নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ পেলে প্রার্থীদের নিরাপত্তা
প্রচারণায় নেমে সহিংসতার শিকার হওয়া ও নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ তুলতে শুরু করেছেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীরা। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানাচ্ছে, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে প্রার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়ার কোনো আদেশ না আসায় এখনো তারা অপেক্ষায়।
এদিকে প্রচারের সময় আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন ঠেকাতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। ভোটের মাঠে রয়েছে ১২২টি নির্বাচনী তদন্ত কমিটিও (ইলেকট্রোরাল ইনকোয়ারি কমিটি)। এসব কমিটির কাছে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা নির্বাচনী অপরাধ ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ জানাতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশনের আরও নির্দেশনা রয়েছে, নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সব সুবিধা ত্যাগ করে প্রচারকাজে অংশ নিতে হবে। কোনো ডাকবাংলো, সরকারি গাড়ি ব্যবহারসহ প্রটোকল ছাড়াই নির্বাচনী এলাকায় যেতে হবে। তবে বিশেষ আইনে অনুমতি থাকায় নিরাপত্তার কারণে প্রটোকল পাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভোটে অংশ নেওয়া বিভিন্ন দলের প্রধান ছাড়া অন্য কেউ হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে পারবেন না।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কয়েকজন প্রার্থী ও নেতার অভিযোগ, তাদের গাড়িবহরে হামলা হচ্ছে। নিজেদের ও কর্মী-সমর্থকদের জীবনের নিরাপত্তাও চাচ্ছেন কেউ কেউ।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন থেকে আদেশ দিলে সবকিছুই করব। তবে এখনো এ ধরনের কোনো আদেশ পাইনি।’
পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক সোহেল রানা অবশ্য বলেন, সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে পুলিশের সব ইউনিটকে নির্দেশ দেওয়া রয়েছে প্রার্থীদের নিরাপত্তায় কাজ করতে। তারা সেভাবেই কাজ করছে। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে, কেউ কেউ অভিযোগ করছেন। কোনো অভিযোগই আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি না, প্রতিটি অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে।’
গত ৯ ডিসেম্বর যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনে ২০ দলীয় জোটের ধানের শীষের প্রার্থী জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের (একাংশ) সভাপতি মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাসের গাড়িবহরে হামলা ও ভাঙচুর হয়। এ ঘটনায় নিস্তর ফারুক নামের এক বিএনপি নেতাকে আটক করলেও পরে ছেড়ে দেয় পুলিশ। তবে এখন পর্যন্ত কোনো মামলাও করেননি মুফতি ওয়াক্কাস।
অন্যদিকে গত ১৪ ডিসেম্বর ঢাকা-২ (কেরানীগঞ্জ) আসনে বিএনপির প্রার্থী ইরফান ইবনে আমান অমি প্রার্থী হিসেবে নিরাপত্তা চেয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার কাছে।
লিখিত আবেদনপত্রে বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমানের ছেলে অমি বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের নিরাপত্তায় পুলিশ দেওয়া হয়েছে। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা করছি। তাই আমার নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক পুলিশ নিয়োগের আবেদন করছি।’
এর আগে কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগও ইসিতেই করেছিলেন অমি।
পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক সোহেল রানা বলেন, ‘ইরফান ইবনে আমান অমি নিরাপত্তা চেয়েছেন ইসির কাছে। ইসি আমাদের চিঠি দিলে অবশ্যই তার নিরাপত্তায় পুলিশ দেব।’
সিইসির কাছে নিজের ও কর্মী-সমর্থকদের নিরাপত্তা চেয়ে গত ১০ ডিসেম্বর চিঠি দিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মুন্সিগঞ্জ-১ আসনের প্রার্থী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনও। ওই চিঠিতে সিরাজদিখানের কুচিয়ামুড়ায় সশস্ত্র হামলা চালিয়ে তার পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর, তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়া এবং সহকর্মীরা বাধা দিতে গেলে তাদের গুরুতর আহত করার অভিযোগও তোলেন শাহ মোয়াজ্জেম।
সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘শাহ মোয়াজ্জেমের ওপর হামলা হয়েছে, ঘটনাটি এমন নয়। বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। সেখানে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের পাঁচজন পুলিশ সদস্য আহত হন। ঘটনার পর শাহ মোয়াজ্জেমের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ নিয়েও কেউ থানায় আসেননি। পরে পুলিশই বাদী হয়ে মামলা করেছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন