নির্বাচন নিয়ে বিদেশি চাপ নেই: প্রেস সচিব

অন্য সরকারের চেয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বেশি ম্যান্ডেট রয়েছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, যথা সময়ে নির্বাচন হবে। নির্বাচন নিয়ে বিদেশি কোনো চাপে নেই সরকার।
রোববার (২৫ মে) রাজধানীর ক্যাপিটাল মার্কেট সাংবাদিক ফোরাম আয়োজিত সিএমজেএফ টক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রেস সচিব বলেন, আগের অন্তর্বর্তী সরকারের মতো এই সরকার শুধু নির্বাচন দিতে ৩ মাসের জন্য আসেনি বরং নির্বাচনসহ নানা ধরনের সংস্কার করবে এই সরকার। যথা সময়ে নির্বাচন হবে। নির্বাচন নিয়ে সরকার বিদেশি কোনো চাপে নেই।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে শনিবার (২৪ মে) ভালো আলোচনা হয়েছে জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক কথার মানুষ। আগামী বছরের জুনের মধ্যেই তিনি নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন।
‘প্রতি মাসে ড. মুহাম্মদ ইউনূস অর্থ পাচার নিয়ে বৈঠক করেন। মানি লন্ডারিং নিয়ে সরকার বসে নেই৷
বসে নেই বলেই বিদেশে সম্পত্তি ক্রোক করা হচ্ছে’, যোগ করেন প্রেস সচিব।
এ সময় চট্টগ্রাম বন্দর কাউকে দেয়া হচ্ছে না জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে যাতে বড় বড় কোম্পানি কাজ করতে পারে সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়া হাসিনার সময় ১০০টি অর্থনৈতিক জোন করা হয়েছিল সেগুলো এখন মহিষের বাথান হয়েছে। এর বড় কারণ পোর্টের কোনো এফিসিয়েন্সি নেই৷ পোর্টে যাতে এফেসিয়েন্সি বাড়ে এর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
বাজারে ডলারের এখন সংকট নেই জানিয়ে তিনি বলেন, পুরো শেয়ার মার্কেট ডাকাতদের আড্ডা হয়ে গিয়েছিল। যখনই পুঁজিবাজার সংস্কার করা হয়েছে, তখনই কোনো না কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ দেখা হয়েছে।
শফিকুল আলম জানান, পুঁজিবাজার যাতে ভালো অবস্থানে পৌঁছাতে পারে, সেই ব্যবস্থা করছে সরকার। জোড়াতালি দিয়ে কিছু করা হচ্ছে না। কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর পারপারস সার্ভ করা হবে না৷ টেকসই যাতে হয়, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, কর সংগ্রহ বাড়াতে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, যাতে সামাজিক খরচ বাড়িয়ে দেশের হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষুদ্র ইকোনমির গ্রোথ উন্নতি করা এবং পুঁজিবাজারে ডিপ রিফর্ম করার চেষ্টা করছে।
অর্থনৈতিক সংস্কার শেষে নতুন উচ্চতায় উঠবে শেয়ারবাজার
অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার, বিচার কার্যক্রম ও নির্বাচনের জন্য কাজ করছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, দেশে অর্থনৈতিক সংস্কার চলছে। এই সংস্কার শেষে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নতি হবে। তিনি বলেন, চেষ্টা করছি একটা ব্রডার ইকোনমিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা, যেখানে দেশের ইকোনমি টেক অফ করে। ইকোনমির গ্রোথ যদি টেক অফ করে তাহলে এর প্রভাব শেয়ার মার্কেটে পড়বে। যদি সার্বিক অর্থনীতির অবস্থা খুব ভালো হয়, আশা করা যায় খুব দ্রুত শেয়ার মার্কেট একটা নতুন উচ্চতায় উঠবে।
বিজ্ঞাপন
এছাড়া নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা কেটে গেছে, আগামী বছরের ৩০ জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
রোববার (২৫ মে) পুঁজিবাজার নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত সিএমজেএফ টকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এসব কথা বলেন। সিএমজেএফ সভাপতি গোলাম সামদানী ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
এসময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ডাকাতদের আড্ডা হয়ে গেছে। এখানে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা কেবল প্রতারণার শিকার হয়েছেন, পুঁজি হারিয়েছেন। অতীতে যারাই পুঁজিবাজারের সংস্কারে দায়িত্ব নিয়েছেন তারাই বিভিন্ন গোষ্ঠীর তাঁবেদারি করেছে বলে জানান শফিকুল আলম।
তিনি আরও বলেন, একটা বড় বিষয় হচ্ছে যে, ঐতিহাসিকভাবে বিএসইসিতে বা বাংলাদেশের ক্যাপিটাল মার্কেটের যে সংস্কারগুলো যারা করেছেন, তারা সবাই গোষ্ঠী স্বার্থের দিকে তাকিয়েছিলেন। এই গোষ্ঠী একটা পারপাস সার্ভ করছে, ওই গোষ্ঠীর প্রতিপক্ষ এসে আরেকটা পারপাস সার্ভ করেছে। ফলে দেখা গেছে যে যারা বড় বড় প্লেয়ার, তারা সবসময় বেনিফিটেড হয়েছেন। জেনারেল যারা খুব ছোট ট্রেডার, যারা সেভারস, বলা যায় শেয়ার মার্কেটে শেয়ার কিনে সেভিং করছেন, তারা সবসময় বেশিরভাগ সময় বেনিফিটেড হন নাই বা চিটেড হয়েছেন। ম্যানিপুলেশনের শিকার হয়েছেন।
পুঁজিবাজার নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের বিষয়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই মিটিংয়ে এই ধরনের কথা মানে এই ডিসকাশনটা খুবই জোরালোভাবে এসেছে যে আসলে আমরা কেন ব্যবস্থা নিতে পারছি না। এটার কারণ হচ্ছে, পুরো শেয়ার মার্কেটটা হয়ে গেছে ডাকাতদের আড্ডা। পুঁজিবাজারে এই ডাকাত গেলে আরেকটা ডাকাত আসতেছে।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
শফিকুল আলম বলেন, পুঁজিবাজার সংস্কারের জন্য আপনি যাকে নিয়ে আসছেন সে আরেকটা ডাকাত। তো এই জায়গাতে রিফর্মের জায়গা প্রফেসর ইউনূস বলছেন, এখানে খুব স্ট্রং এবং খুব গভীর রিফর্ম করতে হবে। এই রিফর্মটা যে করবে, তারা হচ্ছে এই গোষ্ঠী স্বার্থের অনেক দূরের লোক। তারাই এসে করবে। তারা নির্মহভাবে রিফর্ম করবে। পুরো বিশ্বেই শেয়ার মার্কেটের খুব গভীর রিফর্ম হয়। ভালো জায়গায় যায়। কিন্তু তো বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে যে যারা রিফর্ম করতে চান, তারা আসলে আরেকটা ধান্দাবাজ গ্রুপ।
অর্থনৈতিক সংস্কার শেষে নতুন উচ্চতায় উঠবে শেয়ারবাজার
তিনি যোগ করেন, এই জন্য প্রফেসর ইউনূস গত মিটিংয়ে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন যে, সেট অফ ফরেন এক্সপার্ট, যারা শেয়ার মার্কেট কীভাবে গ্লোবালি রিফর্ম করা যায়, গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডে আনা যায়, সেটাই যেন খুব দ্রুত হয়, তাদের নিয়ে আসা হয়। এটার জন্য একটা তিন মাসের টাইমলাইন দেওয়া হয়েছে। তিন মাসের মধ্যে তারা এসে শেয়ার মার্কেটের কী কী করণীয়, সেটা তারা বলবেন এবং সে অনুযায়ী খুব দ্রুত অ্যাকশন নেওয়া হবে।
এর ফলে পুঁজিবাজার কোনো গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি থাকবে না উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, কোনো গোষ্ঠী যেন মনে না করেন যে এখান থেকে আমি আমার মতো করে টাকা বানাব। বছরের পর বছর হয়েছে, আমরা দেখেছি, আমাদের আশেপাশে যারাই একটু শেয়ার মার্কেটে ইনফ্লুয়েনশিয়াল পিপলের আশেপাশে ছিলেন তারা সবাই কোটিপতি হয়ে গেছেন। সেই জায়গাটা যাতে না হয়, অর্ডিনারি শেয়ারহোল্ডারের জন্য ইন্টারেস্টটা প্রটেক্ট হয়। এই জায়গাটা প্রফেসর ইউনূস বারবার এটা গুরুত্ব দিয়েছেন।
ব্যাংকিং খাতকে গহ্বর থেকে টেনে তোলা হচ্ছে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থা একদম দুর্বল ছিল। স্যার (ড. ইউনূস) বলেন যে, ব্যাংকিংয়ের অবস্থা ভূমিকম্পের মতো। সবকিছু লন্ডভন্ড অবস্থা। সেইখান থেকে আমরা ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে একটা গহ্বর থেকে তুলে এনে পাহাড়ে উঠানোর চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, দুই সপ্তাহ হলো কারেন্সি ফ্লোট করা হয়েছে। কিন্তু টাকার অবমূল্যায়ন হয়নি। এটার নির্দেশ করে যে, সংস্কার ভালো সংকেত দিচ্ছে।
