নির্বাচন নিয়ে সব সিদ্ধান্তের একক ক্ষমতা এরশাদের
আগামী ২০ অক্টোবর রাজধানী ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘সম্মিলিত জাতীয় জোটে’র ব্যানারে মহাসমাবেশ করতে চায় সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি।
রোববার বনানীস্থ পার্টি চেয়ারম্যানের কার্যালয় দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্যদের যৌথসভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া। বৈঠকে একইসঙ্গে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে দলটির নেতাকর্মীদের।
এছাড়াও আগামী নির্বাচন সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নেয়ার একক দায়িত্ব সর্বসম্মতভাবে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ওপর ন্যস্ত করা হয়।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এককভাবে না জোটগতভাবে নির্বাচন করবে- সে ব্যাপারে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। এছাড়া দলীয় মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রেও তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। সভা শেষে পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
এ সময় তিনি নানা প্রশ্নের জবাব দেন। জাতীয় পার্টিল মহাসচিব বলেন, আগামী ২০ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেন, এই মহাসমাবেশে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের নেতাকর্মীরাও উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়াও উপস্থিত থাকবেন দলটির ঢাকা এবং ঢাকার আশপাশ ছাড়াও সারাদেশের নেতাকর্মীরা।
এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টি সবসময়ই নির্বাচনমুখী দল। আমরা মনে করি আগামী জাতীয় নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ জরুরি। সবাই নির্বাচনে আসুক আমরা এটাই চাই। সব দল এলে দেশে-বিদেশে এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।
জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে, নাকি মহাজোটের সঙ্গে থেকে নির্বাচনে যাবে- এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, ‘মহাজোটে আমরা থাকব কিনা, সেটি বলার সময় এখনো আসেনি। তবে জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন পার্টির চেয়ারম্যান।’
আপনারাও কি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার চান? জবাবে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘আমরা চাই সুষ্ঠু নির্বাচন। সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী হয়তো ছোট আকারে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করবেন, সেখানে সংসদ সদস্য আছেন তাদের মধ্য থেকেই গঠন করতে হবে। সেই নির্বাচনেও জাতীয় পার্টি অংশ নেবে।’
ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্ব একটি জাতীয় ঐক্য গঠনের চেষ্টা চলছে। সেই জোটের সঙ্গে আপনারা যাবেন কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টি মহাসচিব বলেন, ‘জোট গঠনের প্রক্রিয়াকে এত ছোটভাবে দেখা ঠিক না। এটি একটি বড় বিষয়। কখন কী ঘটে, তা দেখতে পাবেন।’
বৈঠকসূত্র জানায়, পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলের নেতা রওশন এরশাদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ অভিন্নভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগত নির্বাচনের অংশ নেয়ার আগে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয়া আসনে যাতে নৌকার কোনো ডামি বা বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার বিষয়ে গুরুত্বরোপ করেন।
এ ছাড়াও প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুল হক চুন্নু সম্প্রতি মিডিয়ায় এরশাদ ও রওশনের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রকাশিত সংবাদ প্রসঙ্গে বলেন, এ দ্বন্দ্ব থাকলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জবাবে রওশন এরশাদ বলেন, আমাদের মাঝে কোনো দ্বন্দ্ব নেই, তাছাড়া আমি নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রী করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আলাদা কোনো তালিকাও দিইনি।
বৈঠকে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, ‘আমাদের সব ধরণের প্রস্তুতি রাখতে হবে। একক অথবা জোটগত নির্বাচনের। ’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে আসুক বা না আসুক আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। আমরা ৩০০ আসনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। বিএনপি কী করছে, কী কর্মসূচি দিচ্ছে তার দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। আগামী নির্বাচনে যেভাবেই হোক আমাদের ভালো ফলাফল আনতে হবে। ’
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ এমপি, কো- চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এম এ সাত্তার, কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এমপি, মো. আবুল কাশেম, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, গোলাম কিবরিয়া টিপু, শেখ সিরাজুল ইসলাম, ফখরুল ইমাম এমপি, মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী এমপি, সৈয়দ আব্দুল মান্নান, মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, সুনীল শুভরায়, এসএম ফয়সল চিশতী, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, মাহমুদুল ইসলাম, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, মো. আজম খান, এটিইউ তাজ রহমান, মহসিন রশীদ, মশিউর রহমান রাঙা এমপি, সোলায়মান আলম শেঠ, আলহাজ আতিকুর রহমান খান, আব্দুর রশিদ সরকার, মেজর (অব.) মো. খালেদ আখতার, মুজিবুর রহমান সেন্টু, ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মো. নোমান এমপি, মো. সেলিম উদ্দিন এমপি, একেএম মোস্তাফিজুর রহমান এমপি, ভাইস চেয়ারম্যান মেহজাবিন মোর্শেদ এমপি, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন এমপি, শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ এমপি, জিয়াউল হক মৃধা এমপি, শওকত চৌধুরী এমপি, যুগ্ম মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি, নুরুল ইসলাম ওমর, সালাহ উদ্দিন আহমেদ মুক্তি এমপি, ইয়াহ ইয়া চৌধুরী এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আমির হোসেন ভূঁইয়া এমপি, প্রাদেশিকবিষয়ক সম্পাদক নুরুল ইসলাম তালুকদার এমপি, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক হাজী মো. ইলিয়াস এমপি, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মামুনুর রশীদ এমপি, নির্বাহী সদস্য খোরশেদ আরা হক এমপি, মো. আলতাফ হোসেন এমপি, শাহানারা বেগম এমপি, অধ্যাপক ডা. মো. আক্কাস আলী এমপি প্রমুখ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন