নাটোরের গুরুদাসপুরে অবৈধ ইট ভাটায় অভিযান, ২৮ লাখ টাকা জরিমানা
অনুমোদন নেই, অথচ পৌর সদর ও ইউনিয়ন পর্যায়ের ১১টি ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। এসব ভাটার সব ক’টিই আবাসিক এলাকা ও কৃষি জমিতে গড়ে ওঠেছে। সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে প্রায় দুই যুগ ধরে গুরুদাসপুরে অনুমোদন ছাড়াই এসব ইট ভাটার কার্যক্রম চলে আসছে।
লাইসেন্স ছাড়াও কাঠ পোড়ানো এবং শিশুদের কাজ করানোর অভিযোগও রয়েছে কোনো কোনো ইট ভাটার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল রোববার দিনভর ৯টি ভাটায় অভিযান চালিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা আক্তারের ভ্রাম্যমান আদালত। এসময় কোনো ভাটাতেই লাইসেন্স এবং পরিবেশের ছাড়পত্র পাওয়া যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে- গুরুদাসপুর পৌর শহরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার চাঁচকৈড় মধ্যমপাড়া মৌজাতেই রয়েছে জুমির উদ্দিন মন্ডলের মেসার্স এমজেডবি ব্রিকস, জাকির হোসেনের মেসার্স এসএআর ব্রিকস, আমজাদ-মফিজের মেসার্স এএমবি, জাহিদ হোসেনের মেসার্স এমডিবি ব্রিকস, মোশারফ হোসেন হাজির মেসার্স এমবিপি ব্রিকস, টগরের মেসার্স একেবি ব্রিকস, জহুরুল-বিপ্লবের মেসার্স এমএমবি ব্রিকস নামের ৭টি অনুমোদনহীন অবৈধ ইট ভাটা রয়েছে।
এছাড়া উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের শিকারপুর মৌজার ফসলি জমিতে আব্দুল কাদের হাজির মেসার্স এইচকেবি ব্রিকস, হাজি বাদশার মেসার্স এইচবিবি ব্রিকস, আব্দুল হাকিমের মেসার্স এইচআরবি ব্রিকস, আব্দুর রহিমের মেসার্স এআরবি ব্রিকস নামের অনুমোদনহীন চারটি ইটভাটা রয়েছে। তবে উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের কান্দিপাড়া-চিতলাপাড়া মৌজায় জাহিদ হোসেনের এমডিপি ব্রিকস এবং নাজিরপুর ইউনিয়নের একটি ভাটার অনুমোদন রয়েছে। এই দুটি ইট ভাটাও ফসলের জমিতে গড়ে উঠেছে।
নাটোর পরিবেশ অফিসের সহকারি পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন- মূলত কৃষি অফিস থেকে এক ফসলি জমির প্রত্যায়ণ পাওয়ার পরই তারা দুটি ইট ভাটাকে পরিবেশের ছাড়পত্র দিয়েছেন। অন্যরা অনুমোদন ছাড়াই ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজ করছেন।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে- গুরুদাসপুর পৌর সদরের ৫টি ও মশিন্দা ইউনিয়নের ৪টি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ২৮ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তবে সময় স্বল্পতার কারণে পৌর সদরের জাহিদ হোসেনের মেসার্স এমডিবি ও জহুরুলের মেসার্স এমএমবি ব্রিকস নামের দুটি ইটভাটায় অভিযান দেওয়া সম্ভব হয়নি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন- প্রতি বছরই এসব অবৈধ ইটভাটায় ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। বছরের পর বছর পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের দায়সারা এসব অভিযানের পরও দিব্যি ইটভাটাগুলো চলছে। ইটভাটার বিরূপ প্রভাব পড়ছে ফসলের মাঠে। আবার পর্যায়ক্রমে কৃষি জমিগুলোও বিভিন্ন কৌশলে ইটভাটাগুলোর অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে। তারা অবৈধ এসব ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবি জানান।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০১৯-এ বলা হয়েছে, আবাসিক, সংরক্ষিত, বাণিজ্যিক এলাকা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা সদর, সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান, জলাভূমি, কৃষি জমি, প্রতিবেশ গত সংকটাপন্ন এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। অথচ সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গুরুদাসপুর পৌর সদর এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের কৃষি জমিতে ১৩টি ইটভাটায় মাটি পুড়িয়ে নিয়মিত ইট প্রস্তুত করা হচ্ছে।
তবে অবৈধ এসব ইটভাটার পক্ষে গুরুদাসপুর ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মোশারফ হাজি বলেন, ইটভাটার জন্য পরিবেশের ছাড়পত্র না দেওয়ায় তারা লাইসেন্স নবায়ন করতে পারছেন না। তাছাড়া তারা ব্লক ইট প্রস্তুতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা আক্তার বলেন- গুরুদাসপুর পৌর সদরসহ উপজেলায় মোট ১৩টি ইটভাটার মধ্যে ১১টির-ই লাইসেন্স নেই। প্রাথমিকভাবে এসব ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়েছে। খুব শিগগিরি অবৈধ এসব ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন