নায়ক হওয়ার জন্য বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন রাজ্জাক
বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়করাজ রাজ্জাকের মৃত্যুর পর তার বন্ধু-স্বজনরা বিভিন্নভাবে তাকে স্মরণ করছেন। কেউবা তার সঙ্গে কাটানো ছেলেবেলার স্মৃতি রোমন্থন করছেন। যার মধ্যদিয়ে বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী মনুষ শুধু নায়ক রাজ্জাক নন, ব্যক্তি রাজ্জাকের এক অন্যন্য সংগ্রামী জীবনের কাহিনী জানতে পাচ্ছেন।
অভিনয় ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান। অভিনয়কে ভালোবেসে ভয়াবহ দুর্বিষহ দিন কাটাতে হয়েছে তাকে। ছোটবেলা থেকে অভিনয় শুরু করলেও খ্যাতির দ্যুতি ছড়ায় অনেক পড়ে। রাজ্জাকের জন্ম হয় ১৯৪২ সালে ২৩ জানুয়ারি ভারতের কলকাতার টালিগঞ্জে। শৈশব-কৈশোর আর যৌবনের বেশ গুরুত্বপূর্ণ সময় কাটে কলকাতাকেই।
কৈশোরে আকস্মিকভাবে মারা যান রাজ্জাকের বাবা আকবর হোসেন। বাবার মৃত্যুর আট মাস পর মাকে হারিয়ে এক রকম এতিম হয়ে যান রাজ্জাক। শোক, সংকট আর আর্থিক দৈন্যের মধ্যে তার অভিনয় শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন তবুও নিভু-নিভু করে জ্বলতে থাকে।
নিজের অভিনয় প্রতিভা, শারীরিক গঠনে তাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল। একবার নায়ক হাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে মুম্বাই গিয়েছিলেন আজকের নায়ক রাজ। কিন্তু সেখানে সুবিধা করতে না পারায় ফের কলকাতায় ফিরে আসেন।
সম্প্রতি সেসব দিনের স্মৃতি রোমন্থন করেছেন নায়ক রাজ্জাকের বাল্যবন্ধু টি দাস ওরফে হিটলার। একসঙ্গে কলকাতায় কতই না দুষ্টামি করেছেন, মঞ্চ নাটক করেছেন, আর স্বপ্ন বুনেছেন দুই বন্ধু। সে সময় রাজ্জাকের চেহারা এতোটাই আকর্ষণীয় ছিল সিনেমার নায়ক না হয়েও পাড়ার তরুণীদের কাছে নায়ক হিসেবেই বিবেচিত হতেন। নায়ক হওয়ার জন্য বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন রাজ্জাক
হিটলার বলেন, রাজ্জাক ছিল আমাদের পাড়ার চকোলেট বয়। শারীরিক সৌন্দর্যের কারণে রাজ্জাক ছিলেন পাড়ার মেয়েদের হিরো। তিনি বলেন, আমরা একটা নাটকের ক্লাব বানিয়েছিলাম নব ঝংকার নাট্য সমিতি। পাড়ার মধ্যে প্যান্ডেল খাটিয়ে টিকিট কেটে আমরা নাটক করতাম। আমরা ৬ বন্ধু ছিলাম খুব অন্তরঙ্গ। লালজি, রণেন, পিলু আর প্রদীপ। আমরা ‘বিদ্রোহী’ নাটক করেছিলাম। পরে ‘দুই মহল’ নামে একটি নাটক নিয়ে আমরা কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে শো করেছি।
রাজ্জাকের এই বাল্যবন্ধু বলেন, সব নাটকের প্যান্ডেল থেকে সব খরচ ওই (রাজ্জাক) করত। আর নাটকের পর যথারীতি পাওনাদাররা ওর বাড়িতে গিয়ে হামলা করত। একবার হিরো হওয়ার জন্য রাজ্জাক ১৯৫৬ সালে পালিয়ে গেল মুম্বাইয়ে। আবার ফিরেও এলো। বাড়ির লোক তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিল লক্ষ্মীর সঙ্গে। ও খুব কষ্ট করেছে এক ছেলে নিয়ে, দিনের পর দিন। টালিগঞ্জে অভিনয় করেছিল, তবে সাইড রোলে।
রাজ্জাকের কলকাতা ছেড়ে চলে যাওয়াটা আজও মেনে নিতে পারেন না হিটলার। রাজ্জাকের মতো প্রাণবন্ত উচ্ছ্বল বন্ধুকে ভীষণ মিস করেছেন তিনি।
বন্ধুর স্মৃতি হাতড়ে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে হিটলার বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য, ১৯৬৪’র দাঙ্গায় ওকে মাতৃভূমি ছেড়ে চলে যেতে হলো। ওকে রাখতে পারলাম না। পাড়ার সব বাড়িতে ছিল ওর অবারিত দ্বার। আমাদের বাড়ি হিন্দু রক্ষণশীল পরিবার হলেও রাজ্জাক ঠাকুরঘরে ঢুকতে পারত। শুধু তাই নয়, আমার দিদিমা মরে যাওয়ার পর ও কাঁধে করে শ্মশানে নিয়ে গিয়েছিল’- যোগ করেন হিটলার।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন