নওগাঁর মান্দায় জাল দলিলের তাণ্ডব: সেনা সদস্যের নেতৃত্বে বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট

নওগাঁর মান্দা উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের বালিকাপাড়া গ্রামে এক চাঞ্চল্যকর ও ন্যাক্কারজনক ঘটনায় জাল দলিল ব্যবহার করে বাড়ি দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল শনিবার (০৪ অক্টোবর) বিকেলে এক ছুটিতে থাকা সেনা সদস্যের নেতৃত্বে প্রায় ২৭ জন মুখোশধারী সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এক বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়েছে বলে জানা যায়। এই ঘটনায় স্থানীয় এলাকাবাসী তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেছেন।
জাল দলিল করে দখলের পাঁয়তারা স্থানীয় ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, বালিকাপাড়া গ্রামের মৃত কাশেম সরদারের ছেলে হাসান সরদার তাঁর পৈতৃক ভিটায় ইটের নতুন বাড়ি নির্মাণ করছিলেন। এই সুযোগে একই এলাকার মৃত হানিফ মন্ডলের ছেলে অহির মন্ডল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একটি জাল দলিল তৈরি করে হাসান সরদারের বাড়িটি জোরপূর্বক নিজের বলে দাবি করে আসছেন।
দখলের এই নীলনকশা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে অহির মন্ডল তার জামাই, যিনি একজন ছুটিতে থাকা সেনা সদস্য হামিদুর রহমানকে, এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত করেন।
সেনা সদস্যের নেতৃত্বে তাণ্ডব ও লুটপাট শনিবার (০৪ অক্টোবর) বিকেল ৪টার দিকে সেই কথিত সেনা সদস্য হামিদুর রহমানের নেতৃত্বে অহির মন্ডল, তাঁর ছেলে মিজান, আমজাদ, এমরান, আরশাদ, এরশাদ ও আমিনুর এবং অন্যান্য সহযোগীরা মিলে ২৭ জন মুখোশধারী সন্ত্রাসীর একটি বিশাল বাহিনী নিয়ে হাসান সরদারের বাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাট করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ছুটিতে থাকা সেই সেনা সদস্য হামিদুর রহমান সরাসরি এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দেন। মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা জোরপূর্বক বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে নির্বিচারে ভাঙচুর ও লুটপাট শুরু করে। হামলায় নতুন নির্মাণাধীন বাড়ির আসবাবপত্র, নির্মাণ সামগ্রী এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পরিস্থিতি প্রতিকূল হওয়ায় এবং সন্ত্রাসীদের ভয়ে বাড়ির লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
স্থানীয়রা দ্রুত সংঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করলে হামলাকারীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
এলাকাবাসীর তীব্র ক্ষোভ: ‘কল্পনাও করা যায় না’
এই প্রকাশ্য দিবালোকে সন্ত্রাসী হামলায় বালিকাপাড়া গ্রাম ও কুসুম্বা ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দা আম্বিয়া, নাসিমা, ফরিদা, হেলাল সহ প্রবীণ ব্যক্তি ছাবের আলী মন্ডল ও সাদিয়া আক্তার দিনা ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একজন সেনা সদস্য ছুটিতে এসে তাঁর শ্বশুরের অবৈধ দখলকে সমর্থন করে প্রকাশ্য দিবালোকে এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দেবেন, তা কল্পনাও করা যায় না।”
তাঁরা অবিলম্বে অভিযুক্ত অহির মন্ডল, তাঁর ছেলেরা এবং হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া সেনা সদস্য হামিদুর রহমানসহ সকল সন্ত্রাসীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত অহির মন্ডলের ছেলে আমজাদ হোসেন বউ রেহেনা সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, অহির মণ্ডল বাড়িতে নেই। এজন্য তার মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
পুলিশের আশ্বাস: ‘তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মান্দা থানা (ওসি) আবু রায়হান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, “আমরা এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় আমরা তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ও প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
ওসি’র আশ্বাসে ভুক্তভোগী পরিবার কিছুটা স্বস্তি পেলেও, স্থানীয়রা দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল অপরাধীকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। এই ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন