নরসিংদী দাম বেশি হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে লটকনের আবাদ, লটকনের খ্যাতি দেশজুড়ে
টসটসে রসালো হলুদ রংঙের এই ফলের নাম স্থানীয় ভাষায় বগি বা গোডা, মূলত গাছের সাথে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকে এই বন ফল লটকন। অনেকেই লটকনকে বলে থাকে দেশীয় হলুদ আঙ্গুর। নরসিংদীতে লটকন চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পাচ্ছেন চাষিরা। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া লটকন চাষে উপযুক্ত হওয়ায় এবং আর্থিক লাভের কারণে চাষিদের মধ্যে লটকন চাষে আগ্রহ বাড়ছে।
নরসিংদী লটকন ফল দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে রপ্তানি হচ্ছে। যা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জেলার বেলাব, শিবপুর, মনোহরদী, রায়পুরার আংশিক অঞ্চলে আবহাওয়া লটকন চাষে উপযোগী হওয়ায় লটকন ফল ভালো জন্মে। এ এলাকার লটকন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অ লের চাহিদা মিটিয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে রপ্তানী হচ্ছে।
বেলাব উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুজিত বর্ণিক রাকেশ ও ফাতেমা বেগম জানান, এ উপজেলায় ২০৫ হেক্টর জমিতে লটকন চাষ হলে ও ১৮৫ হেক্টর জমি থেকে লটকন উৎপাদন হচ্ছে। চলতি মওসুমে উপজেলায় প্রায় ৩৫শ মেট্রিকটন লটকন উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে, যার আনুমানিক দাম ৬ কোটি টাকা।
নরসিংদীর উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমা লের সুউচ্চ গৈরিক বা লাল রঙের মাটিতে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য খনিজ উপাদান বিদ্যমান থাকায় এ মাটিতে লটকনের উৎপাদন ভালো হচ্ছে। স্বাদে-গন্ধে হচ্ছে মিষ্টি এবং আকৃতিতেও হচ্ছে বড় বড়। নরসিংদীর রায়পুরা, শিবপুর, বেলাব, মনোহরদী উপজেলার শত শত চাষি বর্তমানে লটকন বিক্রি করে অর্থনৈতিক সাফল্য ফিরিয়ে আনছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বেলাব উপজেলায় সবচেয়ে বেশি লটকনের বাগান রয়েছে আমলাব ইউনিয়নে। ২৫ বছর আগেও লটকনের বাগান ছিল না। তখন অন্যান্য ফলগাছের সাথেই দু-একটি গাছ লাগানো হতো। লটকন চাষিরা জানান, পূর্বসময়ে লটকনের তেমন চাহিদা ছিল না, দামও ছিল কম, সে কারণে কেউ লটকনের বাগান করার চিন্তা করত না। বর্তমানে চাহিদা ও মূল্য দু’টিই বেড়েছে।
পাহাড় উজিলাব গ্রামের লটকন চাষি মো. বিপ্লব মিয়া বলেন, একটি পূর্ণবয়স্ক লটকন গাছে ৫ থেকে ১০ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। অন্য ফসলের তুলনায় লটকনে উৎপাদন খরচ কম কিন্তু আয বেশী।লটকন চাষে রোগ বালাই তেমন একটা নেই। চাহিদাও প্রচুর, এসব কারণেই দিন দিন নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় লটকন চাষের প্রসার ঘটছে।আমার ৩০ শতাংশ বাগান থেকে এবছর ৮০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি।
অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার লটকনের দাম বেশি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. ঈসমাইল মিয়া বলেন, আমি প্রত্যেক দিন সকালে বিভিন্ন বাগান থেকে লটকন কিনে মরজাল বাজারে নিয়ে বিক্রি করি।লটকনের বাগান থেকে ৭০-৮০ টাকা করে কিনে বাজারে নিয়ে ১০০-১২০ টাকা ধরে বিক্রি করে থাকি। এবার লটকনের দাম বেশি। কিন্তু আবহাওয়া জনিত কারণে ফলন কম হয়েছে এজন্য দাম বেশি।
আমলাব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও লটকন বাগান মালিক মো. নুরল হাসান ভূইয়া বলেন,এই বছর ঘূর্ণিঝড় রিমালে লটকন বাগানের প্রচর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ বছর লটকন ফলন ভালোই ছিলো তবে আবহাওয়া অনুকুলে না থাকার কারনে কিছু গাছের ডালপালা ভেংঙে গেছে এমন কি গাছ ও উপড়ে পড়েছে,যার কারনে ফল নষ্ট হয়েছে। যার প্রভাবে লটকনের দাম গত বছরের তুলনায় বেশী হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাজিম-উর-রউফ খাঁন জানান, এ বছর উপজেলায় প্রায় ২০৫ হেক্টর জমিতে লটকন চাষ হলেও ১৮৫ হেক্টর জমি থেকে লটকন উৎপাদন হচ্ছে।এ মওসুমে এখানে প্রায় ৩ হাজার ৫ শত মেট্রিক টন লটকন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।যার: বাজার মূল্য ৬ কোটি টাকা। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ হতে২ সার্বক্ষণিক কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতার করে আসছি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন