নরসিংদীতে সদর হাসপাতালে রমরমা দালালদের বাণিজ্য!

নরসিংদী সদর হাসপাতাল অন্তত শতাধিক দালালের একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে এসব দালালদের হাতে জিম্মি রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনরা।

হাসপাতাল সূত্রে ও রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নরসিংদী সদর হাসপাতালে দালালদের উৎপাত নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। হাসপাতালে গেলেই চোখে পড়ে দালালদের রোগী নিয়ে টানাটানির দৃশ্য। তাদের বাধা টপকে হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে কোনো রোগীর পৌঁছানো অত্যাধিক কষ্টের ব্যাপার। জোর করেই তারা রোগীদের নিজেদের পছন্দের বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে নিয়ে যেতে চায়। এছাড়া সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কিছু অসাধু সরকারী ডাক্তার এসব দালালদের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে নরসিংদী জেলার স্বাস্থ্য বিষয়ে দুর্নীতি ও হয়রানি সহ বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশ হলেও বিগত সময়ে প্রতিক্রিয়া না হওয়ায় অনেক সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্য বিষয়ে অনীহা প্রকাশ করেছে। তাই সংবাদ কর্মী রুদ্র এই বিষয়ে সাত পর্বের মাঝে প্রথম পর্ব এটি।

এছাড়া নরসিংদী সদর হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় যে, রোগীরা কোনোমতে সরকারি এই হাসপাতালের চিকিৎসকের কক্ষে পৌঁছালেও নিস্তার নেই। চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বের হলে আরেক দফা টানাটানি শুরু হয়। এবার টানাটানি ব্যবস্থাপত্রে লেখা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য। দালালদের পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে হবে।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা প্রসূতি শাহিনা খাতুন বলেন, তিনি মা ও প্রসূতি সেবা ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু এই হাসপাতালে চিকিৎসা পেতে অনেক দেরি হবে এমন কথা বলে এক দালাল তাঁকে পাশের একটি ক্লিনিকে নিয়ে যান। তখন বলা হয়েছিল, ওই ক্লিনিকে তাঁর স্বাভাবিকভাবে সন্তান জন্মদানের ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু ভুলিয়ে-ভালিয়ে সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর অস্ত্রোপচার (সিজারিয়ান অপারেশন) করানো হয়। এ জন্য ১০ হাজার টাকা গুনতে হয়েছে তাঁকে।

এছাড়া সংবাদ কর্মী রুদ্র সোমবার (১৭মে) জরুরী বিভাগ সহ হাসপাতালে আশপাশের এলাকা পরিদর্শন করার সময় হঠাৎই জরুরী বিভাগের ৩০ নং রুমের সামনে একটি দালাল চক্র দেখা যাচ্ছে যারা রোগীদেরকে ভুল বুঝিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।

এ বিষয়ে পরিচয় গোপন রেখে দালের এক সক্রিয় সদস্য বলেন, জরুরী বিভাগ সহ বিভিন্ন শাখার ডাক্তাররা আমাদের কাছ থেকে ভাগ নিচ্ছে। তাই আমরা এখানে দাড়িয়ে রোগী অন্যত্র সরানোর চেষ্টা চালাচ্ছি। এছাড়া ঔষুধ কেনার ক্ষেত্রের আমাদের দালাল চক্রের হাত রয়েছে।

জানতে চাইলে হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন, এটি সঠিক যে দালাল চক্র এখানে সক্রিয় আছে। তবে বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় দালালবিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এর মাধ্যমে অনেককে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। তারপরও দালালদের উৎপাত বন্ধ করা যায়নি। বরং দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দালালরা স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিদেরকে হাত করে দিন দিন তাদের ক্ষমতা জেরালো করছে ফলে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পাচ্ছে। অন্য দিকে সাধারণ জনগন ভোগান্তিতে পড়ছে। এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।