নওগাঁয় কৃষি জমির মাটি কর্তন!
নওগাঁর কৃষকদের সার, বীজ ও টাকার প্রলোভন দেখিয়ে মাটি ব্যবসায়ীরা তিন ফসলী জমির টপ সয়েল কেটে বিক্রি করছে বিভিন্ন ইটভাটা মালিকদের কাছে। টাকা ও সার বীজের লোভে অনায়াসে কৃষি জমির টপ সয়েল বিক্রি করছেন কৃষকেরা। জমির টপ সয়েলের পাশাপাশি গ্রাম অঞ্চলের প্রকৃতির সৌন্দর্য্য নষ্ট করে উঁচু ভিটা মাটি, পুকুরপাড় কেটে সয়লাব করছেন তারা। সেইসাথে প্রাকৃতিক ভাবে জন্মানো অনেক অক্সিজেন প্রদানকারী গাছ নষ্ট করে চলেছেন। একারণে জমির উর্বরতা শক্তি হারানোর সাথে উৎপাদন ক্ষমতা ব্যাহত হচ্ছে। যার কারণে জমি হারাচ্ছে শস্য উৎপাদন ক্ষমতা।
এতে করে দেখা দিবে খাদ্য ঘাটতি। এছাড়াও মোটা অংকের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে কৃষকের ফসলি জমি কেটে পুকুর খনন করে দিচ্ছেন অসাধু মাটি ব্যবসায়ীরা। সল্প মূল্যে মাটি কিনে লাভবান হচ্ছেন ইটভাটা মালিকেরা। ফসলের মাঠজুড়ে স্কে-ভেটর (ভেকু-মাটিকাটা) মেশিন বসিয়ে ট্রাক্টরে করে মাটি নিয়ে যাচ্ছেন জেলার বিভিন্ন ইটভাটায়। এতে করে গ্রামীণ ও শহুরে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট, ব্রীজ ও কার্লভাট নষ্ট হচ্ছে। এতে ধুলা-বালির রাস্তাঘাটে চলাচলের ক্ষেত্রে স্কুল পড়–য়া ছাত্র/ছাত্রী হতে বয়স্ক ও মাঝারী বয়সের পথচারীদের স্বাস-প্রশ্বাসের ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। যার ফলে ভবিষ্যতে চরম ভোগান্তিতে পড়বেন ওই সব এলাকার সাধারণ মানুষ জন। যেন দেখার কেউ নেই।
অভিযোগ রয়েছে, জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের ম্যানেজ করে তাদের সহযোগিতায় প্রতিনিয়ত রাস্তাঘাট নষ্ট করে মাটি বাণিজ্য করে যাচ্ছেন তারা। এসব বিষয়ে স্থানীয়রা ভূমি কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)দের জানালেও ব্যবস্থা গ্রহনের পরিবর্তে তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে চলে যান। দায় এড়াতে কর্মকর্তারা দায়সারাভাবে স্পটে এসে ঘুরে গেলেও কোন ব্যবস্থা নেয় না তারা। দিনের পর দিন মাটি কর্তন কাজ চলছে জেলার মাঠ জুড়ে। কর্তাদের এমন কর্মকা- দেখে স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে অনেক সময় মাটি বহনকারী গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিলে পরে স্থানীয় প্রতিনিধিদেরকে ম্যানেজ করে আবারও বহাল তবিয়তে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। যার ফলে জিম্মি হয়ে পড়েছেন সাধারন ভুক্তভোগী মানুষজন। জেলায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন এ সিন্ডিকেট মহল। অনেকে মাটি ব্যবসায়ীদের ভয়ে মুখ খুলছেন না।
জানা গেছে, জেলার মান্দা উপজেলায় পরানপুর ইউপির সদরপুর গ্রামের ফসলি মাঠে তিনটি স্কে-ভেটর (ভেকু) মেশিন বসিয়ে ২০ থেকে ২৫টি টাক্টর দিয়ে মাটি বহন করে নিয়ে যাচ্ছে এ উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায়। প্রতি গাড়ি জমির টপ সয়েল বিক্রি হচ্ছে ৫০০ শত টাকায়। অন্যদিকে বদলগাছী উপজেলার ভুবন এলাকায় একটি স্কে-ভেটর (ভেকু) মেশিন দিয়ে টাক্টর দ্বারা নওগাঁ-মাতাজী নতুন নির্মানকৃত আঞ্চলিক সড়ককে দুর্বল করে ফেলছে। এতে করে সরকারের কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।
মান্দা বৈলশিং ও বদলগাছী ভুবন গ্রামের স্থানীয়রা জানান, এসব অসাধু মাটি ব্যবসায়ী আলম,লিটন ও মেহেদী আমাদের গ্রাম পাড়া ও মহল্লার কাঁচা-পাঁকা রাস্তা নষ্ট করে মাটি বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন উপজেলার বিভিন্ন ইট ভাটায়। এতে করে ধুলায় পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি আমাদের রাস্তা-ঘাট কালভার্ট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মাটি বহন করে একটি কালভার্ট ভেঙ্গে ফেলেছে তারা। আমরা বাঁধা দিয়ে মাটির গাড়ি বন্ধ করে দিয়ে ছিলাম। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় কাউকে তোয়াক্কা করছে না। মান্দা ও বদলগাছী ইউনিয়ন ভূমি অফিস সহঃ কর্মকর্তাদের বলেও কোন কাজ হয়না।
কিছুদিন আগে মান্দা উপজেলার কালাচিতা ও বদলগাছী উপজেলার ভুবন গ্রামে পুকুর খনন করে ওই এলাকার রাস্তাঘাট নষ্ট করে দিয়েছে। মান্দা উপজেলার পরানপুর ইউনিয়ন ভূমি সহঃ কর্মকর্তা লতিফর রহমান ও বদলগাছী সদর ইউনিয়ন ভূমি সহঃ কর্মকর্তা রুনজু মাটি ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, আমরা বার বার উপজেলা ভূমি অফিসে ভেকু ও ট্রাক্টরের চাবি জব্দ করে আনলে ব্যাবস্থা গ্রহণ করেন না। চাবি নিয়ে আবার কাজ শুরু করেন মাটি ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে মাটি ব্যবসায়ী মেহেদীর সাথে ফোনে কথা হলে তিনি জানান, আমি বদলগাছী সদর ইউনিয়ন ভূমি সহঃ কর্মকর্তা রুনজু সাহেবের দ্বারা ইউএনওর কাছে থেকে অর্ডার নিয়েছি, বলে তিনিও ফোন কেটে দেয়।
বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি উগ্র মেজাজে জানান, মাটি কাটার বিষয়ে কিছু বিধান আছে। সে বিধান অনুযায়ী উনারা মাটি কাটতে পারবে। তবে এতে আমরা লিখিত কাগজপত্র দেয় না। রাস্তাঘাট নষ্ট হবে আপনাদের কি বলে তিনি ফোন কেটে দেয়।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মো. সামশুল ওয়াদুদ বলেন, মাটির উপরিভাগের ১০-১৫ ইঞ্চির মধ্যে উর্বরতা শক্তি থাকে। মাটি খুঁড়ে বিক্রি করার ফলে তা পুনরায় ফিরে আসতে অনেক সময় লাগে। এ ছাড়া মাটির এই অংশে যে কোনো ফসল বেড়ে উঠার গুণাগুণ সুরক্ষিত থাকে। বীজ রোপণের পর এই অংশ থেকেই ফসল প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান গ্রহণ করে বড় হয়। এটাকে টপ সয়েল বলে। এই টপ সয়েল একবার কেটে নিলে সে জমিতে আর প্রাণ থাকে না।
নওগাঁ জেলা প্রশাসক হারুণ-অর রশিদ জানান, এ বিষয়গুলো নিয়ে আমার কাছে বহু অভিযোগ এসেছে যার সমাধানের চেষ্ঠা করছি। আর সাংবাদিকের সাথে এমন আচরনে আমি খুবই দুঃখ প্রকাশ করছি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন