নকল ভারতীয় ধান বীজে সয়লাব তেঁতুলিয়ার বাজারগুলো

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় নকল ভারতীয় ধান বীজে সয়লাব বাজারগুলো প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন অসহায় কৃষকরা।
রোপা-আমন মওসুম সামনে রেখে অসাধু বীজ ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তারা কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় র্স্বণা জাতের ভারতীয় একটি ধান বীজের নামে লোকাল বিভিন্ন ধান বীজ বিক্রি করে প্রতারণা শুরু করেছে। অথচ স্বর্ণা নামে বাংলাদেশে কোনো ধান নেই। ওই মুনাফাখোর বীজ ব্যবসায়ীরা ভারতীয় ধান বীজ প্যাকেটের আদলে নকল প্যাকেট তৈরি করে বাজার থেকে ধান ক্রয় করে প্যাকেটজাত করছে। পরে তা স্বর্ণা ধানের বীজ হিসেবে বাজারে বিক্রি করছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন নামকরা কোম্পানির মোড়কে নিম্নমানের ধান বীজ প্যাকেটজাত করে স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ফলে কৃষক না জেনে এসব নকল বীজ কিনে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। এতে ধানের ফলনে ধ্বস নামবে এবং কাঙ্খিত খাদ্য উৎপাদন হবে না। ফলে খাদ্য সংকট থেকেই যাবে।

এদিকে মানসম্মত বীজ না পেয়ে কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সরকারের কৃষি বিভাগ বিষয়টি জেনেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তেমন একটা উদ্যোগী হচ্ছে না বলে জোর অভিযোগ উঠেছে।

২৬ মে রোববার উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের ভজনপুর বাজার এবং ২৯ মে শালবাহান ইউনিয়নের শালবাহান বাজাওে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অসাধু ব্যবসায়ীরা লাল র্স্বণা জাতের ভারতীয় বীজের প্যাকেটে লোকাল সাদা র্স্বণা ধানের বীজ দিয়ে তাদের প্রতারিত করা হচ্ছে। টাইগার ব্রান্ডের র্স্বণা ধানের বীজ ও ভারত সীড নামে ধানের বীজের প্যাকেটের গায়ে উৎপাদনের তারিখ নেই, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ নেই। এছাড়া বিএসটিআই-এর অনুমোদনও নেই৷ এদিকে পান ৮০৪ যমুনা ধানের বীজ ও পান সীড নামে বীজের প্যাকেটে লোকাল সাদা র্স্বণা ধানের বীজ দিয়ে কৃষকদের প্রতারিত করা হচ্ছে। প্যাকেটের গায়ে উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ থাকলেও সাদা গুডি স্বর্ণা লেখাটি সীল মারা রয়েছে এবং প্যাকেটটি কলকাতার দেখা গেছে।
জানা যায়, উপজেলায় ১৭টি হাট-বাজার রয়েছে তারমধ্যে শালবাহান ও ভজনপুর হাটেই এই নকল ধানের বীজ বেশি কেনাবেচা হয়ে আসছে। আরও জানা যায়, প্রতি শনিবার ও বুধবার শালবাহান হাট বসে এবং প্রতি রোববার ও বৃহস্পতিবার ভজনপুর হাট বসে।

কৃষকরা জানান, সরকার স্বল্প মূল্যে সার-বীজ দেয়ার পাশাপাশি কৃষি প্রণোদনা দিচ্ছেন। কিন্তু বাজারে ভেজাল ও নকল বীজ বিক্রি হওয়ায় তা ক্রয় করে কৃষকরা প্রতারিত হচ্ছে। ফলে সরকারের দেয়া কৃষি প্রণোদনার সফলতা পাচ্ছেন না কৃষকরা। তারা বলছেন, বেশি দাম হলেও যদি কৃষকরা ভালো বীজ পেয়ে থাকেন তাহলে তাদের ফসলের উৎপাদন বেড়ে যাবে। এতে আয়ও বেড়ে যাবে। কিন্তু ভেজাল বীজে কৃষকদের পুঁজি হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তাই জরুরি ভিত্তিতে ওইসব নকল বীজ বিক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তারা জোর দাবি জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভজনপুর বাজারের এক বীজ ব্যবসায়ী দোকানদার বলেন, আমরা জগদল থেকে ক্রয় করে বাজারে বিক্রি করি। আটোয়ারী ও জগদলে ভারতীয় এই প্যাকেটের ধান পাওয়া যায়। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারা যায় গত বছর মে মাসে জেলার আটোয়ারী উপজেলার ফকিরগঞ্জ বাজারের আপন বীজ ভান্ডারের মালিক আনিছুর রহমান লেবুর বাড়ি, দোকান ও গোডাউনে অভিযান চালিয়ে ভারতীয় বিভিন্ন মোড়কের এই নকল বীজ উদ্ধার করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন বীজ ভান্ডার মালিকগণ গোপনে এই ব্যবসা চালিয়ে আসছেন বলে জানা গেছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার জীবন ইসলাম বলেন, ভারতীয় প্যাকেটে নকল ধানের বীজ বিক্রির বিষয়ে মিটিং এ আলোচনা হয়েছে দ্রুত ইউএনও মহোদয়ের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বি বলেন, বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ অভিযান পরিচালনা করে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।