সরকারের মেয়াদ শেষ হলে বিদেশি বিনিয়োগে প্রবৃদ্ধি হবে জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, এটার দুইটা কারণ আছে। একটা হচ্ছে আমরা চিটাগাং পোর্টের আমরা ডিপ রিফর্ম করতে চাচ্ছি। চিটাগাং পোর্টটাকে আমরা চাচ্ছি যাতে ওয়ার্ল্ডের সবচাইতে বড় বড় কোম্পানিগুলো যাতে চিটাগাং পোর্টকে ম্যানেজ করতে পারে। আমরা চিটাগং টার্মিনাল কাউকে দিচ্ছি না। চিটাগাং টার্মিনাল যাতে তারা ইনভেস্ট করেন, ম্যানেজ করেন। এখন পর্যন্ত আমরা তাদের কাছ রেসপন্স পেয়েছি যে, তারা তিন বিলিয়ন ডলারের মতো ইনভেস্ট করবে। এবং এই চিটাগং পোর্টে যদি এফিশিয়েন্সি লেভেল দ্রুত যদি এগিয়ে নিতে পারি, সেটার একটা মাল্টিপ্লায়ার ইফেক্ট হবে পুরো বাংলাদেশের ইকোনমিতে।
তিনি বলেন, পুরো ওয়ার্ল্ডের এখন ট্রেডের যে একটা প্রটেকশনিজম চলছে গ্লোবাল ট্রেডে, সেই জায়গায় আমরা একটা বেনিফিটের জায়গায় আছি। আমরা খুব দ্রুত এটা থেকে বেনিফিট পেতে পারি। কী রকম? যেমন ধরেন, আপনারা বড় বড় দেশ একে অন্যের বিপরীতে ট্যারিফ ইম্পোজ করছে। এই ট্যারিফ ইম্পোজ করার কারণে যেই ফ্যাক্টরিগুলো হচ্ছে লো কস্ট ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্যাক্টরি, তারা আসলে খুঁজছে যে, তারা কোন দেশে গেলে তাদের এই ধরনের ট্যারিফ ফেস করতে হবে না। কোনো দেশে গেলে লেবারটা লো কস্টে করতে পারবে। তো বাংলাদেশের চেয়ে বেটার ডেস্টিনেশন পুরো বিশ্বে এখন নেই। তো সেই আলোকেই আমাদের চিফ অ্যাডভাইজার চাচ্ছিলেন বাংলাদেশকে একটা ম্যানুফ্যাকচারিং হাব তৈরি করা।
তিনি আরও বলেন, ম্যানুফ্যাকচারিং হাব তৈরি করার মূল শর্ত হচ্ছে পোর্টকে ইফিশিয়েন্ট করতে হবে। পোর্টের এফিশিয়েন্সি অন্যমাত্রায় নিতে হবে। তো এই অন্য মাত্রায় নেওয়ার টেকনোলজি আমাদের নেই। ওই ম্যানেজমেন্ট স্কিলটাও আমাদের তৈরি হয়নি। এটার জন্য আমরা বিদেশের সবচেয়ে বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে কথা বলছি। দুবাই পোর্ট ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে কথা বলছি। এপি মূলার মার্কসের সঙ্গে কথা বলছি এবং সিঙ্গাপুরের পোর্ট অফ সিঙ্গাপুর অথরিটির সঙ্গে কথা বলছি। এর ফলে যেটা হবে, আমরা ওরা যদি ম্যানেজ করেন, তাহলে আমাদের পোর্ট এফিশিয়েন্সি বাড়বে। আর পোর্ট এফিশিয়েন্সির দিকে তাকিয়ে থাকে ওয়ার্ল্ডের বড় বড় কোম্পানিগুলো যারা ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে ইনভেস্ট করে, তারা তখন চিন্তা করবে যে, ওকে দিস ইজ হাই টাইম টু ইনভেস্ট ইন বাংলাদেশ।
বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে পারলে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, এফডিআই আমরা যদি ঠিক করতে পারি, প্রচুর আনতে পারি, আর সামষ্টিক অর্থনীতি ঠিক থাকে, তাহলে আমরা মনে করছি যে এটার প্রভাব ক্যাপিটাল মার্কেটে পড়বে। ক্যাপিটাল মার্কেট গ্রো করতে বাধ্য।
তিনি বলেন, আরেকটা বিষয় হচ্ছে যে ইনফ্লেশনকে কমানো। এটা আমাদের একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা ইন্টারেস্ট রেটকে হাই করে করতে করতে এখন বোধহয় ১০ শতাংশের বেশি, ওটা করার পরে আমরা দেখছি যে, ইনফ্লেশন কমা শুরু হয়েছে। আমাদের আশা, যেটা আমাদের সেন্ট্রাল ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, এই বছরের শেষে মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের নিচে আনবে।
তিনি আরও বলেন, এফডিআই আসা শুরু হয়েছে। জুনে আপনি দেখবেন যে, চায়না থেকে আসছেন একজন কমার্স মিনিস্টারের নেতৃত্ব ১৫০ জনের মতো চাইনিজ ইনভেস্টর। চাইনিজরা যদি বাংলাদেশে আসেন, আমরা যেই জব গ্রোথটা চাচ্ছি, এটা খুব দ্রুত হবে।
এনবিআর দুই ভাগ করাটা সরকারের অগ্রাধিকার ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ট্যাক্স কালেকশনটা সবসময় কম ছিল। এটার কারণ আমরা প্রচুর ট্যাক্স এক্সেমশন দিয়েছি এবং ট্যাক্স কালেকশনের যে সিস্টেমটা, খুব ইনিফিশিয়েন্ট ছিল। সরকার এই জায়গাটায় খুব ফোকাস দিয়েছেন। সেই আলোকেই কিন্তু এনবিআরকে দুভাগ করা হয়েছে। এটার ফলে যেটা হয়েছে যে আমরা মনে করি যে ট্যাক্স কালেকশন বাড়বে।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন