নওগাঁর নিয়ামতপুর আওয়ামী পন্তী সভাপতি- সম্পাদকের সিন্ডিকেটে প্রতিবাদ করায় বরখাস্ত হলেন দলিল লেখক

নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলায় দলিল লেখক সমিতির সিন্ডিকেটের অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় অন্যায়ভাবে বরখাস্ত হয়েছেন দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে কর্মরত অভিজ্ঞ দলিল লেখক সাজেদুল আলম। গত মাসের মঙ্গলবার (৮ মার্চ এর) তার নিজের উপর ঘটে যাওয়া ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে অভিযোগ করেন।
দলিল লেখক সাজেদুল আলম বলেন, দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে আমি নিয়ামতপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সুনামের সাথে দলিল লেখক হিসেবে কাজ করে আসছি। কিন্তু অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, নিয়ামতপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে একটি দলিল লেখক সমিতি রয়েছে।
যার মাধ্যমে সরকারি বিধিমালা লংঘন করে সমিতির ইচ্ছামত দলিল লেখার উপর অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়। সমিতির মাধ্যমে ব্যক্তিগত ভাবে অসৎ উপায়ে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করা হয়ে থাকে। এমতা অবস্থায় আমি বারংবার এই সিন্ডিকেট ভাংতে চাইলে সেটির বিপরীতে আমাকে বিভিন্নভাবে লাঞ্ছনা বঞ্চনা বিভিন্ন শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।
এহেন অবস্থায় বর্তমানে গত ১৬-০৩-২০২৫ ইং তারিখে সাব রেজিস্ট্রি অফিসে একটি দলিল রেজিস্ট্রির কাজ করেছি। উল্লেখিত দলিল নম্বর -১৪৮৬ মৌজা চুনিয়া পাড়া, জে এল নং- ২০৫ ও চন্ডিপুর জে এল নং -২০৩ উক্ত দুই মৌজার জমি একত্রে রেজিস্ট্রি করার জন্য আমি আবেদন করি।
সাব রেজিস্ট্রি অফিস কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্র আইন মোতাবেক উক্ত দলিলটি রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করলেও নিয়ামতপুর দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিধি বহির্ভূতভাবে বাদী হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানিয়েছেন যে একই দলিলে দুই মৌজার জমি রেজিস্ট্রি করা যাবে না।
কিন্তু কেন রেজিস্ট্রি করা যাবে না এর কৈফিয়ত জানতে গেলে তারা আমার কাজকে অযৌক্তিক ভাবে বাধাগ্রস্থ করেছে এবং আমাকে দলিল লেখক সমিতি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে একটি চিঠি প্রদান করেছেন। তাদের এই অন্যায় ও স্বেচ্ছাচারমূলক সিদ্ধান্তে আমি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি এবং আমার পেশাগত জীবনে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, এই অনৈতিক প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করায় কোনো নোটিশ বা কারণ দর্শানো ছাড়াই আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন সমিতির সভাপতি মোজাফফর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক দ্বিজেন্দ্রনাথ। অন্যদিকে, যারা নিয়ম ভেঙে এক দলিলে একাধিক মৌজার জমি রেজিস্ট্রি করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং সিন্ডিকেটের পক্ষে থাকা ব্যক্তিরা নিরাপদেই রয়েছেন।
ভুক্তভোগী সাজেদুল আলম জানান, বর্তমানে ১৩ জন সনদবিহীন ব্যক্তি অবৈধভাবে দলিল লেখক হিসেবে কাজ করছেন। তারা নিয়মবহির্ভূতভাবে রেজিস্ট্রি কার্যক্রমে যুক্ত থেকেও বহাল থাকছেন, অথচ বৈধ সনদধারী হয়েও তিনি শুধুমাত্র অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় বরখাস্ত হয়েছেন।এ বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “আমি এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
যেন অবৈধ এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় এবং আমাকে পুনর্বহাল করে আমার পেশাগত জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এই বিষয়ে দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মোঃ মোজাফফর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক দ্বিজেন্দ্রনাথ দাস এর সাথে মুঠোফোনে কথা বলতে চাইলে এ বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হয় নাই তারা।
ভুক্তভোগী দলিল লেখক মোঃ সাজেদুল আলম লিখিত ভাবে অনিয়মের অভিযোগ পত্র জেলা রেজিস্টার নওগাঁ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিয়ামতপুর, সহকারী কমিশনার (ভ‚মী) নিয়ামতপুর, উপ-পরিচালক দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নওগাঁ ও উপজেলা সাব রেজিস্টার নিয়ামতপুর কে সুষ্ঠ তদন্ত করে সমিতির নামে সিন্ডিকেট ভেঙ্গে সরকারি বিধি মোতাবেক সরকারি রেজিস্টির কাজ করার এবং দায়িত্ব পুনরায় ফিরিয়ে পাওয়ার জন্য লিখিত ভাবে অনিয়মের অভিযোগ পত্র দাখিল করেন।
এ বিষয়ে নিয়ামতপুর উপজেলা ভারপাপ্ত নির্বাহী অফিসার সেলিম রেজা বলেন অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এবং নওগাঁ জেলা রেজিস্টার কর্মকতা মোঃ-হাবিবুর রহমান জানা অভিযোগ পাওয়ার পর কতৃপক্ষকে যথাযথ ব্যাবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন