নরসিংদীর রায়পুরার মরজালে স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ স্বামীর বিরুদ্ধে

নরসিংদী রায়পুরা উপজেলার মরজাল ইউনিয়নের রাজাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা ইদ্রিছ আলীর মেয়ে ইভা (১৯) কে বটিয়ারা এলাকার বাসিন্দা আল-আমিনের সাথে বিবাহ দেন।

কিছুদিন যেতে না যেতেই আল-আমিন ইভাকে বিভিন্ন দাবীতে অমানুষিক নির্যাতন চালাতো বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রায় সময়ই এ নিয়ে গ্রাম্য সালিশ হয় বলে জানা গেছে।

বুধবার (১৫ মে) সন্ধ্যা ৬টার দিকে ইভার শ্বশুর অর্থাৎ আল-আমিনের পিতা আবু মুন্সী ভ্যানগাড়ি দিয়ে অসুস্থ্য অবস্থায় ইভার বাবার কাছে দিয়ে পালিয়ে যায়।
তাৎক্ষনিক মরজাল বাসষ্ট্যান্ডের ব্যবসায়ী ওবায়দুল্লাহ নরসিংদী জেলা হাসপাতালে আনলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন।

রাজাবাড়ী এলাকার সাবেক মেম্বার মিলন মিয়া সংবাদকর্মী রুদ্রকে জানান, ইভার বাম কানের গোড়ায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

মিলন মেম্বার আরো জানায়, ইভাকে পরিকল্পিতভাবে মারধোর করে হত্যা করা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।

এদিকে বটিয়ারা এলাকার বাসিন্দা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, আল-আমিন বিভিন্ন মসজিদে ইমামতি করতো। প্রায় সময়ই তার বউ ইভার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালাতো। তার একটি ছেলে সন্তান জন্ম হওয়ার পর থেকে নির্যাতনের পরিমান আরো বাড়িয়ে দেয়।

গত (১৫ মে) বুধবার বিকেল ৪টার দিকে আমরা পাড়া-প্রতিবেশি ইভাকে মারধোর ও কান্নার শব্দ শুনতে পাই। এক পর্যায়ে আবু মুন্সী ছেলেকে বকা দেয় মেয়েটাকে আর মারিস না, মেয়েটা এখনই মারা যাবে। তুই অন্যদিকে চলে যা। আমি অসুস্থ্য মেয়েকে তার বাবার কাছে বুঝিয়ে দিয়ে আসি।

এদিকে ইভার বাবা ইদ্রিছ আলী মুন্সী সংবাদকর্মী রুদ্রর নিকট অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়েকে প্রায় সময়ই নির্যাতন করতো এই আল-আমিন। বিয়ের পর প্রায় ২০টিরও অধিক সালিশ করে তার বাড়িতে যাওয়া হয়েছে। গতকাল আমার মেয়েকে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে।

আমি নরসিংদী জেলার পুলিশ সুপারের সহযোগিতা কামনা করছি। আমার মেয়েকে যারাই মেরেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।

এদিকে বটিয়ারা এলাকার ইউপি সদস্য আলতাফ মেম্বারের নিকট বিষয়টি জানতে চাইলে, তাকে খুজে পাওয়া যায়নি। তাকে একাধিক ফোন করলেও কোন খবর পাওয়া যায়নি।

রাজাবাড়ী এলাকার দোকানদার মো. আসাদ সংবাদকর্মীদেরকে জানান, ইভা একটি সরল সোজা মেয়ে ছিলো। তাকে নির্যাতন করে আল-আমিন মেরে ফেলেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাই তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি। গতকাল রাতে আল-আমিনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করে নিয়ে যায়। ইভার বাবা রায়পুরা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছে।

বর্তমানে ইভার লাশ নরসিংদী সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য রয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে ইভার লাশটি পারিবারিক ভাবে দাফন করার প্রস্তুতি চলছে।

এদিকে রায়পুরা থানার পুলিশ সদস্য ও তদন্ত (ওসি) হালিম সাহেব সংবাদকর্মীদেরকে জানান, বিষয়টি আমরা অবগত আছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত আসামীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউই আইনের ঊর্দ্ধে নয়। তদন্ত শেষে আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে আল আমিনের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলে, সংবাদকর্মীদের নিকট কোন বক্তব্য দিতে তারা রাজি হননি। তারা বিষয়টি এড়িয়ে যায় বর বলেন, মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে আমার ছেলেকে ফাসানোর জন্য।

এদিকে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অল্প বয়সে অনেক তরুন-তরুনীকে বিবাহ দেওয়ায় মানসিক চাপে থাকে। কিছু দুষ্কৃতিকারীদের কারনে এসব ঘটনা ঘটে। আশা করি, প্রকৃত অপরাধীকে তদন্ত করে আইনের আওতায় এনে বিচার করবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।