নিবিড় পর্যবেক্ষণে খালেদা জিয়া, শয্যাপাশে পুত্রবধূ
এক মাসেরও বেশি সময় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তন হচ্ছে। সকালে একটু ভালো থাকলে, বিকেলে অবস্থার অবনতি হচ্ছে। আপাতত তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য বলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিভিন্ন প্যারামিটার ওঠানামা করায় চিকিৎসকরা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। লিভারের পুরনো জটিলতা বাড়ায় অন্য রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। আশানুরূপ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপারসনকে হাসপাতালেই থাকতে হবে।
ওই চিকিৎসক জানান, কিছু বিষয়ে চিকিৎসকদের কিছু করার থাকে না। জরুরি ভিত্তিতে তার লিভার প্রতিস্থাপন (ট্রান্সপ্ল্যান্ট) করা প্রয়োজন।
আরেকজন চিকিৎসক জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা ভালো নয়। সকালে একটু ভালো থাকলে, বিকেলে আবার অবনতি হচ্ছে। রক্তক্ষরণ না হলেও এমন পরিস্থিতিই তৈরি হচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে। মাঝেমধ্যেই ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স (দেহের খনিজ অসমতা) হচ্ছে। লিভারের জটিলতা বেড়ে গেলে চিকিৎসা দিয়ে একটা পর্যায়ে যখন আনা সম্ভব হচ্ছে, তখন কিডনি বা হৃদযন্ত্রের জটিলতা দেখা দিচ্ছে। আবার সেই জটিলতা সামলাচ্ছেন চিকিৎসকরা। খাবার ঠিকমতো খেতে চাচ্ছেন না, রুচি কমে গেছে। খালেদা জিয়াকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। লিভারের মতো জটিল চিকিৎসায় অনেক ওষুধের পাশর্^প্রতিক্রিয়া হওয়ারও ঝুঁকি থাকে।
তিনি বলেন, লিভার সিরোসিস এমন একটি রোগ, যার ফলে লিভার বা যকৃৎ তার স্বাভাবিক কাজগুলো যেমন বিপাকক্রিয়া, রক্ত জমাট বাঁধার উপকরণ তৈরি করা, ওষুধ ও রাসায়নিকের শোষণ, খাদ্যের পুষ্টি উপাদানের ব্যবস্থাপনা করতে পারে না।
এদিকে বিএনপির চেয়ারপাসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি দেশে এসেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুর একটায় তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। এরপর বনানী ডিওএইচএসে মায়ের বাসায় যান। সেখান থেকে তিনি অসুস্থ শাশুড়িকে দেখার জন্য এভারকেয়ার কেয়ার হাসপাতালে যান।
বিএনপি চেয়ারপারসনের পরিবারের পক্ষ থেকেও তাকে স্থায়ীভাবে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য অনুমতি দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছিল। সেই আবেদনের সঙ্গে মেডিকেল বোর্ডের লিখিত পরামর্শও যুক্ত করা হয়। কিন্তু সরকার তাতে সায় দিচ্ছে না।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর সুযোগ আইনে নেই।
গত ৯ আগস্ট রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেই থেকে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এখন তার লিভার, হৃদযন্ত্র ও কিডনির সমস্যা জটিল অবস্থায় রয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত- এ তথ্য তার মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশ করা হয়েছিল ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হƒদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হƒদরোগে ভুগছেন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে তিনি কারাবন্দি হন। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার খালেদা জিয়ার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে। তখন থেকে তিনি গুলশানের বাড়িতে থাকেন। প্রতি ছয় মাস পরপর সরকার তার মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন