নির্বাচন পেছানোর দাবি নিয়ে সন্দেহ আওয়ামী লীগের

বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনের তফসিল না পেছানোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

দলটির নেতারা বলেছেন, তফসিল পেছানোর জন্য ঐক্যফ্রন্ট নামে বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় জোট যে দাবি জানাচ্ছে তার মধ্যে কোন ‘কূটকৌশল থাকতে পারে’ বলে তারা মনে করছেন।

সংলাপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না করার দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে একটি চিঠি দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট । এই জোট বলেছে, তাদের দাবিগুলো নিয়ে তারা সরকারের সাথে আরও আলোচনা করতে চায়। শনিবার ফ্রন্টের নেতাদের এক বৈঠকের পর বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, আরো আলোচনার জন্য তারা রোববারই প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি পাঠাবেন।

কিন্তু নির্বাচনী তফসিল পেছানোর দাবি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের সন্দেহ রয়েছে।

তারা মনে করছেন, নির্বাচন নিয়ে কোন সংকট তৈরির কৌশল থেকে হয়তো তফসিল পেছানোর এমন দাবি করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যেও এসেছে যে, ৭ই নভেম্বরের পরে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আর কোনো সংলাপ তারা করবেন না। এর মাঝেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

তিনি এমন মন্তব্যও করেছেন যে, “কেউ যদি নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করে, সেটার সমুচিত জবাবের প্রস্তুতিও আমরা নিচ্ছি। এমন তৎপরতার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সতর্ক আছে।”

দলটি নির্ধারিত সময়েই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরছে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড: আব্দুর রাজ্জাক সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কথা তুলে ধরে বিবিসি বাংলাকে বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন ২৮শে জানুয়ারির মধ্যে করতে হবে।

“সব প্রক্রিয়া শেষ করে ডিসেম্বরের শেষের দিকে নির্বাচন না হলে, এই সংসদের মেয়াদের মধ্যে ৯০ দিনের যে একটা বাধ্যবাধকতা আছে, সেটা শেষ করা যাবে না। কাজেই সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন করতে হবে” – বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের সংলাপে খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নিরপেক্ষ সরকারের দাবি কার্যত নাকচ হয়েছে। সরকার বা আওয়ামী লীগ এখনকার সংবিধানে যা আছে সেভাবেই নির্বাচন হবে বলে অনড় রয়েছে।

এরপরও বিএনপি সহ এই জোট কৌশল হিসেবে তাদের দাবি নিয়ে সরকারের সাথে আরও আলোচনা করতে চায়।

আর আলোচনার এই বিষয়কে যুক্তি দেখিয়ে এই জোটের শীর্ষ নেতা ড: কামাল হোসেন তফসিল পেছানোর দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠিয়েছেন।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমেদ বলেছেন, সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে তফসিল পেছানো যায় এবং তাতে কোন সংকট হবে না বলে তারা মনে করেন।

“যে যত কথাই বলুক যে তফসিল পেছানোটা নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার, আসলে এটা হলো রাজনৈতিক ব্যাপার। এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।

তার কথায়: সকলকে নির্বাচনে আনার জন্য যদি সরকারের আগ্রহ থাকে সে জন্য প্রয়োজনবোধে তফসিলটা পিছিয়ে দেয়া যায়।

“এই সংসদের মেয়াদকালেই যদি নির্বাচন করার কথা আমরা চিন্তা করি, তাহলেও ২৮শে জানুয়ারি পর্যন্ত সময় আছে। সুতরাং এটা সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছাার ওপর নির্বর করছে।”

বিএনপি বলছে, তারা নির্বাচনকালীন একটি সহায়ক সরকারের রূপরেখাও তারা সরকারের কাছে তুলে ধরতে চায়।

কিন্তু গণভবনে পহেলা নভেম্বরের সংলাপে তারা কোন রূপরেখা দেয়নি।

যদিও সেই সংলাপে আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছিলেন যে, বিরোধীজোটের সাথে পরে আরও আলোচনা হতে পারে।

তবে ছোট পরিসরে আরও আলোচনার বিষয়টি এখন অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এবং তফসিল পেছানো বা না পেছানো নতুন বিতর্ক সামনে এসেছে।

মানবাধিকার কর্মী এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুলতানা কামাল বলছিলেন, নতুন নতুন বিতর্ক পরিস্থিতিকে আরও অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

“এই যে একটা রাজনৈতিক সংকট তৈরি করেছে রাজনৈতিক দলগুলো এবং এই সংকটটাকে তারা অনবরত বাড়িয়েই যাচ্ছে। তারা ব্যক্তিকেন্দ্রিক, দলকেন্দ্রিক, নিজেদের স্বার্থকেন্দ্রিক কিছু ইস্যু নিয়ে নিজেদের মধ্যে দেনদরবার করে যাচ্ছে,আমার মনে হয় না, এর থেকে জনগণ খুব বেশি উপকৃত হবে।”

এদিকে, নির্বাচনের তফসিল ৭ই নভেম্বরের পর ঘোষণা করা হতে পারে, নির্বাচন কমিশন সেই প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে বলে কর্মকর্তারা বলেছেন।

তফসিল পেছানোর বিরোধী জোটের দাবির ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে কমিশনের কোন পাওয়া যায়নি।

প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচন কমিশন শনিবার বৈঠকে বসেছিল, সেই বৈঠক রোববার পর্যন্ত মুলতবি রাখা হয়েছে।

-বিবিসি বাংলা