নবম শ্রেণীর ছাত্রীকে তৃতীয় বিয়ে করে আলোচনায় ইউপি চেয়ারম্যান
নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক কিশোরীকে তৃতীয়বারের মতো বিয়ে করেছেন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ৪৫ বছর বয়সী চেয়ারম্যান আবু তালেব সরকার।
আর এই বিয়েকে বৈধতা দেয়ার জন্য বিগত ২০১৫ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ভুয়া সনদপত্র দিয়ে বয়স জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। ফলে এ ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক এলাকাবাসী জানিয়েছেন, গত রোববার (১ নভেম্বর) রাত ১০টার দিকে অতি সঙ্গোপনে ওই কিশোরীর পিতার বাড়িতে বিয়ে পড়ানো হয়। তবে কোন কাজী এই বিয়ে রেজিস্ট্রি করেছেন তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।
তারা আরও জানান, বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের দোলন গ্রামের অধিবাসী প্রতিবন্ধী মোঃ ওসমান গনি সরকার ওরফে বাচ্চু মিয়ার কন্যা এবং বকসীগঞ্জ রাজিবিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী বর্নিতা ওসমান বর্নির উপর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু তালেব সরকারের নজর পড়ে। এরপর নানা ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে হতদরিদ্র পরিবারের ওই কিশোরীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন চেয়ারম্যান। এরই এক পর্যায়ে কিশোরীর পরিবারের লোকজনদের সম্মতি আদায় করে রোববার রাতে বিয়ে সেরে ফেলেন।
এর আগে দু’বার বিয়ে করেছেন ওই চেয়ারম্যান। প্রথম বিয়ে করার পর কিছুদিনের মধ্যে তার এই সংসার ভেঙে যায়। এরপর দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তার দ্বিতীয় সংসারে স্ত্রী এবং কলেজ পড়ুয়া কন্যা সন্তান রয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা মোবাইল ফোনে কথা বললে চেয়ারম্যান আবু তালেব সরকার দাবি করেছেন, তার স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকায় তার অনুমতি নিয়ে বর্নিকে বিয়ে করেছেন। এটি বাল্যবিয়ে নয়। বর্নির পিতা অসুস্থ থাকায় অষ্টম শ্রেণীতে এক বছর ড্রপ গেছে। নইলে সে এখন দশম শ্রেণীতে থাকতো।
তিনি আরও দাবি করেন, বিয়ের মজলিসে কনের পরিবারের লোকজন পিএসসি’র সনদপত্র দেখিয়েছে। তাতে বর্নির জন্ম তারিখ ২০০০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর উল্লেখ আছে। সে হিসাবে তার বয়স ২০ বছর পার হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে এই সনদ যাচাই করার সুযোগ না থাকায় ওই সনদের উপর ভিত্তি করে বিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে। আর সনদটি বর্নির পরিবারের লোকজন কোথায় পেয়েছেন তা তিনি জানেন না বলে জানিয়েছেন।
এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক ২০১৬ সালের ২২ জুন তারিখর ইস্যুকৃত হাতে লেখা সনদপত্রটির লিপিকার হিসেবে মো. মেহরুল ইসলামের নাম লেখা রয়েছে। জোবাইদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মেহেরুল ইসলাম জানান, এই সনদপত্রের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। প্রধান শিক্ষক এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।
জোবাইদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক প্রবীর কুমার রায়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ডিআর অনুযায়ী ওই শিক্ষার্থীর পিএসসি সনদপত্র দেয়া হয়েছে। তারপরও কিভাবে তার সনদে বয়সে হেরফের হয়েছে তা তদন্ত করে সত্যতা বের করতে হবে।
এদিকে, এই সনদপত্রটিতে বয়স নিয়ে জালিয়াতি করা হয়েছে বলে অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে। কেননা বিগত ২০১৫ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মুদ্রিত বিবরণে দেখা গেছে মোছাঃ বর্নিতা ওসমান বর্নির জন্ম তারিখ ২০০৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর লেখা রয়েছে। এছাড়া ২০১৯ সালের জেএসসি পরীক্ষার মুদ্রিত ফলাফলে এবং নম্বরপত্রে বর্নির জন্ম তারিখ ২০০৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর লেখা রয়েছে। এ হিসাবে বর্নির বয়স ১৭ বছর ১ মাসের কয়েক দিন বেশি।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর এসএম আব্রাহাম লিংকন বলেন, এটি ফৌজদারী অপরাধ। যেহেতু ঘটনার সময় ভ্রামমাণ আদালত করার সুযোগ পাওয়া যায়নি-সেহেতু ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নিয়মিত আইনে মামলা দায়ের করার সুযোগ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে শুক্রবার (৬ নভেম্বর) মোবাইল ফেনে কথা বললে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. হাফিজুর রহমান জানান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিমের নির্দেশনায় বুড়িবুড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের ঘটনাটি তদন্ত তরে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য উলিপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে।
তথ্য সূত্র: সময় টিভি নিউজ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন