নিজ দেশে ফিরে যেতে শর্ত দিচ্ছে রোহিঙ্গারা
ফেরত পাঠানোর উদ্যোগের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে কক্সবাজারের কুতুপালং আশ্রয় শিবিরে আশ্রয় নেতায় রোহিঙ্গারা।
জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে মিয়ানমারে তাদের ফেরত না পাঠাতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে তারা।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ইয়াংগি লি শিগগিরই রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করবেন বলে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর তারা বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়।
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দিতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে গত ১৫ জানুয়ারি। চুক্তি অনুযায়ী সপ্তাহে দেড় হাজার রোহিঙ্গা ফিরে যাবে দেশটিতে।
চুক্তি শেষে ১৭ ডিসেম্বর দেশ ফিরে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানিয়েছেন, দুই মাস এই ব্যবস্থায় চলবে। এর পর ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা বাড়বে। আগামী দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সঙ্গে যে আলোচনা করেছে তাতে গুরুত্ব পেয়েছে এই জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তার বিষয়টিও। নিজ দেশে তারা নিরাপদে থাকতে না পারলে আবারও তারা বাংলাদেশের দিকে ফিরবে বলেও আশঙ্কা আছে ঢাকার।
পররাষ্ট্র সচিব জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার পাশাপাশি তাদের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে নিশ্চয়তা দিয়েছে মিয়ানমার।
তবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা এই সমঝোতার বিষয়ে সন্দিহান। তারা নাগরিকত্বের অধিকার, ভূমি ফিরে পাওয়া এবং হত্যা-ধর্ষণ-লুটপাটের বিচারসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে স্মারকলিপি তৈরি করছেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার। এই স্মারকলিপি তারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলে ধরবেন।
এসব দাবির মধ্যে আছে :
১. রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতির ঘোষণা।
২. পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ভূমি, বাড়িঘর, মসজিদ আর স্কুল তাদের ফিরিয়ে দেয়া।
৩. হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা।
৪. সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নামে ‘নিরপরাধ’ রোহিঙ্গাদেরকে মুক্তি দেয়া।
৫. মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এবং ফেইসবুক পেইজে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে ছবি ডিলিট করা।
বিক্ষোভকারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনেরও দাবি জানাচ্ছে।
বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরু হয় ১৯৮২ সালে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বাতিল করে ওই বছর তাদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান শুরু করে দেশটির সরকার।
তবে সবচেয়ে বড় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটেছে গত বছরের শেষে। গত ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এদের ছয় লাখেরও বেশি স্থান পেয়েছে কক্সবাজারের কুতুপালং আশ্রয় শিবিরে।
রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার বাহিনীর নির্যাতনের বিষয়টি এবার জাতিসংঘে বাংলাদেশ তুলে ধরেছে বেশ জোরালভাবে। সাধারণ অধিবেশনের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের কথা তুলে ধরে তাদেরকে প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সহায়তা চান।
এর মধ্যে গত ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে দেশটির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হয় বাংলাদেশের। আর রোহিঙ্গারা কোন প্রক্রিয়ায় ফিরবে সেটি নির্ধারণে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন হয় গত ১৯ ডিসেম্বর।
আর নেপিডোতে এই জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠক হয় ১৫ জানুয়ারি। ১৩ ঘণ্টার বৈঠকেও দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা না হয়নি। পরদিন সকালে দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি সই হয়।
এই চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেয়ার পাশাপাশি প্রত্যাবাসনের পর রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জীবন-জীবিকার বিষয় নিশ্চিত করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তবে এই প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এতে রাজি করানো যায়নি মিয়ানমারকে।
পররাষ্ট্র সচিব জানান, জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করা না গেলেও রোহিঙ্গাদের ফেরাতে ইন্টারন্যাশনাল রেডক্রসের সাহায্য নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার। এমনকি রোহিঙ্গা প্রর্ত্যাবাসনে সব ব্যয় মিয়ানমার সরকার বহন করবে।
ফিজিকাল অ্যারাঞ্জমেন্ট চুক্তি অনুযায়ী কবে থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে এ বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। তবে মিয়ানমারের মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব উ মিন্ট থু বিবিসিকে জানিয়েছেন, প্রত্যাবাসন শুরু হবে ২৩ জানুয়ারি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন