নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ২০ ডিসেম্বর
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা আজ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন দুই জোটের রাজনৈতিক অনৈক্যের মধ্যেই তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
তফসিল ঘোষণা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। তিনি নির্বাচন নিয়ে কমিশনের প্রস্তুতি ও সিদ্ধান্তগুলো জানাবেন। পাশাপাশি তফসিল ঘোষণা করবেন।
এতে ২০ ও ২৩ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারিত হতে পারে। তবে ২০ ডিসেম্বরই ভোটগ্রহণের দিন হিসেবে ইসির বিবেচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
তফসিল ঘোষণার পর আগামীকাল শুক্রবার থেকে সারা দেশে মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু হবে। প্রথমবারের মতো অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ পাচ্ছেন প্রার্থীরা। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এ (আরপিও) ঋণখেলাপিসংক্রান্ত বিধিতে ত্রুটি রেখেই এ তফসিল ঘোষণা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, আজ সকালেই সিইসির নেতৃত্বে কমিশনসভায় একাদশ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা, যাচাই-বাছাই, প্রত্যাহারের দিনক্ষণসহ তফসিলের বিস্তারিত চূড়ান্ত করা হবে।
৩১ অক্টোবর থেকে নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে। ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান সংসদের মেয়াদ রয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা আছে।
সেই হিসাবে ডিসেম্বরের ২০ তারিখের মধ্যেই নির্বাচন করার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতির বেশিরভাগই সম্পন্ন করেছেন ইসি। সাধারণত ডিসেম্বর মাসে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা থাকে। বার্ষিক পরীক্ষা যেন ১০ ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ করা হয়, সে জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে ইসি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সেই নির্দেশনা সব স্কুলে পাঠিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে আবহাওয়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনার বিষয়। সাধারণত জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি সারা দেশে তীব্র শীত থাকে। শৈত্যপ্রবাহও দেখা দেয়। নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে আবহাওয়া অধিদফতরে খোঁজ নিয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি আবহাওয়া ভালো থাকবে। এসব বিবেচনায় ২০ ডিসেম্বরই নির্বাচন করতে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে ইসিতে।
তবে ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে একজন ডিসেম্বরে নির্বাচন করা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যরা ডিসেম্বরের মাঝামাঝি নির্বাচন করতে একমত।
এদিকে ইসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আজ সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশ দেয়া ভাষণে সিইসি একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার একযোগে এ ভাষণ প্রচার করবে। বেসরকারি চ্যানেলগুলোও বাংলাদেশ টেলিভিশন ও রেডিও থেকে ফিড নিয়ে প্রচার করতে পারবে।
নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বুধবার সন্ধ্যায় বলেন, বৃহস্পতিবারই তফসিল ঘোষণা করা হবে। এ সংক্রান্ত সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইসির অধীনে থাকবে। ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।
জানা গেছে, জাতির উদ্দেশে সিইসি ১০-১২ মিনিটের একটি বক্তব্য দেবেন। এর খসড়াও চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এতে সিইসি সব দলকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানাবেন। একই সঙ্গে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে রাজনৈতিক দল, ভোটার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করবেন।
পাশাপাশি রিটার্নিং, সহকারী রিটার্নিং ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা, গাফিলতি ও শৈথিল্য প্রদর্শন করলে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯১ অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারি থাকবে।
সিইসি তার বক্তব্যে বর্তমান কমিশনের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সংলাপের বিষয়টি উল্লেখ করবেন। নির্বাচনী আইনকানুন ও আচরণ বিধিমালা সংশোধনে তার কমিশনের নেয়া পদক্ষেপ জাতিকে জানাবেন। সিইসির বক্তব্যে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনা মোতায়েন, সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহার, অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের বিষয়েও উঠে আসবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধের কারণে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ ইসির নিবন্ধিত কিছু দল বর্জন করেছিল। ফলে ওই ভোটে অর্ধেকের বেশি আসনের প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। এবারেও একই ইস্যুতে রাজনৈতিক বিরোধ অব্যাহত রয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন