নাটোরের গুরুদাসপুরে টাইলস শ্রমিকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ সহকারী প্রকৌশলী ছালমা খাতুনের নামে শ্রমিকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।
মজুরীর টাকা পেতে শ্রমিক লিটন শেখ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। কিন্তু অভিযোগ দেওয়ার ১৯ দিন পার হলেও এখনও কার্যক্রর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ন্যায় বিচার ও ঘাম ঝড়ানো টাকা পাবে কিনা এ নিয়ে সঙ্কায় রয়েছে ওই শ্রমিক।
শ্রমিক লিটন শেখ জানান, আমি একজন টাইলস মিস্ত্রি। পরিবারের তিনটি মেয়ে আর স্ত্রী রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় দিনমজুরী করেই আমার সংসার চলে। আনুমানিক দেড় মাস আগে গুরুদাসপুর উপজেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ সহকারী প্রকৌশলী ছালমা খাতুন আমাকে ১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টাইলস বসানোর কাজের কথা বলে। পূর্বে একজন হেড মিস্ত্রি ১১টি বিদ্যালয়ে ২৫০০ টাকা করে কাজ করেছে।
আমি ১৮০০ টাকায় করার কথা বললে তিনি আমাকে ১৯টি বিদ্যালয়ের কাজ করতে বলেন। টাইলস তিনি ক্রয় করে দেন। ১৯টি বিদ্যালয়ের কাজ সম্পন্ন করার পর আমাকে কিছু টাকা পরিশোধ করে। টাইলসের কাজের বাকি ৩২০০ টাকা ও ভ্যান ভাড়া বাবদ ১০০০ হাজার টাকা তার কাছে অফিসে চাইতে গেলে টাকা দিবেনা বলে আমাকে জানায়। অনেক অনুরোধ করেছিলাম, আমি গরীব মানুষ আমাকে আমার শ্রমের টাকাটা দিন। কিন্ত তিনি আরো আমাকে বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে। পরবর্তীতে আমি চলতি মাসের ৩ তারিখে আমার পাওনা টাকা ও ন্যায় বিচারের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। অভিযোগের ১৭দিন পার হলেও এখনও কোন সমাধান পাইনি আমি। আমি আমার ঘাম ঝড়ানো টাকা ফেরৎ চাই এবং তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আইনগত বিচার চাই।
গুরুদাসপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাবেক কর্মচারী মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, উপজেলার ৩২টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজ রাজশাহীর একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে হলেও ছালমা খাতুন নিজেই কাজ গুলো করেছেন। নিম্নমানের সামগ্রী অদক্ষ্য জনবল দিয়ে কাজগুলো করা হয়েছে। বিভিন্ন দোকান থেকে মালামাল ক্রয় করতে গিয়ে আমার নিজের পকেট থেকে ১৮ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। সেই টাকা ফেরৎ চাওয়ায় ছালমা খাতুন আমাকে বিভিন্ন অপবাদ দিয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি এমদাদুল হক বলেন, আমি শিকারপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। আমার প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিম্নমানের কাজ করা হয়েছে। এমনকি ইট ও বালু আমাদের দিতে হয়েছে। ইট বালুর টাকা দিবে বলে একাধিকবার হয়রানী করেছে ছালমা খাতুন। তাছাড়াও যে কাজ করেছে তা কয়েকদিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ইলেকট্রিক কাজও করা হয়নি। ছালমা খাতুনের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় পদক্ষেপের দাবীও জানান তিনি।
চাঁচকৈড় বাজারের বাচ্চু হার্ডওয়ারের সত্বাধিকারী মোঃ বাচ্চু জানান, বেশ কিছুদিন আগে আমার দোকানে এসে গুরুদাসপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ সহকারী প্রকৌশলী ছালমা খাতুন ও কর্মচারী রফিকুল ইসলাম ৩৮ হাজার টাকার টাইলস ক্রয় করে নিয়ে গিয়েছেন।
এ বিষয়ে উপ সহকারী প্রকৌশলী ছালমা খাতুন জানান, কোন শ্রমিক আমার কাছ থেকে টাকা পাবে না। যে অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে করা হয়েছে তা সম্পন্ন মিথ্যা। আর প্রধান শিক্ষক এমদাদুল হক যে অভিযোগ করেছেন সেটি তার প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি যদি নিজ তহবিল থেকে টাকা খরচ করে থাকেন তাহলে ঠিকাদারের কাছ থেকে তাকে টাকা নিয়ে দেওয়া হবে।
এছাড়াও নিম্নমানের কাজের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আমাকে কিছু বলেনি। ঠিকাদারী কাজের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন আমি নিজে কোন কাজ করিনি। এছাড়াও আমার অফিসের সাবেক কর্মচারী আমার কাছে যে টাকা পাওনার অভিযোগ করেছে তা সঠিক নয়। অফিস থেকে চলে যাওয়ার পর তিনি এমন ভুল্য তথ্য দিচ্ছে। তাছাড়াও টাইলস এর দোকানে গিয়ে তিনি নিজে উপস্থিত থেকে টাইলস ক্রয়ের বিষয়টিও অস্বীকার করেন।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রাবণী রায় অভিযোগ পাওয়ার বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর লিখিত ব্যখ্যা চেয়ে তার কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আশা করছি অতি দ্রুত সময়ের মধ্যেই এর সমাধান হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন