নারীর স্বস্তির যাত্রা মেট্রোতে
ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ১০টা। মেট্রোরেলের শ্যাওড়াপাড়া স্টেশনের প্রথম কোচটি কানায় কানায় পূর্ণ। বসার জায়গা না পেয়ে যাত্রীদের অনেকে ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়েই গন্তব্যে যাচ্ছিলেন। কিন্তু এতেও যাত্রীদের মধ্যে কোনো বিরক্তি ছিল না। কারণ মেট্রোর এ প্রথম কোচটি শুধু নারী যাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত। মেট্রোর অন্য কোচগুলোতে নারীরা, পুরুষ যাত্রীর সঙ্গে যাতায়াত করতে পারলেও নারীদের চলাচল নিরাপদ, নির্বিঘ্ন এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বিশেষ এ ব্যবস্থা করেছে।
যা কর্মজীবী নারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও বয়সী নারীদের স্বস্তি দিয়েছে। কর্মজীবী নারী ছাড়াও নারী শিক্ষার্থীরাও দ্রুত এবং স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে মেট্রো ব্যবহার শুরু করেছেন। মায়েরা তাদের শিশু সন্তানকে স্কুলে নিতে এবং গৃহিণী ও বয়স্ক নারীরাও ধীরে ধীরে মেট্রোতে উঠতে শুরু করছেন। মেগাসিটি ঢাকায় কর্মজীবী নারীসহ বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণির নারী এবং তরুণীদের নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছাতে নানা ঝাক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়। ঢাকার গণপরিবহন নারীবান্ধব নয়। গণপরিবহনে নারী যাত্রীদের জন্য অল্প কিছু আসন সংরক্ষিত থাকলেও অফিস সময়ে প্রচ- ভিড়ে অনেক নারী-পুরুষ যাত্রীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে বাসেই ওঠার সুযোগ পান না।
আবার অনেকেই বাসে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির শিকার হওয়া এবং নিরাপত্তার ভয়ে একা বাসে ওঠার সাহস পান না। নারী যাত্রীদের জন্য রাজধানীতে বিআরটিসির কয়েকটি বাস চললেও এর কথা অনেকেই জানেন না। এ পরিস্থিতিতে ঢাকার গণপরিবহনে মেট্রোরেল নারী যাত্রীদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।
সম্প্রতি মেট্রোরেল ভ্রমণ করে দেখা যায়, মেট্রোরেলের বিভিন্ন স্টেশনে নারী যাত্রীদের ওঠার কোচটি যে স্থানে থামে সেখানে বিভিন্ন বয়সী নারী ও তরুণীরা অপেক্ষা করছেন। মেট্রো আসা মাত্রই তারা শৃঙ্খলা মেনে মেট্রোতে উঠছেন। শুরুর দিকে উত্তরা ও পল্লবী স্টেশনগুলোতে নারীদের কোচটিতে বসার জায়গা মিললেও শ্যাওড়াপাড়া ও কাজীপাড়া স্টেশনে যাওয়ার পর আর বসার জায়গা পাওয়া যায় না। এরপর অনেকটা গাদাগাদি করেই যাত্রীরা তাদের গন্তব্যে পৌঁছান।
এনজিও কর্মকর্তা সাবিনা আক্তার বলেন, আগে বাসে মিরপুর ১০ থেকে প্রেস ক্লাব আসতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা লাগত। এখন ১৫ থেকে ২০ মিনিটেই পৌঁছে যাই। মেট্রোতে ভিড় বেশি হলে বসার সিট না পেলেও খারাপ লাগে না। অন্য নারী যাত্রীদের সঙ্গে ধাক্কধাক্কি করেই মেট্রোতে গন্তব্যে পৌঁছাই। কিন্তু আগে বাসে এ যাত্রা এতটা স্বস্তির ছিল না। মেট্রো আসায় কর্মজীবী নারীদের অফিসে যাওয়ার ঝামেলা অনেকটাই কমেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান বলেন, আগামী ১৩ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনটির উদ্বোধন হবে। এতদিন পল্লবী থেকে সচিবালয় স্টেশনে নেমে তারপর রিকশায় ক্যাম্পাসে যেতাম। ঢাবি স্টেশনটি উদ্বোধনের পর নিজের ক্যাম্পাসেই নামতে পারব। ক্যাম্পাসের বাসে বা অন্য কোনো যানবাহনে যেতে অনেক সময় লাগে। কিন্তু মেট্রোতে চোখের নিমেষেই ক্যাম্পাসে পৌঁছে যেতে পারব। উত্তরা থেকে ষাটোর্ধ্ব নাসরিন আক্তার মেয়ে সামিরাকে নিয়ে যাচ্ছিলেন তার বোনের বাড়ি শ্যাওড়াপাড়ায়। কথা হলে তিনি জানান, এতদিন সিএনজিতে যেতেন, এখন মেট্রোতে করে প্রায়ই বোনের বাসায় বেড়াতে যান। নাসরিন বলেন, কখনো চিন্তাই করিনি- মাথার ওপর দিয়ে চলাচল করা কোনো ট্রেনে এত দ্রুত যাতায়াত করা যায়।
মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোর আলোকসজ্জা ও আধুনিক ব্যবস্থাপনাও এ বয়স্ক নারীর বেশ পছন্দ হয়েছে। নারীদের চলাচল নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে মেট্রোরেলের এ উদ্যোগে কর্মজীবী নারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারী এরই মধ্যে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। মেট্রোরেলে নারীদের ওঠানামার জন্য সংরক্ষিত গেট রয়েছে। এ গেটে ও প্ল্যাটফরমের ওপরে নির্দেশিকা রয়েছে। এ ছাড়াও মেট্রোর স্টেশনগুলোতে নারী যাত্রীদের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা রয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন