নির্বাচন নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে, আশ্বাস সিইসির

নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য উপায়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন আশ্বাস দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, আমাদের বিধিবিধানে যা আছে সেগুলোর আলোকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করবো।

রবিবার রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি এই কথা বলেন।

রংপুর সিটি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করবো ইভিএম ব্যবহারের। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহার করবো।’ ইভিএম মেশিন পুরনোটা ব্যবহার হবে কি না এর জবাবে সিইসি বলেন, ‘নতুন মেশিন ব্যবহার হবে।’

এর আগে ইভিএম ব্যবহারে কিছু ভুলও ধরা পড়েছিল এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সিইসি বলেন, ‘এটা বিবেচনার রেখেই আমরা ইভিএম ব্যবহার করবো। ভুল যেন পুনরাবৃত্তি না হয়। নির্ভুলভাবে ও গ্রহণযোগ্যভাবে যেন ব্যবহার করা হয় সেটা লক্ষ্য রাখব। ভুল-ভ্রান্তির আশঙ্কা থাকলে আমরা ইভিএম ব্যবহারের ঝুঁকি নেব না।’

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সিসি ক্যমেরা ব্যবহার করা হবে কি না এ প্রশ্নের জবাবে কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘এটা একটু ব্যয়বহুল। আমরা সীমিত আকারে সিসি ক্যমেরা ব্যবহার করতে চাই।’

প্রার্থীদের পোস্টারে রংপুর ছেয়ে গেছে। অনেক প্রার্থী তফসিল ঘোষণার আগেই আগাম ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা খরচ করেছেন এমন খবরও আছে। এ ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘এটা এখন সিদ্ধান্ত নিইনি। কমিশনের সঙ্গে বসতে হবে। কী অবস্থায় আছে এটা আমরা দেখবো। কে পোস্টার লাগিয়েছে তাদের বের করার একটা বিষয় আছে। এটা কমিশনের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেব। আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’

এসময় নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এটা বুঝতে হবে প্রার্থী কিন্তু এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আপনারা প্রশ্ন করেছেন ‘তফসিলের আগে খরচ করেছে’। এখন এ টাকা খরচ প্রার্থী করেছে, না অন্য কেউ করছে এখনোতো আমরা বলতে পারবো না। আর পোস্টার সরানোর বিষয়টা হলো, এতদিন সিটি করপোরেশন আইনে অধীনে ওগুলো সরাতে বলেছিলাম। এখন আমরা নির্বাচনী আইনের অধীনে এগুলো সরানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

অনলাইনে মনোনায়ন জমা দেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার যতটুকু জানা আছে অনলাইনে জমা দেয়ার বিষয়ে সিটি করপোরেশনে এমন কোনো প্রভিশন নেই। আমরা চেষ্টা করবো আইন সংস্কারের জন্য। এটা ইমপ্রুভ করলে পরবর্তী সময়ে এটা বিবেচনা করতে পারবো।’

এর আগে রবিবার দুপুরে আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন ভবনে রংপুর সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময় সিইসি বলেন, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তে রংপুর সিটি করপেরেশনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে। স্থানীয় সরকার সিটি করপোরেশন আইন ২০০৯ অনুযায়ী মেয়াদ উত্তীর্ণের পূর্বে ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

সিইসি বলেন, রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের পরিচালনার জন্য আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং রংপুর অঞ্চলেন চারজন জেলা নির্বাচন অফিসার ও সাতজন উপজেলা নির্বাচন অফিসারকে সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ নির্বাচনে মনোনয়ন বাছাইয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিভাগীয় কমিশনার রংপুরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

নূরুল হুদা বলেন, ইতোমধ্যে রংপুর সিটি নির্বাচন এলাকার যেসব সম্ভাব্য প্রার্থী নির্বাচনী প্রচার সামগ্রী প্রচার করেছিলেন যেমন বিলবোর্ড, পোস্টার, ব্যানার, দেয়াল লিখন, ইত্যাদি সেগুলো গত ২ নভেম্বরের রাত ১২টার মধ্যে সরানো নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।

সিইসি বলেন, রংপুর সিটিতে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২২ নভেম্বর, আপিল দায়ের ২৫ থেকে ২৬ নভেম্বর, আপিল নিষ্পত্তি ৩০ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৩ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ৪ ডিসেম্বর এবং ভোট ২১ ডিসেম্বর।

প্রসঙ্গত, রংপুর সিটি করপোরেশনে এটা দ্বিতীয় নির্বাচন। দলীয় প্রতীকে এ নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়া যাবে। ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো রংপুর সিটি করপোরেশনে ভোট হয়। নির্বাচনে জিতে রংপুর সিটির প্রথম মেয়র হন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু।

এ সিটি করপোরেশনে বর্তমানে ভোটার রয়েছে তিন লাখ ৮৮ হাজার ৪২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৯ এবং নারী এক লাখ ৯১ হাজার ৭৬২ জন। সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র ১৯৬টি, ভোটকক্ষ এক হাজার ১৭৭টি।

কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে এ নির্বাচন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নিয়ে পাঁচ দিনের মাথায় কুমিল্লা সিটির নির্বাচন করেছিল বর্তমান কমিশন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অংশগ্রহণে সেটি ছিল এই কমিশনের অধীনে প্রথম নির্বাচন।