লীলতার অবসান হলেও, মেলা চলবে তবে সুষ্ঠু পরিবেশে।

এর মাধ্যমে প্রশাসন এক ধরনের বার্তা দিতে চেয়েছে যে, যে কোনও ধরনের অশ্লীলতা সমাজে গ্রহণযোগ্য নয় এবং তা বন্ধ করতে হবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা ভবিষ্যতে অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজনের ক্ষেত্রেও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। যারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেন, তাদের উচিত হবে একটি সুষ্ঠু ও শিক্ষামূলক পরিবেশ সৃষ্টি করা, যাতে তরুণ প্রজন্ম সুস্থ ও সঠিক পথ অনুসরণ করতে পারে।