‘নির্বাচন হবেই’, ঐক্যফ্রন্টের চিঠির অপেক্ষায় প্রধানমন্ত্রী
নির্বাচন কেউ ঠেকাতে পারবে না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ষড়যন্ত্র ছিল, থাকবে। এটা মোকাবেলা করেই চলতে হবে।
নির্বাচন নিয়ে আলোচনার জন্য ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে বসবেন কি না, এ বিষয়ে জোটের চিঠি পেলেই সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।
এই ঐক্যকে স্বাগত জানিয়ে শরিক দলগুলো ও নেতাদের অতীতের নানা ঘটনা তুলে ধরে কটাক্ষও করেছেন সরকার প্রধান। বলেছেন, তারপরেও এই জোট জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারলে তার কোনো আপত্তি নেই।
তিন দিনের সৌদি আরব সফরের বিষয়ে জানাতে সোমবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়েই সবচেয়ে বেশি প্রশ্নের মুখোমুখি হন প্রধানমন্ত্রী।
সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের আমন্ত্রণে গত ১৬ থেকে ১৮ অক্টোবর দেশটি সফর করেন শেখ হাসিনা। ১৯ অক্টোবর তিনি দেশে ফেরেন। বিদেশে সফরে গেলে প্রধানমন্ত্রী বরাবর গণমাধ্যমের সামনে আসেন।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, তাদের সংলাপের আহ্বান নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে নানা প্রশ্ন করা হয় প্রধানমন্ত্রীকে। তবে সবচেয়ে বেশি কথা হয় ঐক্যফ্রন্ট আর আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে।
ষড়যন্ত্র মোকাবেলার শক্তি রাখে আ.লীগ
গত শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে নির্বাচন অনিশ্চিত বলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ‘বার্তা’র বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন একজন সাংবাদিক।
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি নির্বাচন হবে। বলেন, আমি জনগণের শক্তিকে বিশ্বাস করি। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস আমার ওপর আছে। আমি এটা বিশ্বাস করি। যে কারণে সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আমরা নির্বাচন করতে সক্ষম হব।’
‘নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি নিচ্ছে, তারা শিডিউল ঘোষণা করলে তাদের প্রস্তুতি অনুযায়ী বাংলার মাটিতে অবশ্যই নির্বাচন হবে।’
আরেক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনকে ঘিরে আবার যদি কেউ অগ্নি সন্ত্রাস করতে চায়, বোমাবাজি করতে চায়, সরকারের পক্ষ থেকে যা যা করা দরকার করা হবে। পাশাপাশি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের জনগণও রুখে দাঁড়াবে।’
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এখানে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। কমিশন স্বাধীন, তারা স্বাধীনভাবে তাদের কাজ করছে। নির্বাচন নিয়ে যারা সংশয় সৃষ্টি করতে চাচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশে যাতে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা না থাকে।’
আরেক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৪ এর নির্বাচন ঠেকাতে অনেক চেষ্টা হয়েছে। বিদেশি বন্ধু নিয়েও চেষ্টা করেছিল। কিন্ত পারেনি। কারন জনগণ সচেতন ছিল। আমার বিশ্বাস এবারও জনগণ সচেতন রয়েছে। কাজেই তাদের কোনো নালিশ কাজে আসবে না।
‘চিঠি না পেলে কী মনোভাব দেখাব?’
গত ১৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া, বিএনপি, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য মিলে গঠন করা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপের দাবি নিয়ে প্রশ্ন রাখেন আরেক জন সাংবাদিক।
আগামী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে এসব দাবির আলোকে সংলাপে বসতে সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং সরকারি দলটি চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। একজন সাংবাদিক জানতে চান, এই সংলাপের বিষয়ে সরকারের মনোভাব কী। আর নির্বাচনের দুই থেকে আড়াই মাস বাকি থাকা অবস্থায় সংলাপে বসা সম্ভব কি না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চিঠি তো পাইনি, চিঠি না পাওয়া পর্যন্ত তো মনোভাব তৈরিই হয় না, দেবটা কী বলেন?’
জোটের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আগে চার দফা ছিল। এখন সাত দফায় পৌঁছেছে। দফাটা আর কতদূর যায়, তারপরে আমি আমার বক্তব্য দেব।’
‘এখন তো কেবল সাত দফা, আর কত বাড়ে দেখেন না’, হাসতে হাসতে বলেন তিনি।
এই জোট গঠনকে কীভাবে দেখেন- এমন প্রশ্নও ছিল প্রধানমন্ত্রীর কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, সেটাকে আমি স্বাগত জানাই। কারণ এটা হওয়া প্রয়োজন আছে। আমি মনে করি যে, যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ হতে পারে, সেটা রাজনৈতিকভাবে তারা সাফল্য পায়। তাহলে অসুবিধাটা কোথায়?’
তবে যারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে তাদের ভূমিকা, চরিত্র, বাচনভঙ্গী কী সেটিও বিবেচনায় নেয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ করে মইনুল হোসেনের বিষয়টি উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, ‘মেয়েদের প্রতি কী ধরনের কটূক্তি করতে পারে সেটাও তো আপনারা দেখেছেন। এ গাছের ছাল, ও গাছের বাকল সব মিলে যে একটা তৈরি হয়েছে, যাক তারা ভাল কাজ করুক সেটাই চাই।’
আওয়ামী লীগ এটা নিয়ে কোনো দিন দুঃচিন্তা করেনি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে স্বাধীনতাবিরোধীরা আছে, জাতির পিতার হত্যাকারীদের মদদদানকারী, বা তাদেরকে যে দু’দফা বিদেশে পাঠিয়ে পুরস্কৃত করেছিল তারা, যারা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে, যারা পাঁচ পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে তারা। এরকম সব ধরনের মিলেই কিন্তু আজ এক জায়গায় হয়েছে। এটাকে বাংলাদেশের মানুষ কীভাবে দেখে সেটাই বড় কথা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এরকম একটা জোট হওয়ায় আমরা কোনো খারাপ কিছু দেখছি না। রাজনৈতিকভাবেই জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করুক।’
১০ ট্রাক অস্ত্র পাচার, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, বিদেশে অর্থপাচার মামলার রায়ের কথা উল্লেখ করে বিএনপির সঙ্গে জোট করায় ড. কামাল হোসেনের তীব্র নিন্দাও করেন প্রধানমন্ত্রী। আর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন করা মইনুল হোসেনকে এই ঐক্যে নেয়ায় বিএনপিকেও কটাক্ষ করেন তিনি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন