নির্বাচনের সঙ্গী ৯০ দল নিয়ে ভাবনায় আওয়ামী লীগ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ৩০ ডিসেম্বর।নির্বাচনের রণপ্রস্তুতি চলছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি শিবিরে।
নির্বাচনী প্রস্তুতিতে আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতৃত্বাধীন মহাজোট বিএনপি জোটের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে।
আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যেই দলীয় প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে ফেলেছে।এখন শুধু ঘোষণার অপেক্ষা।
এক দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা দলটির ভাবনা এখন মহাজোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে। ১৪ দলের বাইরে এবার আওয়ামী লীগের নির্বাচনী সঙ্গী জাতীয় পার্টি, বিকল্পধারা ও নাজমুল হুদার তৃণমূল বিএনপি।
এ তিনটি দলের সঙ্গে রয়েছে পৃথক তিনটি জোট। জাতীয় পার্টির সঙ্গে রয়েছে প্রায় ৫৮টি রাজনৈতিক দল। আর নাজমুল হুদার সঙ্গে রয়েছে বিএনএ (বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট অ্যালায়েন্স) নামে ২০টির মতো দল।
সাবেক রাষ্ট্রপতি বি চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টে ১২টি দল রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি নিবন্ধিত। নিবন্ধিত দলগুলো হচ্ছে- বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ও সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট।
এর বাইরেও জাকের পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামিক ফ্রন্ট, সম্মিলিত ইসলামী জোট, ইসলামী ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আরও কয়েকটি দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করতে চাইছে।
সবমিলিয়ে আওয়ামী লীগের এবার নির্বাচনী সঙ্গী ৯০টিরও বেশী রাজনৈতিক দল। যদিও এসব দলের বেশীরভাগেরই নিবন্ধন নেই। তারা আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচন করতে চাইছে।
এর পাশাপাশি ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বেশ কয়েকজন এবং সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যেও কেউ কেউ এবার নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে চান। তারা মনোনয়ন ফরমও সংগ্রহ করেছেন।
তাদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড, ফরাস উদ্দিন, জনপ্রিয় অভিনেত্রী শমী কায়সার এবং পুলিশের সাবেক একজন আইজি।
সবমিলিয়ে নির্বাচনী সঙ্গীদের নিয়ে আওয়ামী লীগকে ভাবতে হচ্ছে অনেক বেশী। কাকে কিভাবে সন্তুষ্ট রাখা যায় তা নিয়ে চলছে ভেতর বাইরে নানা হিসেব নিকাস।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, নির্বাচনী সঙ্গী অনেক দল হলেও তারা সবাই আসন পাবে না। আওয়ামী লীগ উইনেবল ক্যান্ডিডেটকে মনোনয়ন দেবে।সে যে দলেরই হোক না কেন।এমনকি সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না হলেও সমস্যা নেই।
এ বিবেচনায় জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফিকে মনোনয়ন দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। একজন সাবেক আইজিপিকেও মনোনয়ন দেয়ার কথা ভাবছে দলটি ‘উইনেবল ক্যান্ডিডেট’ বিবেচনায়।
মহাজোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে ৭০ আসন ভাগ করে দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। শনিবার কিংবা রোববার এ তালিকা প্রকাশের জোর সম্ভাবনা আছে। দলটির মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে এ তথ্য।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, জোট শরিকদের সঙ্গে নির্বাচনী আসন নিয়েই সমঝোতা হবে। যেখানে যে দলের উইনেবল প্রার্থী থাকবে, তাকেই জোটের প্রার্থী করা হবে। তিনি বলেন, সবার সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে। সবার চাওয়া-পাওয়া শোনা হচ্ছে। আমরাও সবার সুবিধা ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তের দিকেই যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, হাতে সময় খুবই কম। আমরা সব গুছিয়ে এনেছি। এখন ঘোষণার পালা। জোটের আসন সমঝোতাও শেষের পথে। শনিবার অথবা রোববার নাগাদ প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হতে পারে।
জাতীয় পার্টি আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা করতে আওয়ামী লীগকে চিঠি দিয়েছে। শুক্রবার রাতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
বৈঠকে আসন বন্টন ইস্যুই প্রাধান্য পেয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি।
জাতীয় যুক্তফ্রন্টও একাধিকবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকসহ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। ওই সব বৈঠকে যুক্তফ্রন্ট জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচন করলে আওয়ামী লীগ তাদের কতটি আসন দেবে এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উঠে আসে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
জাতীয় যুক্তফ্রন্ট আওয়ামী লীগের কাছে ২৩ টি আসন চেয়েছে। আওয়ামী সর্বোচ্চ ৪ থেকে ৫টি আসনে তাদের ছাড় দিতে পারে।
বিকল্পধারার সভাপতি বি চৌধুরী নির্বাচন করছেন না। দলটির মহাসচিব মেজর (অব.) মান্নান নোয়াখালীর একটি আসন থেকে নির্বাচন করতে চাইছেন। আর দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী মুন্সীগঞ্জ থেকে নির্বাচন করতে চান। সম্প্রতি যোগ দেয়া শমসের মবিন চৌধুরী সিলেট কিংবা মৌলভীবাজারের একটি আসনে লড়তে চান।
আওয়ামী লীগসূত্রে জানা যায়, ১৪-দলীয় জোটে মাত্র চারটি দল আছে সারা দেশে যাদের ১০ থেকে ১২ জন প্রার্থী জনপ্রিয়। জোটের ব্যানারে এদের জিতিয়ে আনা সম্ভব। বাকিদের অবস্থা নাজুক। অথচ এ ১৪ দল থেকে আওয়ামী লীগের কাছে কমপক্ষে ১০০ আসনে মনোনয়ন চাওয়া হয়েছে।
ওই আসনগুলোতে বর্তমানে যারা এমপি আছেন তাদের সঙ্গে জনপ্রিয়তার বিচারে ১৪ দলের প্রস্তাবিত নামগুলো অনেক পিছিয়ে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ ঝুঁকি না নেয়ার কথা ভাবছে।
সূত্রটি আরও জানায়, নির্বাচনের পর যদি বিজয় নিশ্চিত হয়, তখন এসব জোট শরিকের জন্য টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী, সংরক্ষিত মহিলা কোটায় এমপিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার প্রস্তাব থাকছে চূড়ান্ত বৈঠকে। জোটের অনেক শরিক ইতিমধ্যে সরকারি দলের প্রস্তাব মেনে নেয়ার আভাসও দিয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটে দলের সংখ্যা ১২টি। চারটির নিবন্ধন নেই। এ চারটি দল হল- কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাসদ (রেজাউর রশীদ খান) ও গণআজাদী লীগ। নৌকার প্রতীক চেয়ে আবেদন করা এসব দলের কোনো নেতাকে এবার মনোনয়ন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
১৪ দলের জোট শরিক নিবন্ধিত ৮ দলের মধ্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), তরিকত ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি (জেপি) ১৫টি আসন নিয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে। বাকি চারটির মধ্যে একটি আওয়ামী লীগ। অপর তিনটি দল সংসদে কোনো আসন পায়নি। এবারও সম্ভবত তাদের মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে না।
মহাজোটের শরিক দল বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ঢাকা-১৭ আসনের বর্তমান এমপি। মহাজোটের কারণে সম্ভবত এ আসনটি বিএনএফকে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
৩০০ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী চূড়ান্তের পথে। তবে এ জোটের মাত্র তিনটি দল নিবন্ধিত। এ মুহূর্তে মহাজোটগতভাবে নির্বাচনে লড়তে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন নিয়ে দরকষাকষি করছে জাতীয় পার্টি। তারা ১০০ আসন চেয়েছে। দলটির জন্য এ মুহূর্তে আওয়ামী লীগ ৪৫-৫০ আসন নির্ধারণ করে রেখেছে।
মহাজোটের বাকি দলগুলোকে দেয়া হতে পারে ২০-২২টি আসন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন