নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উচ্চমূল্যে জ্বালানি আমদানির চাপ কমাবে
সঠিক উদ্যোগ ও কৌশল গ্রহণ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন করা সম্ভব হলে তা আমদানি নির্ভরতা কমাতে ভূমিকা রাখবে। অস্থির বিশ্ব জ্বালানি বাজারের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য আমদানি ব্যয় এখন বড় দায় হয়ে দেখা দিয়েছে। সোলার, বায়ু বিদ্যুৎসহ সকল নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ পাওয়ার সঠিক কৌশল নিতে হবে। অকৃষি জমি সরকার অধিগ্রহণ করে তা উন্নয়ন ও সঞ্চালন সুবিধা নিশ্চিত করে বেসরকারি খাত থেকে প্রস্তাব আহ্বান করা হলে ৪ থেকে ৫ সেন্টে সোলার বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। আবার ক্লিন এনার্জি পাওয়ার জন্য মুজিব এনার্জি হাব বাস্তবায়নে স্রেডাকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। “ইনসিওরিং আরই-ইই ফর এ সাসটেনেবল ফিউচার: রোল অব স্রেডা অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট পার্টনার্স” শীর্ষক ইপি টকসের প্রধান অতিথি স্পেশাল ইনভয় টু সিভিএফ প্রেসিডেন্সি আবুল কালাম আজাদ উপরের কথাগুলো বলেছেন।
ইপি টকসে অংশ নেওয়া অপরাপর বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্রেডাকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়নে একটি ওয়ান স্টপ সেন্টার চালু করতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়নে সৃষ্ট সমস্যা মোকাবেলায়ও স্রেডাকে উদ্যোগ নিতে হবে। তারা মনে করছেন, শুল্ক বৈষম্যেও কারণে সোলার উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এটা যৌক্তিকভাবে অপসারণ করা হলে সোলার থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম আরো কমানো সম্ভব। অন্যদিকে স্রেডা কী কী করতে চায় তা চূড়ান্ত করে সেটার জন্য উন্নয়ন অংশীদারদের কাছ থেকে সহায়তা চাইতে হবে।
ইপি টকসে প্রধান অতিথি হিসাবে যুক্ত ছিলেন স্পেশাল ইনভয় টু সিভিএফ প্রেসিডেন্সি এবং বাংলাদেশ এনার্জি সোসাইটির প্রেসিডেন্ট আবুল কালাম আজাদ। মুখ্য বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সচিব এবং সাসটেনেবল ও রিনিয়েবল এনার্জি ডেভলপমেন্ট অথরিটির (স্রেডা) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসেন, বাংলাদেশ সোলার এন্ড রিনিয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট দীপাল চন্দ্র বড়ুয়া, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী আল মুদাব্বির বিন আনাম এবং জুলস পাওয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুহের এল খান। ইপি টকস সঞ্চালন করেন এনার্জি এন্ড পাওয়ার সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, যেখানে চ্যালেঞ্জ বেশি সেখানে প্রাপ্তিও বেশি। নবায়যোগ্য জ্বালানিতে সাফল্য পেতে চ্যালেঞ্জ বেশি। এখানে সাফল্য পেলে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় সম্ভব। জ্বালানির অস্থির বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা খুবই কঠিন। জ্বালানি কেনা খাত থেকে যদি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা যায় তা দেশের অন্যান্য খাতে উন্নয়নের কাজে লাগবে।
তিনি বলেন, সোলার নিয়ে ব্যাপক কাজ হয়েছে। এখাতে অনেক কিছুই বাস্তবায়ন হয়েছে। দেশে বিশাল চর পড়ে আছে। সেখানে সোলার বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। এখান থেকে ৪/৫ সেন্টে বিদ্যুৎ পাওয়া যেতে পারে। বিভাগীয় শহরের সরকারি ভবনগুলোর ছাদে সোলার স্থাপন করা যায়, রেললাইনের উপর সোলার বসান যায়, সড়কের দুপাশেও সোলার প্যানেল স্থান করা যায়। অনেক বাঁধ রয়েছে সেখানেও সোলার বসান যায়। কাপ্তাই লেকে ভাসমান সোলার প্যানেল স্থাপন করা যেতে পারে। কাপ্তাই লেকের ১% এলাকায় সোলার বসিয়ে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। এসব বিষয় নিয়ে স্রেডার কাজ করার সুযোগ আছে। এরই মধ্যে বায়ু ম্যাপিংয়ের কাজ চলছে। সাগরের বায়ু জ্বালানি নিয়ে নীতিমালা তৈরি করা জরুরি। স্রেডাকে ওয়ান স্টপ কেন্দ্র করা জটিল কোনো বিষয় নয়। মুজিব এনার্জি হাব নিয়ে নেতৃত্ব দিতে স্রেডাকে কাজ করতে হবে। সি ওয়েভ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। জোয়া-ভাটা ব্যবহার করেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়।
মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, সোলার হোম নিয়ে আমাদের সাফল্য অনেক। তবে বহুল জনসংখ্যার দেশে জমি স্বল্পতা বড় সমস্যা। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে বিজনেস মডেল প্রয়োজন। সোলার ইরিগেশনে বিজনেস মডেল তৈরি জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ সেচের জন্য বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয় মাত্র ৪ মাস, কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ১২ মাস। সেক্ষেত্রে বাকি সময়ে উৎপাদিত বিদ্যুৎ গ্রিডে সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। বায়ু এনার্জি আইপপিতে ২৪৫ মেগাওয়াট এবং সিরাজগঞ্জে সরকারিভাবে ১১০ মেগাওয়াট উৎপাদনের কাজ চলছে। কোস্টাল এলাকায় বায়ু এনার্জির সম্ভাবনা নিয়ে ডাটা সংগ্রহের কাজ চলছে। বঙ্গপোসাগরে বায়ু এনার্জি কীভাবে কাজে লাগান যায় তা নিয়ে স্রেডা কাজ করছে।
মোহাম্মদ হোসেন বলেন, নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের স্টোরেজ নিয়ে স্রেডাকে কাজ করতে হবে। এখাতে পলিসি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সুযোগ রয়েছে। ২০১০-১৫ ছিল বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সুসময়, ২০১৫-২০ এ আমরা জোর দিয়েছি সঞ্চালন-বিতরণের দিকে। আর ২০২১-২৫ এ আমাদের সাসটেইনেবল এনার্জির দিকে নজর দিতে হবে। স্রেডা এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা নিতে পারে। যদিও এখনও সঞ্চালন ব্যবস্থা তেমন ভালো না বলে বেশ অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও গ্যাস বা কয়লার অভাবে পূর্ণ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এজন্যই প্রয়োজন নবায়নযোগ্য এনার্জি। এছাড়া নবায়নযোগ্য এনার্জি যদি সাশ্রয়ী করা যায় তাহলেই তা টেকসই জ্বালানিতে রূপান্তরিত হবে। জলবায়ু তহবিল আর জ্বালানি সহায়তা তহবিল যেন মিলিয়ে ফেলা না হয় তাও দেখতে হবে।
দীপাল চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, জ্বালানির উচ্চমূল্যের কারণে যদি বিদ্যুতের দাম বেড়ে যায় তাহলে ১০০ ভাগ বিদ্যুতায়নের সুফল পাওয়া যাবে না। এজন্য নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের রোডম্যাপ চূড়ান্ত করতে হবে। নেট মিটারিংয়ে সুফল পেতে হলে ট্যাক্স নিয়ে ভাবতে হবে। এখন এখানে ৩৭% ট্যাক্স ধরা আছে। নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের জন্য জরুরি প্রয়োজন মেটাতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের আওতাও টাস্ক ফোর্স গঠন করা যেতে পারে। সকলের অভিজ্ঞতা নিয়ে একশন প্ল্যান তৈরি করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। উন্নয়ন সহযোগী তহবিল পেতে আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এছাড়া ইউটিলিটি কোম্পানিগুলোকে ৫% নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য বেধে দেওয়া যেতে পারে।
মুদাব্বির বিন আনাম বলেন, উন্নত কারিগরী দক্ষতা আমরা কীভাবে ব্যবহার করতে পারি তা নিয়ে কাজ করতে হবে। এছাড়া কারিগরী দক্ষতা ডাইভারসিফিকেশন জরুরি। সাসটেইনেবল এনার্জি খাতে কাজ শুরু করতে আমরা মোটেই দেরি করিনি। এনার্জির উৎপাদন, ব্যবহার এবং এর ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট করতে এখাতের সবার চাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্রেডাকে কাজ করতে হবে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে ২০৪০ সালের মধ্যে এখাতে সাফল্য পেতে মোটেই বেগ পেতে হবে না।
নূহের আল খান বলেন, সোলার বিদ্যুৎ নিয়ে যে নীতিমালা আছে তা বেশ ভালো। তবে উৎপাদিত বিদ্যুৎ আরইবিতে বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। স্রেডাকে যদি জ্বালানির ওয়ান স্টপ সেন্টার করা যায় তাহলে অনেক বাধা থেকে মুক্ত হওয়া যায়, সময়ও সাশ্রয় হয়। অনেক ক্ষেত্রে কাস্টমকে বোঝান যায় না, এর সুরাহা হওয়া প্রয়োজন। বায়ু এনার্জিতে ব্যক্তিখাত সংশ্লিষ্ট করা দরকার।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন