নরসিংদীতে আ’লীগের দুপক্ষের গোলাগুলিতে পরীক্ষার্থীসহ নিহত ৪
নরসিংদীতে পৃথক স্থানে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গুলিতে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ ৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে পুলিশ বলছে, তারা ৩ জন নিহত হওয়ার খবর পেয়েছে।
শুক্রবার রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চল বাঁশগাড়ি ও নীলক্ষায় পৃথক এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও ১০ জন। আহতদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ৩ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহত দুজন হলেন- বাঁশগাড়ি গ্রামের আবদুল্লাহ ফকিরের ছেলে ও স্থানীয় বাঁশগাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরিক্ষার্থী তোফায়েল রানা (১৬), বীরগাও কান্দাপাড়া গ্রামের ওসামান মিয়ার ছেলে সোহরাব মিয়া (৩০) ও নীলক্ষা ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামের সোবান মিয়ার ছেলে স্বপন (২৭)। অপর নিহতের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
নিহত পরীক্ষার্থী তোফায়েল রানা স্থানীয় রাজনীতিতে বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত হাফিজুর রহমান সাহেদ সরকারের সমর্থক হিসেবে পরিচিত।
নিহতের স্বজন ও পুলিশ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত হাফিজুর রহমান সাহেদ সরকারের সমর্থক এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত সিরাজুল হকের সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় দুই পক্ষের হামলা ও পাল্টা হামলায় চেয়ারম্যান সিরাজুল হকসহ একাধিক নিহতের ঘটনা ঘটে।
এরই জের ধরে শুক্রবার সকালে বাঁশগাড়ি গ্রামের বালুমাঠ এলাকায় বর্তমান চেয়ারম্যান আশরাফুল হক ও বাবুল মেম্বারের সর্মথক এবং প্রয়াত হাফিজুর রহমান সাহেদ সরকারের সমর্থক জামাল, জাকির ও সুমনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এতে ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী তোফায়েল রানা নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন পেয়েরাকান্দী গ্রামের সফর আলীর দুই ছেলে সুমন মিয়া (২৮), মামুন মিয়া (২৫) ও মির্জাচর গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে সুমনসহ (২৬) ৬ জন।
তাদেরকে নরসিংদী সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া গুলিবিদ্ধ ৩ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহত এসএসসি পরীক্ষার্থী তোফায়েল রানার বাবা আবদুল্লাহ ফকির বলেন, ঝগড়া-বিবাদের জন্য এলাকা ছেড়ে পরিবার নিয়ে নরসিংদী চলে এসেছি। ছেলে পরীক্ষার খোঁজখবর নিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিল। সেখানে দুই পক্ষের গোলাগুলির মাঝে পড়ে তাকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। এভাবে আর কত বাবার বুক খালি হলে থামবে বাঁশগাড়ির এই রক্তক্ষয়ী বিবাদ- তা আমাদের জানা নেই। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।
এদিকে পৃথক ঘটনায় শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার নীলক্ষার গোপীনাথপুর বীরগাও কান্দাপাড়া গ্রামে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে সোহরাব মিয়া নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত আরও ৪০ জন।
পুলিশ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নীলক্ষা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হক সরকার ও বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এরই জের ধরে শুক্রবার দুপুরে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আবদুল হক সরকারের সমর্থকদের ওপর হামলা চালায় তাজুল ইসলাম সরকারের সমর্থকরা।
আবদুল হক সরকার ও তাজুল ইসলাম সরকার দুজনই স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় সদস্য। হামলার একপর্যায়ে তাজুল ইসলামের সমর্থক সোহরাব মিয়া ও স্বপন নিহত হন। এতে করে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এ ব্যাপারে নিলক্ষা ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম জানান, বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম হত্যার পর তার হত্যাকারীরা গাঢাকা দেয় এবং তারা নিজ এলাকা ছেড়ে সফি মেম্বারের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। মূলত সিরাজুল ইসলাম ও সাহেদ সরকারের সমর্থকদের ঝগড়া নিলক্ষা ইউনিয়নেও ছড়িয়ে পড়ে।
রায়পুরা থানার ওসি মহসিন উল কাদির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। পৃথক দুটি ঘটনাই আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে ঘটেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন সাংবাদিকদের জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বাশঁগাড়ী, নিলক্ষাসহ কয়েকটি গ্রামে বিবাদ ছড়িয়ে পড়ে। এসব ঘটনায় ৩ জন নিহত হওয়ার খবর পেয়েছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ কাজ করছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন