নরসিংদী কারাগারের কারারক্ষী সোহরাফকে ঘুষ দিলেই দেখা করা যায় কারাগারের আসামিদের সঙ্গে

নিয়ম অনুযায়ী নরসিংদী জেলা কারাগারের বন্দিদের সঙ্গে স্বজনরা দেখা করতে পারেন ১৫ দিনে একবার। কিন্তু কারারক্ষী সোহরাফকে ঘুষ দিলে দিনে দুইবারও দেখা করার সুযোগ মেলে। এমনকি সোহরাফকে ঘুষ না দিলে জামিনে মুক্ত পাওয়া আসামীদেরকে একদিন পর ছাড়ে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

কোনো হাজতি কিংবা কয়েদির সঙ্গে আত্মীয়-স্বজনরা এমনিতেই ১৫ দিনে একবার দেখা করার সুযোগ পান। কিন্তুু এ সময়সীমার বাইরেও চাইলে দেখা করা যায়, যদি কিছু টাকা কারারক্ষী সোহরাফকে দেওয়া হয়। গত ১ তারিখ পলাশ উপজেলার এক মাদক মামলার আসামীর নরসিংদী আদালত থেকে জামিন হলেও আসামীর পক্ষের লোকজন বিকেল ৫টায় নরসিংদীর কারাগারে গেলে কারারক্ষী সোহরাফ জানায় আপনাদের আসামীকে আগামীকাল ছাড়া হবে। কিছু ত্রæটি রয়েছে। হঠাৎ ১০ হাজার টাকা চুক্তির বিনিময়ে আসামীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি এখন ভাইরাল।

প্রতিদিন নরসিংদী জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকে কারাগারে আসে তাদের কারাবন্দি স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে। দেখা করতে এসে দিতে হয় ঘুষ, তা না হলে দেখা করাটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। নিরুপায় হয়েই সাধারণ মানুষ কারারক্ষী সোহরাফকে দুই-তিনশ টাকা দিয়ে দেখা করছেন হাজতি বা কয়েদির সঙ্গে। আবার অনেক ক্ষেত্রে কারারক্ষী সোহরাফের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিলে আসামিদের সঙ্গে স্বজনদের একান্তে কথা বলার সুযোগও করে দেওয়া হয়।

নরসিংদীর বাইরে থেকে কেউ কারো সঙ্গে দেখা করতে এলে ডিও লেটার লাগবে বলে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারে থাকা কারারক্ষী সোহরাফের মোটা অংকের ঘুষ নেয়। নাহলে দেখা করতে দেয়া হয় না স্বজনদের সাথে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জেলা কারাগারের মূল প্রবেশদ্বারের বাম পাশে ছোট রুমটি হচ্ছে “ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার”।

আর এ রুম থেকেই দেওয়া হয় আসামিদের সঙ্গে দেখা করার স্লিপ। রুমটির বাইরে নীল রঙের দেয়ালে সাদা রঙে লেখা “রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ’। তার নিচে লাল রঙে লেখা বিনামূল্যে সাক্ষাতের স্লিপ সংগ্রহ করুন, বিনামূল্যে মোবাইল ফোন জমা রাখুন। এমন কি যে কোনো অভিযোগ দেওয়ার জন্য জেলসুপারের সরকারি ফোন নম্বরটি লেখা রয়েছে। তবে সেই নম্বরে কেউ কোনো অভিযোগ করে কি না, বা কেউ কল দিলে কেউ রিসিভ করে কি না, তা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ।

নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলাথেকে আসা কুলসুম আক্তার অভিযোগ করে বলেন, আমি আমার এক আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করতে আসছি জেলা কারাগারে। দেখা করতে এসে স্লিপ কাটতে গিয়ে শুনলাম আমি দেখা করতে পারব না, কারণ ডিও লেটার নেই। আমি এত কিছু বুঝি না, তখন ওই কাউন্টারের পিছনে মর্টার ঘরের এখানে সোহরাফ নামে এক কারারক্ষী বলেন, আমাকে ৫শ’ টাকা দিলে আপনার আসামীর সঙ্গে দেখা করিয়ে দিব, আপনি কি রাজি? পরে ৫শ টাকা দিয়ে আসামির সঙ্গে দেখা করে।

এমনকি আবারো আসলে সোহরাফের সঙ্গে দেখা করার কথা বলেন।

একই উপজেলা থেকে আসা আসাদ মিয়া বলেন, আমার ভাইকে দেখতে আসছি এ কারাগারে। দেখা করতে এলেই কারারক্ষী সোহরাফকে টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে দেখা করতে পারি না। কোনো খাবার দিতে গেলেও তাকের টাকা দিতে হয়, যে টাকার খাবার কিনি, সেই পরিমাণ টাকা দিতে হয় তাদের।

এ বিষয়ে সংবাদকর্মী মঈনুলকে ম্যানেজ করার চেষ্টা চলছে ও বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের দিয়ে ফোন দেয়া হচ্ছে। নরসিংদী জেলার প্রবীণ ও সাহসী সাংবাদিক রুদ্র মঈনুলকে বলেন, আপনি যদি সত্যতা পেয়ে থাকেন রিপোর্ট করতে পারেন। কিন্তুু কাউকে মিথ্যা হয়রানী করার সুযোগ সাংবাদিকদের নেই।

এ বিষয়ে কারা উপ মহা পরিদর্শক, ঢাকা কারা অধিদপ্তর মনির আহমেদ সংবাদকর্মীকে বলেন, নরসিংদীতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারের সোহরাফ কারারক্ষী টাকার বিনিময়ে একাধিকবার দেখা করার সুয়োগ করে দিচ্ছে কি না বা অন্যান্য বিষয় আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করে ধরতে হবে। আমি বিষয়টি নরসিংদী জেলসুপারের নিকট জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।