নওগাঁর মান্দার আন্দাসুরা বিল সিন্ডিকেটের ইজারায় কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত সরকার


নওগাঁর মান্দা উপজেলায় ৪ বছর আগে বিল আন্দাসুরা নামে একটি জলাশয় ইজারাকে কেন্দ্র করে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ২০২১ সালে ইজারা হওয়া ওই জলমহালটি থেকে অন্তত কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে সরকার। জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি লঙ্ঘন করে ইজারা দেওয়ায় বঞ্চিত হয়েছেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরাও।
অভিযোগ উঠেছে, সিন্ডিকেট করে ওই ইজারার বিপরীতে সেই সময় আওয়ামীলীগের পেটুয়াবাহিনীরা অন্য কাউকে দরপত্র জমা দিতে দেওয়া হয়নি। এই সিন্ডিকেটে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. হারুন অর রশিদও জড়িত ছিলেন।
সেসময় তিন বছর মেয়াদে মাত্র ৩২ লাখ ২ হাজার ৫০০ টাকা ইজারামূল্য নির্ধারণ করা হলেও সস্প্রতি ওই জলমহালে প্রতিবছর ৫০ লাখ ৮ হাজার ৫৯৪ টাকা ইজারামূল্য পরিশোধ করছে একটি সমবায় সমিতি। এ থেকে বলাই যায় সেসময় সেখানে কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি নওগাঁর মান্দা উপজেলার বিল আন্দাসুরাসহ ২টি জলমহাল ইজারার উদ্দেশ্যে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জেলা প্রশাসন যেখানে ২৫০.০৯ একর আয়তন বিশিষ্ট বিল আন্দাসুরা জলমহালের সম্ভাব্য ইজারামূল্য নির্ধারণ করা হয় ৩২ লাখ ২ হাজার ৫০০ টাকা।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বাংলা ১৪২৮ থেকে ১৪৩০ সন পর্যন্ত ৩ বছর মেয়াদে ইজারার জন্য প্রকৃত মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি সমূহের কাছে সিলমোহরকৃত খামে দরখাস্ত আহ্বান করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. হারুন অর রশিদ। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী এ দরপত্র বিক্রি ও দাখিলে সময় বেঁধে দেওয়া হয় ওই বছরের ২ ফেব্রæয়ারি থেকে ১২ই এপ্রিল পর্যন্ত।
তবে এ সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই ওই বছরের ১ এপ্রিল সর্বোচ্চ দরদাতা দেখিয়ে নওগাঁ সদর উপজেলার ‘দক্ষিণ গোয়ালী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড’র সভাপতি ফরহাদ হোসেন পিন্টুকে ৩২ লাখ ৫ হাজার ৫০০ টাকায় ৩ বছরের জন্য বিল আন্দাসুরা জলমহাল ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন।
ভ্যাট ও আয়করসহ ইজারার প্রথম কিস্তি ১২ লাখ ৮২ হাজার ২০০ টাকা পরিশোধে সময় বেঁধে দেওয়া হয় ৭ কর্মদিবস। জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি, ২০০৯ অনুযায়ী কোনো জলমহাল ইজারার ক্ষেত্রে ‘জাল যার জলা তার’ নীতির আলোকে প্রকৃত অর্থেই যারা মৎস্যজীবী পেশায় নিয়োজিত তাদের মাঝে জলমহাল ইজারা দেওয়ার কথা বলা রয়েছে।
এছাড়াও এতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, ‘লিজ গ্রহীতা কোনো মৎস্যজীবী সংগঠন/সমিতি তাদের নামের জলমহাল কোনো অবস্থাতেই সাবলিজ অথবা অন্য কোনো ব্যক্তি/গোষ্ঠীকে হস্তান্তর করতে পারবে না। অন্য কোনো উপায়ে তা ব্যবহার করতেও পারবে না। যদি তা করে থাকে তাহলে জেলা প্রশাসক লিজ বাতিলসহ জমাকৃত লিজের টাকা সরকারের অনুক‚লে বাজেয়াপ্ত করবেন।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি মাঝে মাঝে সভা করে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের অনুক‚লে যেসকল জলমহাল ইজারা দেওয়া রয়েছে তা পরিবীক্ষণ করবেন ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবেন।’ তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, দক্ষিণ গোয়ালী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের নামে ইজারা হওয়া এ জলাশয়ের বিষয়ে সমিতিটির কোনো সদস্যই অবগত ছিলেন না।
সমিতিটির লাইসেন্সসহ যাবতীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে বিল আন্দাসুরা জলমহাল ইজারার উদ্দেশ্যে আবেদন করেছিলেন নওগাঁ শহরের সুলতানপুর মহল্লার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. আসাদুজ্জামান খান চৌধুরী। এ কাজে আসাদুজ্জামানকে সহযোগিতা করেন দক্ষিণ গোয়ালী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড সংলগ্ন এলাকা সদর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের গোয়ালী এলাকার বাসিন্দা জমির উদ্দীন।
মূলত জমিরের মাধ্যমেই সিন্ডিকেট করে ওই ইজারার বিপরীতে অন্য কাউকে দরপত্র জমা দিতে না দিয়ে জলাশয়টি সাবলিজ মূলে হাতিয়ে নেন আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা আসাদুজ্জামান খান চৌধুরী। অভিযোগ রয়েছে, এ সিন্ডিকেটে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. হারুন অর রশিদের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
আসাদুজ্জামান খান চৌধুরী জলমহালটি সাবলিজ মূলে ব্যবহার করছেন জেনেও তার বিরুদ্ধে কখনোই কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি। এতে জলমহাল ইজারা দেওয়ার উদ্দেশ্য লঙ্ঘন হওয়ায় বঞ্চিত হয়েছেন সাধারণ মৎস্যজীবীরা।
এবিষয়ে বিল সাবলিজ নেওয়া আসাদুজ্জামান খান চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করে না পাওয়া তার বক্তব্য দেওয়া সমভাব হয়নি। এই বিষয় নওগাঁ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন আমি, যোগদানের পরে বিষয়টি শুনলাম বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন