নরসিংদী ৪টি আসনে উত্তপ্ত ভোটের মাঠ, বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে কঠোর প্রশাসন
নরসিংদীর ৫টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৪টিতেই আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী ও একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বাক যুদ্ধ ছিল চোখে পড়ার মত। ৫টি আসনে ৩৭ জন প্রার্থী অংশ নিলেও ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামীলীগের নৌকার প্রার্থীদের মধ্যে হবে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
এসব বাক যুদ্ধ ও নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গের দায়ে ২ জন প্রার্থীসহ বিভিন্ন সারির ১১ জন নেতাকে শোকজ করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। তাছাড়া দুই ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তারও করা হয়। এছাড়া নির্বাচনকে ঘিরে জেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ২০ টি স্থানে ভাংচুর ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে।
ভোটারদের মধ্যে টাকা বিতরণের ঘটনাও ঘটেছে। যা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। টাকা ছড়ানোর ভিডিওর তালিকায় আছেন শিল্পমন্ত্রী নুরল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন ও নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনের প্রার্থী ও সাবেক সাংসদ সিরাজুল ইসলাম মোল্লার ভাগিনা হুমায়ুন আফ্রাদ।
নিজের প্রভাব ধরে রাখতে নির্বাচনী প্রচারণায় সভায় হত্যা, মাদক ও অস্ত্রসহ বিভিন্ন মামলার আসামী ও অস্ত্র হাতে নিয়ে প্রার্থীদের সাথে প্রচারণায়ও অংশ নিতে দেখা গেছে অনেককে। এসব ঘটনা বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর প্রশাসন থেকে শুধু শোকজ করা হয়েছে।
নরসিংদী জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৭০ জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও কোনো অস্ত্র উদ্ধার হয়নি।
নরসিংদী-১ (সদর):
নরসিংদী সদর-১ আসনে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ নজরল ইসলাম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরজ্জামান কামরল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়ায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমন, সাবেক জেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক এসএম কাইয়ুম, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগাঠনিক সম্পাদক আনোয়ারকে শোকজ করা হয়েছে।
অপরদিকে নৌকার লোক পলানোর সুযোগ পাবে না বলায় ঈগল মার্কার সমর্থক ও মাধবদী থানা আওয়ামীলীগের আহবায়ক সিরাজুল ইসলামকে শোকজ করা হয়। এছাড়া নৌকার প্রার্থীর ক্যাম্পের সামনে ২টি নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপনের অভিযোগে চিঠি দেয়া হয় ২৭ ডিসেম্বর। কিন্তু একটি ক্যাম্প সরিয়ে নিলেও অন্যটি নেননি স্বতন্ত্র প্রার্থী।
স্থানীয়রা বলছেন, চরাঞ্চাল আলোকবালী ও চরদিঘলদিতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হতে পারে বিবাদমান গ্রুপগুলোর মধ্যে।
নরসিংদী-২ (পলাশ):
নরসিংদী-২ (পলাশ) আসনে আ.লীগ প্রার্থী ও তার নেতা-কর্মীদের বিরদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগাা, ভয়ভীতি, হুমকি, পোস্টার পুড়ানো ও ছিড়ে ফেলা ও তার এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী এ.এন.এম রফিকুল ইসলাম সেলিম। গত শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জিনারদী ইউনিয়নের গয়েশপুর গ্রামের তার বাসভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী।
নরসিংদী-৩ (শিবপুর)
এ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থীকে হুমকি দেয়ার অভিযোগে স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম মোল্লাকে শোকজ করা হয়েছে। তাছাড়াও সিরাজুল ইসলাম মোল্লার সমর্থক ও জয়নগর ইউপি চেয়ারম্যান নাদিম সরকারকে ৭ হাজার দেশীয় অস্ত্র প্রস্তুত রাখার হুমকি দেয়ার অভিযোগে শোকজ করা হয়।
এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভাগিনা হুমায়ুন আফ্রাদের বিরদ্ধে নারী ভোটাদের মধ্যে টাকা ছড়ানোর অভিযোগ উঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে নৌকার প্রার্থীর বিরদ্ধে দফায় দফায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচারণা ক্যাম্প ভাংচুর, কর্মীদের মারধর ও হামলার অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
ভোটাররা বলছেন, দুই পক্ষই মুখোমুখী হওয়ার কারণে এখানে ভোটের লড়াইয়ের পাশাপাশি সহিংসতা হতে পারে। গত জাতীয় নির্বাচনেও এখানে একজন এজেন্টকে গলা কেটে হত্যা করা হয়।
নরসিংদী-৪ (বেলাব-মনোহরদী):
এ আসনে শিল্পমন্ত্রী নুরল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের ভাই খায়রল মজিদ মাহমুদ চন্দন ও তাদের সমর্থিত দৌলতপুর ইউনিয়নের ছাত্রলীগের আহবায়ক নাদিম মাহমুদ কর্তৃক স্বতন্ত্র প্রার্থীকে হুমকি দেয়ার অভিযোগে শোকজ করা হয়েছে। পরে গ্রেপ্তার হয় ওই ছাত্রলীগ নেতা। এখানে নির্বাচনের আগে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের নামে একাধিক মিথ্যা মামলা ও হামলার অভিযোগে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোহরদী উপজেলা পরিষদের ৫ বারের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান বীর। তিনি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। মন্ত্রী পরিবার তাদের আধিপত্য ধরে রাখতে সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ নিতে পারেন। ফলে এখানে ভোটের পরিবেশ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন ভোটাররা।
নরসিংদী-৫ (রায়পুরা):
নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) আসনের ১৬৭ ভোট কেন্দ্রের মধ্যে প্রশাসন ৯৩ টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। অন্যান্য আসনের তুলনায় এখানে অধিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এ আসনে নৌকার প্রার্থী ও টানা পাঁচ মেয়াদের সাংসদ ও সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর বিরদ্ধে শক্ত অবস্থানে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী। গত ইউপি নির্বাচনে হেরে যাওয়া ২৪ টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় অধিকাংশ প্রার্থী ও সাবেক চেয়ারম্যানকে মিজানের সাথে প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা গেছে। সঙ্গে রয়েছেন মনোনয়ন বি ত আওয়ামী লীগের অন্য নেতারাও।
জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা ড. বদিউল আলম বলেন, “ইতিপূর্বে ঝামেলা হয়েছে, এমন কেন্দ্রগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করে সেখানে বিশেষ গুরত্ব দেয়া হচ্ছে। এরমধ্যে শুধু রায়পুরায় (নরসিংদী-৫) ৬ প্লাটুনসহ মোট প্রশাসনের প্রায় অর্ধেক বিভিন্ন স্তরের প্রশাসন কাজ করবে। যেখানে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে সেখানে ভোট নেয়া বন্ধ করে শক্ত হাতে প্রতিরোধ করা হবে। ভোট আগে থেকে যেন না মারতে পারে, সেজন্য সকালে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এটা সত্য যে, চরা লে প্রায় দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব হয়ে থাকে। তাদের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অন্য সেন্টারগুলোর তুলনায় পুলিশ বেশি মোতায়েন করা হবে। এটাও ঠিক যেহেতু জাতীয় নির্বাচন, অন্য সময়ের তুলনায় কম তুলনামূলক কম প্রশাসন বরাদ্দ পাবো, তবে সব মিলিয়ে সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পূর্ণ হবে।”
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন