নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপনার নতুন নামকরণ: ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধার

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৮তম সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে শেখ পরিবারের নামে থাকা বিভিন্ন স্থাপনার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রতিফলন ঘটিয়ে নেওয়া এই সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক পরিচয় পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্কোয়ারের নতুন নামকরণ করা হয়েছে জুলাই স্কোয়ার, শেখ রাসেল খেলার মাঠের পরিবর্তে এখন থেকে এটি পরিচিত হবে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ নামে, এবং শেখ রাসেল শিশু পার্কের নতুন নামকরণ করা হয়েছে বুলবুল শিশু পার্ক।

আবাসিক হলগুলোর মধ্যেও এসেছে পরিবর্তন—বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল এখন বিদ্রোহী হল, এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল এখন থেকে শিউলিমালা হল নামে পরিচিত হবে। তাছাড়া, বঙ্গবন্ধু স্কোয়ারের আরেকটি অংশের নতুন নাম দেওয়া হয়েছে নজরুল স্কোয়ার।

নাম পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও বিতর্ক। শিক্ষার্থীদের একাংশ দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল যে, বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রেখে এর স্বকীয়তা রক্ষা করা উচিত। বিগত সরকারের সময় শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে স্থাপনার নামকরণ করা হয়েছিল, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে মতপার্থক্যের সৃষ্টি করে।

বিশেষ করে, জুলাই আন্দোলনের পর শিক্ষার্থীদের দাবি নতুন করে আরও জোরালো হয়। অবশেষে, সিন্ডিকেট সভায় সর্বসম্মতিক্রমে নেওয়া সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোতে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটেছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় দেখা যায়, ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর নামকরণেও পরিবর্তন আসে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের নামে একাধিক স্থাপনার নামকরণ করা হয়েছিল, যেমন—শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন কেন্দ্র, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

অপরদিকে, বিএনপি সরকারও তাদের নেতাদের নামে বিভিন্ন স্থাপনার নামকরণ করেছিল, যেমন জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ বা খালেদা জিয়া হল। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনীতিমুক্ত রাখা উচিত বলে মত দেন অনেকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামকরণে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পরিবর্তে কবি, সাহিত্যিক, সমাজ সংস্কারক ও ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের নাম যুক্ত করা হলে তা আরও গ্রহণযোগ্য ও সাংস্কৃতিকভাবে অর্থবহ হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নাম পরিবর্তনের ফলে এর নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয় আরও সুসংহত হবে বলে মনে করছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস, আদর্শ এবং নিরপেক্ষতাকে গুরুত্ব দিয়ে নতুন নামকরণ করা হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার বাস্তবায়ন।

এটি কেবল প্রশাসনিক পরিবর্তন নয়; বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশ, ঐতিহ্য ও মুক্তচিন্তার চর্চাকে রক্ষা করার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। শিক্ষার্থীরা আশাবাদী, এই পরিবর্তন বিদ্যাপীঠের গৌরবময় ঐতিহ্য ও একাডেমিক নিরপেক্ষতাকে আরও সুদৃঢ় করবে এবং ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে সহায়ক হবে।