নববর্ষ: বাংলাদেশে ১৪ এপ্রিল, পশ্চিমবঙ্গে কেন ১৫ এপ্রিল?
চিরায়ত বাংলার অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্য বর্ষবরণের মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে বাঙালি জাতিসত্তার প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের ভূমি বিভক্ত হলেও সংস্কৃতি প্রায় একই। তাই প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণ উৎসবে মাতে দুই বাংলা। কিন্তু সংস্কৃতি বিভক্ত না হলেও এই দিনটি উদযাপনের দিনক্ষণ ঠিকই আলাদা। বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ আসে ইংরেজি মাসের ১৪ এপ্রিল। অন্যদিকে পশ্চিম বাংলায় ১৫ এপ্রিল উদযাপন করা হয় উৎসবটি। যদিও একসময় দুই বাংলার মানুষ বর্ষবরণ করতেন ১৫ এপ্রিল।
বিশ্লেষকরা জানান, বিজ্ঞানসম্মতভাবে বাংলা বর্ষপঞ্জির সংস্কার হয়েছিল ১৯৫২ সালে। বাংলাদেশ এই সংস্কার মেনে নিলেও পশ্চিমবঙ্গ তা মানতে অস্বীকৃতি জানায়। মূলত এ কারণে বাংলাদেশে ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ হলেও পশ্চিম বাংলায় ১৫ এপ্রিল এই উৎসব পালিত হয়।
জানা যায়, চন্দ্র সন হিজরিকে সৌর গণনা হিসেবে এনে মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে বাংলা সনের উদ্ভব ঘটে। তবে সন গণনার দিন থেকে ইংরেজি ক্যালেন্ডারের সঙ্গে বিভিন্ন অমিল দেখা দেয়। এ কারণে ১৯৫২ সালে জ্যোতিপদার্থবিদ ড. মেঘনাদ সাহা ভারতে প্রচলিত প্রাচীন বর্ষপঞ্জির বিজ্ঞানভিত্তিক সংস্কার করেন। এর মাধ্যমে ইংরেজি তারিখ ১৪ এপ্রিল বাংলা বৈশাখ মাসের প্রথম দিন নির্ধারিত হয়।
ড. মেঘনাদ সাহার এই পঞ্জিকা সংস্কারকে সমর্থন করেন ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। কিন্তু দীর্ঘদিন ওই বর্ষপঞ্জিকা দুই বাংলার কোনোটিতেই কার্যকর হয়নি। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হু. মু. এরশাদ সংস্কার করা সেই বিজ্ঞানভিত্তিক পঞ্জিকাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেন। ফলে পহেলা বৈশাখ ১৪ এপ্রিল নির্ধারিত হয়। সেই থেকে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হয় ১৪ এপ্রিল। কিন্তু পশ্চিম বাংলার সনাতনপন্থীরা মেঘনাদ সাহার সংস্কার করা ওই প্রস্তাব মেনে নেননি। তারা আগের পঞ্জিকাকেই বহাল রাখেন। এজন্যই বাংলাদেশে ১৪ এপ্রিল আর পশ্চিমবঙ্গে ১৫ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, ‘বিভিন্ন সমস্যার কারণে ১৯৫২ সালে বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা ভারতে প্রথমবারের মতো একটি কমিশন গঠন করে বাংলা বর্ষ পঞ্জিকা সংস্কার করেন। পরবর্তী সময়ে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর উদ্যোগে বাংলা একাডেমির মাধ্যমে একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে ওই বর্ষপঞ্জিকা যাচাই-বাছাই হয়। পরে ভারত সরকারের গঠিত পাণ্ডে কমিটিও কিছু সংস্কার করে। পরে ওই কমিটির সদস্যরা চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দিয়ে বলেন, ‘বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে সংস্কার করা পঞ্জিকা অনুযায়ী ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালিত হবে। এর কোনও ব্যত্যয় হবে না। আমরা বাংলাদেশে তা মেনে নিয়েছি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ মেনে নেয়নি।’
মেনে না নেওয়ার কারণ উল্লেখ করে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে পাঁচটি বৃহৎ পঞ্জিকা বের হতো, যেগুলোর সঙ্গে ভারত সরকার কুলিয়ে উঠতে পারেনি। এ কারণে ওই সুপারিশ অনুমোদন দিতে পারেননি তারা। এ কারণেই বাংলাদেশে আমরা ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ উদযাপন করি আর পশ্চিমবঙ্গে পহেলা বৈশাখ পালন করা হয় ১৫ এপ্রিল।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন