নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন: সরে দাঁড়ালেন বিএনপির ৩ নেতা, থাকলেন তৈমুর
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল করা থেকে সরে এসেছেন বিএনপির সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ও মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান।
বুধবার সকালে গণমাধ্যমকে মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন নির্বাচন না করার কথা জানিয়েছেন।
আর সংবাদ সম্মেলন করে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
এছাড়াও স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালও তার মনোনয়ন জমা দেননি।
সেক্ষেত্রে বিএনপির একক স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রইলেন হেভিওয়েট প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার।
এর আগে রোববার (১২ ডিসেম্বর) নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিস থেকে মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন আকরাম হোসেন খান ও মাজেদুল ইসলাম। আর ৫ ডিসেম্বর জেলা নির্বাচন অফিস থেকে সাখাওয়াত হোসেন নিজে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। তাদের দুইজনেরই মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল।
বুধবার ছিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। এ দিন সকালে মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ও দুপুরে শাখাওয়াত হোসেন নির্বাচন থেকে সরে আসার ঘোষণায় সিটি নির্বাচনে নয়া আমেজ বইতে শুরু করছে।
মেয়র পদে অন্য প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভী, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি মনোনীত প্রার্থী মো. রাশেদ ফেরদৌস সোহেল মোল্লা, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মুফতি মাসুম বিল্লাহ, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও জেলার সভাপতি এবিএম সিরাজুল মামুন, খেলাফত আন্দোলনের মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, জয় বাংলা নাগরিক কমিটির মনোনীত প্রার্থী কামরুল ইসলাম বাবু।
সব কিছু ঠিক থাকলে মেয়র পদে লড়াইটা জমবে বর্তমান মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ অ্যাড তৈমুর আলম খন্দকারের সঙ্গেই। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবেন আইভী। আর তৈমুর স্বতন্ত্র প্রার্থী, তার ভাষ্য- আমার মার্কা জনগণ।
এবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট ভোটার সংখ্যা রয়েছে ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৪, মহিলা ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১৯ ও তৃতীয় লিঙ্গের ৪ জন ভোটার। ভোট গ্রহণের জন্য মোট কেন্দ্র রয়েছে ১৮৭টি এবং এর মধ্যে ভোট কক্ষ ১ হাজার ৩০১টি। এছাড়া অস্থায়ী ভোটকক্ষের সংখ্যা ৯৫টি। এবার নতুন ভোটারের অধিকাংশই তরুণ।
তফসিল অনুযায়ী, ২০ ডিসেম্বর নাসিক নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বাছাই, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৭ ডিসেম্বর। আর ভোটগ্রহণ ১৬ জানুয়ারি।
কৌশল অবলম্বন করছে বিএনপি: তৈমুর
নাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমুর আলম খন্দকার। বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিসে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর আগে রোববার তিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।
মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে উপদেষ্টা তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, বিএনপি অনেক বড় একটা দল। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক বিএনপি। এই বিএনপিকে অনেক কৌশল অবলম্বন করে চলতে হয়েছে। গত জাতীয় নির্বাচনে আপনারা দেখেছেন আমাদের অনেক প্রার্থীকে জেলখানায় থাকতে হয়েছে। অনেক প্রার্থীর বাড়িঘর লুটপাট করা হয়েছে, অনেককে পেটানো হয়েছে। যাদের পেটানো হয়েছে তাদের মামলা পুলিশ নেয়নি। তাদের গায়েবি মোকদ্দমা দিয়ে বাড়িঘর ছাড়া করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে বিএনপিকে চলতে হয়েছে কিন্তু বিএনপি কখনও কম্প্রোমাইজ করেনি। আন্দোলন সংগ্রামের স্বার্থে বিএনপি কাজ করে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দল পৃথিবীর সব জায়গায় কৌশল অবলম্বন করে। আমরা আমাদের অবস্থানে এগিয়ে যাচ্ছি। সময়মত আপনারা বুঝবেন আমাদের অবস্থানটা কী। দল জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে।
তৈমুর দাবি করেছেন যারা সরে গেছেন তাদের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে।
বিএনপির নির্বাহী সদস্য সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন, মহানগর বিএনপির সেক্রেটারি এটিএম কামাল, সহ-সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান মনোনয়নপত্র জমা দেননি। এর মধ্যে কামাল ছিলেন তৈমুরের সঙ্গে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়। সাখাওয়াত সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। আর গিয়াসউদ্দিনের দাবি তিনি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে নির্বাচনে থাকছেন না।
১৫ ডিসেম্বর দুপুরে তৈমুর মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে বলেন, আমরা সবাই একসঙ্গে আছি। একজন প্রার্থী কামাল নিজেই এখানে আছেন। আমরা সবাই ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন করছি। এখন পর্যন্ত বিএনপির একমাত্র আমিই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। মহানগরের নেতারা যারা আছেন এবং উপজেলার সেক্রেটারি বন্দর থানার প্রেসিডেন্ট সবাই আমার সাথে আছে।
তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহর হতে হবে বায়ুদূষণ ও জলাবদ্ধতা মুক্ত শহর। এ শহরে মানুষ নিরাপদে চলাচল করবে, রাস্তা হবে পরিষ্কার। সকল নাগরিক সুবিধা নগরবাসী পাবেন। আমরা ২০০২ সালে যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম সে প্রস্তাবের ভিত্তিতে আমরা একটি সুন্দর সিটি করপোরেশন হিসেবে নারায়ণগঞ্জকে তৈরি করতে চাই।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুর সবুর খান সেন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপু, বিএনপির সিনিয়র নেতা জামাল উদ্দিন কালু, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ।
তফসিল অনুযায়ী, ২০ ডিসেম্বর নাসিক নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বাছাই, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৭ ডিসেম্বর। আর ভোটগ্রহণ ১৬ জানুয়ারি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন