নওগাঁর বদলগাছীতে ফসলী জমির পাশে ইটভাটা: বড় ক্ষতির শংকায় চাষীরা
নওগাঁর বদলগাছীতে চারিদিকে উর্বর ফসলী জমি। এর মধ্যেই গড়ে উঠেছে ইটভাটা! তাও আবার পাশাপাশি দুটি ইট ভাটা একই সঙ্গে। রাস্তার এপার আর ওপার। আইন অমান্য করে বেশ কিছু ইটভাটা বদলগাছীতে এভাবেই গড়ে উঠেছে। এতে চাষাবাদে বড় ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে কৃষকেরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ২৪-২৬টি ইট ভাটা রয়েছে। অনিয়মভাবে গড়ে উঠা ইটভাটার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি উপজেলার মিঠাপুর ও পাহাড়পুর ইউনিয়নে। ভাটাগুলো পরিবেশ অধিদপ্তরের অনাপত্তি সনদ ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে চালু রয়েছে। নিয়মনীতি মানা না হলেও যেন দেখার কেউ। দেখা যায়, উপজেলার মিঠাপুর ইউনিয়নের সরাইবাড়ী বুড়িগঞ্জ নামক স্থানে আদিল ব্রিক্স ও এমবিএফ ব্রিক্স দুটি পাশাপাশি। একেবারে রাস্তার এপার ওপার। পাচঘরিয়া হাওয়া ইটভাটা, এনআরবি, আলফালা, মনডল ব্রিক্স এবং খাদাইলে, বামনপাড়াসহ প্রায় সবগুলো ভাটা অনিয়মভাবে গড়ে উঠেছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, একটি ইটভাটা একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে পরবর্তী ইটভাটা নির্মাণের বিধান থাকলেও পাশাপাশি গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটা। এছাড়া অনুৎপাদনশীল জমি বিবেচনায় না নিয়ে ফসলী জমি। এমনকি তিন ফসলী জমিতেও ইটভাটা গড়ে তোলা হচ্ছে। এতে বিঘায় বিঘায় ফসলী জমি উৎপাদনশীলতা হারাচ্ছে। কারণ, ইট তৈরিতে পাশের জমি থেকে মাটি তুলে নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে ইটভাটা এলাকায় বানানো চুলার আগুন অন্য জমিকে উত্তপ্ত করছে। কোনো স্থাপনা, রেলপথ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান হতে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরত্বে কোনো ইটভাটা স্থাপনের নিয়ম নেই। অনিয়মভাবে গড়ে উঠলেও রহস্যজনক কারণে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেই কোনো তৎপরতা বা নজরদারী।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভাটা যখন চালু করে তখন কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালুতে বাড়িঘরে থাকা দায়। জমির ফসল জমিতেই নষ্ট হয়। এভাবে চলতে থাকলে ভাটার চারদিকের জমিগুলো এক সময় অনাবাদি হয়ে পড়বে।
এক উপজেলাতেই ২৪-২৬টি ইটের ভাটা। ভাটার কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালুতে বাড়িঘরে থাকা দায়। জমির ফসল জমিতেই নষ্ট হয় অভিযোগ। ইটভাটার মালিকদের নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মতবিনিময় করে আইনের নিয়ম কানুন জানানো হবে বলে জনান পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক।
জানতে চাইলে আদিল ব্রিক্স এর ম্যানেজার রাব্বি বলেন, ‘অবশ্যই করা যায়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করবো সেখানে নিয়ম কি। আমাদেরটা তো পাশাপাশি। এখানে একসঙ্গে লাগানো ইটভাটাও আছে।’
এমবিএফ ইটভাটার স্বত্বাধিকারী হাসু বলেন, ‘আমার ইট ভাটা আগে করা। এরকম প্রায় সব জায়গাতেই আছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের সনদ নেই।’ পাশাপাশি ইট ভাটা কেন করতে দিলেন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তার জায়গায় সে করেছে। আমি বাঁধা দিতে পারিনা।’
বদলগাছী উপজেলার ইটভাটা সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ বলেন, ‘যার টাকা হচ্ছে সেই প্রতিষ্ঠান করছে। যে আইন লংঘন করে প্রতিষ্ঠান করেছে এখন তারই দায়িত্ব নিতে হবে। তবে ইট ভাটায় ৩-৪ শত শ্রমিক কাজ করে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে সারাবছর চলে। এখানে প্রতিবন্ধী লোকজনও ইট তৈরি করতে পারে। যা তারা অন্য কোনো কাজ করতে পারে না। সরকার এখন কেমন চোখে দেখছে সেটা বলতে পারবো না।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মলিন মিয়া বলেন, ‘জেলার সকল ইটভাটার মালিককে ডাকা হয়েছে। তাদেরকে নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মতবিনিময় সভা করবো। সেখানে স্পষ্ট করে আইনের নিয়ম কানুন তাদেরকে বলে দিবো।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিন বলেন, ‘ইটভাটার প্রতিবেদনের বিষয়ে সাক্ষাতকার নিতে হলে অফিসে এসে নিতে হবে।’ মোবাইলে সহযোগীতা করতে পারছিনা বলে আন্তরিকভাবে দু:খিত জানিয়ে সংযোগটি কেটে দেন তিনি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন