নির্বাচনের তারিখ আর পেছনোর সুযোগ নেই : সিইসি
নির্বাচনের তারিখ আর পেছনোর সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ব্রিফিং ও প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। এতে কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম ও কবিতা খানম বক্তব্য রাখেন।
এসময় নির্বাচন পেছনো প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘৩০ তারিখ নির্বাচনের দিন নির্ধারিত হয়েছে। এরপর আর তারিখ পেছানোর সুযোগ নেই। কারণ, নির্বাচনের পর ফলাফল আসবে, এরপর গেজেট করা। এই তিনশ’ আসনের গেজেট করার জন্য সময় লাগে। এছাড়া, টঙ্গীর ইজতেমা হবে জানুয়ারির ১১ তারিখে। এটি আমাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ সময় সারাদেশ থেকে আইশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আনতে হয়, যাতে কোনও সহিংসতা না ঘটে।’
তিনি আরও বলেন, ‘৩০ তারিখও একটি যথেষ্ট সময় নয়, আরও সময় নেওয়া দরকার ছিল। কিন্তু আমরা সেটি করতে পারিনি। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বড়দিনসহ বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে ২৩ তারিখ নির্বাচনের বিষয়টি পরিকল্পনা করা হয়। যেহেতু নির্বাচনে সব দল অংশ নিয়েছে,তাতে আমরা খুশি হয়েছি। কিন্তু ভোটের তারিখ আর পেছানোর সুযোগ নেই।’
রিটার্নিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেশি-বিদেশি সবস্তরের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। এবছর নির্বাচনের পরিবেশ হবে ভিন্ন। আমাদের দেশে কখনও নির্বাচন হয়েছে রাষ্ট্রপতি শাসিত নির্বাচন, কখনও সেনাবাহিনী, কখনও কেয়ারটেকারের অধীনে। কিন্তু অন্যান্য নির্বাচন থেকে এই নির্বাচন সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ, সংসদ থেকে, সরকার থেকে এই নির্বাচন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৪ সালে এমন একটি নির্বাচন হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্বাচনে সব দল অংশ নেয়নি। আমরা সেজন্য আনন্দিত যে, এই নির্বাচনে সব দল অংশ নিতে যাচ্ছে। সে কারণে আপনাদের দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে।’
এখন থেকে নির্বাচনের সব দায়িত্ব রিটার্নিং কর্মকর্তাদের উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘নির্বাচন হতে হবে সম্পূর্ণ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। ভোট একটি উৎসব। ভোটের দিন ভোটাররা আনন্দমুখর পরিবেশে ভোট দিতে যাবে। সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথ পালন করবেন। ভোটের বুথ ছাড়া বাকি সব স্থানে পর্যবেক্ষকসহ সবাই যেতে পারবেন এবং তা পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। যে নির্বাচন জনগণ গ্রহণ করবে, যে নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে— সেটিই হবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এই অবস্থা আপনাদের (রিটার্নিং কর্মকর্তা) সৃষ্টি করতে হবে। এখন থেকে নির্বাচনের সব দায়িত্ব আপনাদের। কীভাবে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ করবেন, ভোটকক্ষ তৈরি করবেন সব দায়িত্ব আপনাদের। সবাই আন্তরিকভাবে নির্বাচন পরিচালনা করেন, তাহলে সামগ্রিকভাবে আমাদের ওপর জনগণের সন্দেহ হবে না।’
প্রার্থী এবং রাজনীতিবিদরা সম্মানিত ব্যক্তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনেকেই এমপি ছিলেন, অনেকে যারা এমপি ছিলেন না, তারাও এলাকায় সম্মানিত ব্যক্তি। তাদের সঙ্গে যদি সুসম্পর্ক রাখেন— তাহলে কেউই নির্বাচনে সমস্যা সৃষ্টি করবেন না। তাদেরকে কখনেও প্রতিপক্ষ হিসেবে নেবেন না। তাদের সহযোগিতা করলে তারাও আপনাদের সহযোগী ও বন্ধু হিসেবে কাজ করবেন, বিরোধিতা করবেন না। নিরপেক্ষতা হবে একমাত্র মাপকাঠি।’
রিটার্নিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের কোনও হাত থাকে না। ইসির গুরুত্বপূর্ণ অংশ রিটার্নিং কর্মকর্তারা। সব দায়িত্ব আপনাদের। আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলে আপনাদের ওপর মানুষের সন্দেহ তৈরি হবে না।’
আইন মেনে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন করলে এবং অংশীজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখলে, আপনাদের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা বাড়বে।তারা সহযোগিতাও করবে।’
সিইসি বলেন, ‘ব্যক্তিগত ব্যর্থতার দায়ে যেন কমিশন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। এবার নির্বাচনে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হবে। সরকার বহাল থেকে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়— এই নির্বাচনের মাধ্যমে সেটা প্রমাণ হবে।’
কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশনের আত্মমর্যাদার নির্বাচন। জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেবার নির্বাচন। এটা বিবেচনা করে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সরকারি চাকরি করলেও নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন