নারী রাইডার ও যাত্রীরা কতটা নিরাপদ?
সম্প্রতি শাহনাজ আক্তার পুতুল নামের একজন নারী রাইডারের বাইক ছিনতাইয়ের ঘটনায় তোলপাড় ছিল সামাজিক মাধ্যম। বাইক হারিয়ে যাবার ১৪ ঘন্টার মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের তৎপরতায় শাহনাজ ফিরে পান তার জীবিকার একমাত্র অবলম্বন বাইকটি। তবে এই আলোচিত বাইক হারানোর পর থেকেই নারী রাইডার ও যাত্রীদের ঘিরে তৈরি হয়েছে দুশ্চিন্তা। আসলে নারী রাইডার ও যাত্রী কতটা নিরাপদ রাজপথে?
কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নারী রাইডার বিষয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকে নারী রাইডারের বাইক চালনায় আস্থা রাখেন এবং তাদেরই প্রাধান্য দেন। অনেকের অভিযোগ, পুরুষ রাইডাররা নারী যাত্রীদের নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে সহজ পথে না গিয়ে কিছুটা ঘুরে গন্তব্যে যাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে তারা শুনছেন না যাত্রীদের কথা। এটাকে নারীরা একধরনের হয়রানির সাথে সাথে বেশি ভাড়া আদায়ের পায়তারা হিসেবেও দেখছেন। অপরদিকে নারী চালকদের দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেক পুরুষ যাত্রী। অনেকসময় রাইডার নারী জানলে, যাত্রী রাইড বাতিল করে দিচ্ছে বা দিতে বলছে।
বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত ফারাহ মাহজাবিন নামের এক যাত্রী বলেন: প্রথম যেদিন আমি যাত্রী হই সেদিন সমস্যা ছিলো আমি পুরুষ রাইডারের বাইকে কোথায় ধরে বসবো। একই সাথে বসা নিয়েও খুব বিব্রতবোধ করছিলাম। বাসে উঠলে একটা মেয়ের পাশে বসলে যেভাবে গা ঘেঁষে বসতে পারি। একজন পুরুষ বসলে সেভাবে বসতে পারি না। ঠিক একইভাবে একজন পুরুষ রাইডারের বাইকে উঠেও একই সমস্যায় পড়েছিলাম।
বেশিরভাগ সময়ই রাইডের অভিজ্ঞতা ভালো নয় উল্লেখ করে এই নারী বলেন: অনেকে খুব রাফ ড্রাইভ করে। অনেকে আবার গন্তব্যের সহজ পথটা ছেড়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে যায়। সেজন্য একজন নারী রাইডার পেলে সুবিধা হয় চলাচলে, সেক্ষেত্রে কমফোর্ট ফিল করা যায়।
তবে একজন নারী হিসেবে অরেকজন নারী বাইকারকে ঠিক কতটা দক্ষ চালক মনে করছেন সে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন: বাসা থেকে আমাকে স্কুটির কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু নিজের উপর যেহেতু আমি কনফিডেন্ট পাই না। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তার প্রশ্নটা থেকেই যায়। আর তাই একজন দক্ষ নারী চালক হলে এ বিষয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই।
ঠিক এর বিপরীত কথাটাই বললেন গণমাধ্যম কর্মী তানজীমা এলহাম বৃষ্টি। নারী রাইডারদের অনেক বেশি আস্থাশীল বলে মনে করেন তিনি। বৃষ্টি বলেন: নারীরা যতটা সতর্কতার সাথে বাইক চালায় পুরুষরা তা করে না। এখন পর্যন্ত কোনো নারী রাইডারের বাইক দুর্ঘটনার কথা শোনা না গেলেও পুরুষ ড্রাইভাররা প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছে। তাছাড়া নারীরা ট্রাফিক আইন মেনে সাবধানে বাইক চালানোয় যাত্রী হিসেবে নারী রাইডারদেরই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন তিনি।
তবে যাকে ঘিরে এত আলোচনা সেই শাহনাজ জানিয়েছেন নিরাপত্তাজনিত তেমন কোনো ঝুঁকি নেই এ পেশায় কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া তিনি বেশ সমর্থন পেয়েছেন সবার।
শাহনাজ আক্তার পুতুল বলেন: প্রায় ২ মাস ধরে স্মার্টফোনের অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং বাইক চালান তিনি। গল্পে গল্পে একদম শুরুর দিকের একটি ঘটনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন: প্রথম চারদিনের মাথায় একজন পুরুষ যাত্রী তাকে অফার করেছিলেন তার বাসায় গিয়ে লাঞ্চ করার। পরবর্তীতে সেই পুরুষের সাথে কথা বলে শাহনাজ জানতে পারেন সেই ব্যক্তি মেসে থাকেন এবং সেখানেই তাকে যাবার জন্য অনুরোধ করেছেন। এরপর শাহনাজ সেই যাত্রীকে বুঝিয়ে বলেন সে পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করছেন। পরবর্তীতে সেই পুরুষও এ ঘটনার জন্য ক্ষমা চায় শাহনাজের কাছে।
নারীদের কাছ থেকে অনেক অনুপ্রেরণা পান উল্লেখ করে এই নারী বলেন: নারীরা আমাকে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করে। তারাও আমার মত এ পেশায় আসতে চায় অনেকে। তবে যাত্রীরা কখনোই নিরাপত্তার বিষয়ে হুমকি নয় উল্লেখ করে শাহনাজ বলেন: একজন পুরুষ বাইক রাইডারের চাকরির প্রলোভনে পড়েই আমি নিজের ভুলে হারিয়েছিলাম আমার বাইকটি।শাহনাজের অনেক পার্মানেন্ট নারী যাত্রী আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আতিকা রোমা একজন নারী বাইকার, যিনি সড়কে মেয়েদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিতের তাগিদ থেকে ‘যাব বহুদূর’ নামে একটি সংগঠন পরিচালনা করেন। এই সংগঠনের মাধ্যমে মেয়েদের স্কুটি চালানোর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। আতিকা রোমা নারী বাইকারদের নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরে বলেন: বাংলাদেশে প্রচলিত এই অ্যাপসভিত্তিক রাইডগুলো আরো নারী বান্ধব করা উচিত। যৌন নির্যাতনের মত স্পর্শকাতর ঘটনা রোধে প্রাথমিক পর্যায়ে নারী রাইডারের প্যাসেঞ্জার নারীই হোক এ ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।নারী রাইডারদের ক্ষেত্রে অ্যাপসের বাইরে কোনো রাইড না দেয়া বা রাইডে না চড়ারও পরামর্শ দেন আতিকা রোমা। অ্যাপসগুলোতে যাত্রীর বিস্তারিত তথ্য ভালভাবে সংরক্ষণেরও পরামর্শ দেন তিনি।-চ্যানেল আই অনলাইন
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন