নিজের খাটিয়া বানিয়ে আত্মহত্যা
বছর ষাটেকের প্রেমানন্দ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কালনা শহরের একজন বাসিন্দা। পেশায় খেতমজুর। উঠানে বসে মন দিয়ে বাঁশ চাঁছছিলেন। লম্বা লম্বা বাঁশ। হাতে কাটারি। উদ্দেশ্য তিনি একটি খাটিয়া বানাবেন। বৃদ্ধ বাবার এ কাণ্ড দেখে ছেলে জিজ্ঞেস করে-খাটিয়া বানাচ্ছ কেন? বাবার উত্তর-কাল আত্মহত্যা করব। বেশ পোক্ত করে খাটিয়া বানাচ্ছি। তোদের নিয়ে যেতে অসুবিধা হবে না। এতেই নিয়ে যাবি।
বাবার এমন উত্তর শুনে ছেলে আঁতকে ওঠে। ছেলে বলে-কী করছ, পাগল হলে নাকি? ছেলের পক্ষ থেকে এমন মন্তব্য শুনে ক্ষেপে যান বৃদ্ধ। কাটারি নিয়ে ছেলেকে তাড়া করেন। বাবার মেজাজ বিগড়ে যাওয়ায় ভয়ে কাছে আসেননি ছেলেরা।
একপর্যায়ে খাটিয়া তৈরির কাজ শেষ করেন ওই বৃদ্ধ। পরের দিন সকালে ছেলেরা দেখেন বাবা সত্যি সত্যিই আত্মহত্যা করেছেন।
ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, খাটিয়া বানানোর একপর্যায়ে পেরেক ফুরিয়ে যায়। তিনি দোকানে থেকে পেরেক কিনে আনেন। খাটিয়া তৈরির শেষে বিকেলে পাড়ায় বেরিয়ে পড়েন প্রেমানন্দ। এ সময় তার সাথে কয়েকজন প্রতিবেশীর সাক্ষাৎ হয়। প্রেমানন্দ বলেন, ‘তোমরা ভালো থেকো গো। কাল থেকে আর থাকব না।’
প্রতিবেশীরা ভাবলেন, বুড়ো বুঝি আত্মীয় বাড়ি যাবেন। তাদের একজন বললেন, ‘তা কাল কোথায় যাবেন?’ প্রেমানন্দ বলেন, ‘মারা যাব।’
প্রেমানন্দের মদ্যপানের অভ্যেস ছিল। মাঝেমাঝে মদ খেতেন। প্রতিবেশীরা ভাবলেন, আজও হয়তো খেয়েছেন। তারা তার কথায় পাত্তা দিলেন না।
পরেরদিন সকাল। বাড়ির চালাঘরে ঝুলছিলেন প্রেমানন্দ। নিথর। নাতনিই প্রথম ঝুলে থাকতে দেখে। বাড়ির মানুষ অবাক। পড়শিরা হতভম্ব। এ কী কাণ্ড! নিজের খাটিয়া নিজেই বানিয়ে কেউ আত্মহত্যা করে? এ তো ফেসবুক লাইভে ঝুলে পড়ার চেয়েও এককাঠি ওপরে।
প্রেমানন্দের ছেলে হরিবৃন্দের ভাষায়- বাবাকে কেমন যেন লাগছিল। ঠিক সুবিধার না। বলতে গেলাম। উল্টে তাড়া করল।’ প্রেমানন্দ হার্ট ও কিডনি রোগে ভুগেছিলেন বলে তার পরিবার জানিয়েছে।
কেন এই অদ্ভুত আত্মহনন
প্রেমানন্দের স্ত্রী বকুল মাঝি বলেন, ‘সারারাত নজর রেখেছিলাম৷ সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর চোখের আড়াল হতেই অঘটন ঘটে গেল৷’
মনোবিদদের মতে, এটা দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা। উনি ভেবেই রেখেছিলেন এটা করবেন (ডিটারমিন্ড এফোর্ট)। এমন কোনো সমস্যা ছিল যেটা থেকে তিনি বেরোতে পারেননি।তাই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। তবে এমন ঘটনা খুব কম ঘটে বলে তারা জানান।
বুধবার ময়না-তদন্তের পর প্রেমানন্দের মরদেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয় বাঁশের তৈরি ওই খাটিয়াতে করে, যেটা আগেই তৈরি করে রেখেছিলেন প্রেমানন্দ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন