নারীর যৌন ক্ষুধা কি থাকতে নেই?
রুবাইত হাসান : ক্ষুধা মেটাবার জন্য আমরা কত কিছুই না করি। হয়তো এই ক্ষুধার যন্ত্রণা না থাকলে মানুষ কাজ-কর্মই করতেন না আমি নিশ্চত ।কেউ এই ক্ষুধা মিটাবার জন্য চুরি করছে। কেউ বা ছ্যাঁচড়ামি করছে। কেউ অফিসে কাজ করে। কেউ আদালতে।এমন অনেক কিছুই করছে এই ক্ষুধার জন্য। অর্থাৎ ক্ষুধা মেটানোটা মানুষের মৌলিক একটি অধিকার। সে যেভাবেই হোক ক্ষুধা মেটাবেই।
এই ক্ষুধার মতোই যৌনতাও একটি ক্ষুধা। এটি অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। তবে এই ক্ষুধাটা কেউ ঢাক-ঢোল পিটিয়ে মেটায় না। বিশেষ করে বাঙালি সমাজ। কারণ, আমরা পেটে ক্ষুধা আর মুখে এক বিশাল লজ্জা ভাব নিয়ে বসে থাকতেই ভালোবাসে। আমাদের লজ্জা কিঞ্চিৎ বেশি। তাই বলে ভুখা থাকে? না। যেভাবেই হোক ক্ষুধা নিবারণ সে করবেই, করবে।আপনি এই লেখাটি পড়ছেন আর হয়তো মুচকি মুচকি হাসছেন….. কিন্তু নিজেকে প্রশ্ন করে দেখেন অস্বীকার করতে পারবেন না ব্যাপারটা!
আমাদের সমাজ যৌন ক্ষুধাটা কখনোই ভালো চোখে দেখে না, কিংবা পূর্বেও দেখেনি ।সমাজ বুঝতেও চায় না, প্রতিটি জীবনের অন্যতম একটি চাহিদার একটি যৌন-কাম-বাসনা। একে বাদ রেখে জীবন ধারণ অসম্ভব। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই ক্ষুধার জন্য পুরুষের বেলায় কিছু যায় আসে না। যখন-তখন ইচ্ছে হলেই তারা পতিতালয়ে যেতে পারে,বা অন্য কোন উপায়ে অন্যত্র মিটিয়ে নিতে পারে। আর নারীর বেলায় যত দোষ নন্দ ঘোষ। আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে ,দৌলতিয়া সহ বেশ কয়েকটি স্পটে সরকার অনুমোদিত বেশ্যালয় রয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার পুরুষ তাদের যৌন ক্ষুদা নিবারণের জন্য এসব স্পটে গিয়ে থাকেন, এর মধ্যে সমাজের সেই নামীদামী সুশীল ব্যক্তিও থাকেন। তবে নারীরা এরা যাবে কোথায়?
আমাদের পুরুষ সমাজের এমন একটা ভাব, যেন নারীর যৌন চাহিদা থাকতে নেই! তাদের এসব থাকবে কেন? তারা কেবল পুরুষের জন্য! পুরুষ চাহিবা মাত্রই নারীকে স্বীয় বিছানায় আসতে হবে, শুতে হবে ইচ্ছে বা অনিচ্ছায়! পুরুষের তৃপ্তি মেটানোটাই যেন নারীর একমাত্র কাজ! নারী তৃপ্ত হোক বা না হোক তাতে কিছু আসে যায় না। নারী যেন মানুষ নয়। তার যেন কোন চাওয়া নেই। তার কিছু পেতে নেই!
এই সমাজে হাজার হাজার নারী আছে, যারা স্বামী দ্বারা যৌন-কাম-বাসনায় তৃপ্ত নন। তারপরও তারা স্বামীর সাথে থাকছেন। সন্তান জন্ম দিচ্ছেন। কেউ কেউ বলতে পারেন, স্বামী যদি যৌন-অক্ষম হবে, তাহলে সন্তান জন্ম দিল কিভাবে? আচ্ছা আপনি কী জানেন ,যৌন সঙ্গম ছাড়াও এখন বাচ্চা হয়, আরো একটা সহজ কথা বলি মেডিকেল সাইন্স বলে, কোন ভাবে যদি নারীর …..ভীতরে বাচ্চা প্রদানে সক্ষম বীর্য প্রদান করা হয় সে নারী গর্ভবতী হয়ে যাবে। তো যাইহোক বাচ্চা জন্ম দিতে পারছে তাহলে আবার যৌন অক্ষম কী করে? এমন প্রশ্ন যারা করবেন, এই লেখাটি তাদের জন্য নয়। এই লেখার ভাবার্থও তারা বুঝবেন না। সুতরাং তার প্রশ্ন তো দূরের কথা, লেখাটি পড়া থেকেও বিরত থাকুন।
আমার ছেলে বন্ধুর চেয়ে মেয়ে বন্ধুর সংখ্যাটাই একটু বেশি ছিল এখনও আছে। আর এরা প্রত্যেকেই আমার থেকে অনেকটা সিনিয়র। তবে এরা কেউ নাস্তিক, মুক্তমনা বা অত্যাধুনিক নন। তবে তারা মানুষ। ভীষণ রকমভাবে ভালো মানুষ। এ লেখায় এদের মধ্য থেকে দু’জনের বর্ণনা তুলে ধরছি ছদ্ম নাম ব্যবহার করে।
শ্রেয়া : উচ্চ শিক্ষিতা ও চোখ জুড়ানো সুন্দরী সে। বিয়ে হওয়ার এক বছর পর্যন্ত খুব ভালো ছিল সে। তার স্বামীর প্রতি তার কোন অভিযোগ ছিল না। স্বামী খুবই ভালো মানুষ, এখনও। তার বিবাহিত জীবনে একটি মেয়ে সন্তান এসেছে। সন্তান জন্মাবার পর থেকেই তার স্বামী তার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। তবে যৌন সম্পর্ক তাদের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু, শ্রেয়া হ্যাপি নন। তার স্বামীর কাছে যৌন চাহিদা মানেই নিজের তৃপ্তি। স্ত্রী তৃপ্ত হল কি না? সে খেয়াল তার নেই।
সে চায় তার স্বামী কাছে আসুক আগের মতো। কিন্তু, কিছুতেই চেনা স্বামীটিকে খুঁজে পায় না সে। যৌনতা মানেই যে বীর্য নির্গমন নয়, যৌনতাও যে একটি আর্ট, সেটা তার স্বামীর মধ্যে একবিন্দুও নেই। বেশ ক’বার ভেবেছিল সংসার ছাড়বে। পারেনি, নিন্দাকাটার ভয়ে। আবার এ-ও চেয়েছে, অন্যত্র সম্পর্ক করে কিছুটা সুখী হতে। তা-ও পারেনি। সে পারেনি তার স্বামীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে। তবে কয়েকবার সম্পর্ক করেছিল সে। সেটা আর দেখা বা কাছে যেতে পারেনি। বিবেক আটকে দিয়েছিল। ফিরে এসেছিল সে। রিক্তা এখনও আছে হাসি হাসি মুখ নিয়ে। ফেসবুকে একের পর এক সেলফি আপলোড করে হাসি মুখে। দেখে সবাই ভাবে তার মতো অমন সুখী আর কেউ নেই!
মৌটুসি : সে তার বিবাহিত জীবনের দশ বছরে তার স্বামীর কাছ থেকে ১ থেকে দেড় মিনিটের বেশি যৌন সুখ উপভোগ করতে পারে নি। অথচ এই মৌটুসিকে ভালোবেসে এক ব্যবসায়ী তার জীবনের পুরো সময়টাই সিঙ্গেল হয়ে রইলেন। কিন্তু এরপরও মিতা তার সংসার ছাড়তে পারেনি। মৌটুসি আমার আট বছরের সিনিয়র । লেখা লেখি করতে মৌটুসির ভীষন রকম ভাল লাগে। লেখকদের একটি অনুষ্ঠানে মৌটুসির সাথে পরিচয় হয় আমার ।গত বছর থেকে মৌটুসি আমার খুব ভাল একজন বন্ধু।
বৃষ্টি : ক্যাম্পসের বড় আপু। ক্যাম্পাসে আমার যতগুলো বন্ধু রয়েছে বলা যেতে পারে বৃষ্টি তাদের মধ্যে অন্যতম। যখনই ওর সাথে থাকি, খেয়েছি কী না? আর বাসায় আমার বাবা মা কেমন আছে ওর সাথে দেখা হবার পর ওর প্রথম কথা এটাই হয়ে থাকে ।ভীষন সুন্দরী মেয়েটা সেই সাথে ভীষন রকম ভালো একটা মেয়ে। ওর বিয়ে হয়েছে দুবছর হলো, মজার ব্যাপার হচ্ছে এ লেখাটা যখন লিখছি, তখন বৃষ্টির একটি মেসেজ পেলাম,
B : Rubait ki koro?
R : tomay niye likhchi . tumi ki koro?
B : tomay niye vabchi.
R : its ok .pore kotha hobe.
ও কিন্তু বুঝেনাই আমি এসব লিখছি।
একটা ব্যাপার লক্ষ্য করবেন আমার ফেসবুক পোষ্ট বা ফটোতে মেয়ের কমেন্ট লাইক আপনি দেখতে পাবেন না ।মাঝে মধ্যে দু/একটা করেই ফেললে ওভাবেই থাকে। এটার অবশ্য একটা রহস্য আছে ।এ নিয়ে লিখবো আরেকদিন। বৃষ্টির স্বামী সেনা বাহিনীর একজন জুনিয়র অফিসার, তার এই সৈনিক স্বামী থাকে দেশের সীমান্তবর্তী কোন একটা জায়গায়। ছুটির ঘন্টা বাজলেই কেবল আসে। আর ঘন্টা বাজলেই আবার চলে যেতে হয় তাকে।বৃষ্টির মতামত বিয়ের আগেই ও ভালো ছিল ।এখন আর ভাল লাগেনা । বিশেষ করে রাতে লোনলি ফিল হয় তার । আমি যদিও বৃষ্টিকে সময় দেয় তারপরও ওর আবদার……..
শুধু শ্রেয়া, মৌটুসি, বৃষ্টি নয় আমাদের চারপাশে অনেক নারী আছেন, সমাজ-সংসার আর নিন্দার কাটার ভয়ে দিনের পর দিন এই যৌন-ক্ষুধায় কষ্ট করছেন। যৌন সুখ কী? তা এখনও অনুধাবন করতে পারেনি। হাজার ইচ্ছে থাকলেও তারা শৃঙ্খল ভাঙতে পারছে না। কেউ কেউ ভাঙলেও অনেকে মুখ বুঝে সহ্য করে যাচ্ছেন আর ‘ভালো আছি’ মার্কা একটা সাইনবোর্ড মুখে ঝুলিয়ে রাখেন। কারণ, নারী আজও পুরুষের মত এতটা স্বার্থপর হতে পারেনি।আগেই বলেছিলাম ছেলে বন্ধুর চেয়ে মেয়ে বন্ধু একটু বেশিই ।আর সত্যি কথা বলতে কী হয়ে গেছে এমন আমার নব্বই শতাংশ বন্ধু আমার সিনিয়র । কেউ পাঁচ, কেউ দশ অথবা আমার বিশ /ত্রিশ বছর সিনিয়র এমন অনেক ভাল এবং ক্লোজড বন্ধু রয়েছে। আমি একটা বিষয় নিয়ন্ত্রন করি আমার সাথে, রহিম /করিম বা শ্রেয়া /সাথীর সাথে আমার যে ভালো বন্ধুত্ব বা কতদূর ক্লোজড সেটা আমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।একটা সম্পর্ক ডিপেন্ট করে পারষ্পারিক শ্রদ্ধাবোধ, আন্ডারস্যান্ডিং, রিসপনস, বিশ্বাস ইত্যাদির উপর । যাইহোক লেখায় ফিরে আসি,
একজন নারী তার নিজের প্রয়োজন মেটানোর আগে দশবার ভাবে তাকে ঘিরে থাকা মানুষগুলোর কথা। সে ভাবে, তার সুখের জন্য আপনজনদের মাথা যেন নিচু না হয়। যার ফলে নারী সয়ে যেতে পারে, বয়ে যেতে পারে না পাওয়া যন্ত্রণাগুলো। তার ভেতরে দগদগে ক্ষতগুলো আড়াল করতে পারে সে মুখে মেক-আপ, স্নো, পাউডার মেখে সুখী সুখী হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে রেখে।
এবার বলুন তো, তাদের মত যদি পুরুষরা হতো। কোন পুরুষ যদি তার স্ত্রীর কাছ থেকে যৌন সুখ না পেতেন, তাহলে তিনি কী করতেন? নিশ্চয় ব্রোথেল কিংবা বান্ধবী অথবা দ্বিতীয় বিয়ে করতে নিশ্চয় দ্বিধা করত না? তাহলে কী দাঁড়ালো? নারীর তুলনায় পুরুষ ভীষণ রকম স্বার্থপর?
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন