নিশু || ওমর ফাইয়ায
আমার বিবাহ তিন সপ্তাহ পর, মার্চ মাসের আটাশ তারিখ, আয়নায় তাকিয়ে নিজে নিজেই হাসি,কিছুটা পাগলের মত! যার সাথে দেখা হয় হাসিমুখে কথা বলি, মন যখন ভালো থাকে তখন আশপাশের সবকিছুই ভালো লাগে, আশপাশের কুৎসিত বিষয়গুলোও এখন আমার কাছে চমৎকার লাগছে।
আমার সাথে যার বিবাহ সেও আনন্দিত কিন্তু আমার মত এতটা নয়, তার কারণ কয়েকটা
নম্বর এক, তার পিতা মাতা এই আনন্দঘন মুহুর্তে অনুপস্থিত!
দুই, তার আশা ছিল তার বিবাহটা অনেক জাঁকজমকপূর্ণ হবে তার ছিটেফোঁটাও এই বিবাহতে হবে না।
তিন, সে দুদিন যাবত জ্বরাক্রান্ত জ্বরটা যেন জেঁকে বসেছে যাবার কোন নাম গন্ধ নেই।
ওহ সেই প্রিয় মানুষটার নাম তো বলা হল না! নাহ থাক নামটা!
ওর সাথে পরিচয়ের শুরুটা বলি! ধুর, শুরুর কিছু বলতে মন চাচ্ছেনা!! মাঝে থেকে বলি…
কারণ ইন্টারেস্টিং বিষয়গুলো মাঝেই থাকে, আমার কাছে মনে হয় ও আমাকে চরম ভালোবাসে! উদাহরণ দেই, একদিন রাত আট টা ত্রিশ মিনিট,দেখি আমার ফোনে দুইশটা কল, আমি ভাবছি জরুরী কোন বিষয়, তড়িঘড়ি করে ফোন করলাম, কি হয়েছে এতবার কল দিছো কেন?
না মানে আবহাওয়া পরিবর্তন হয়েছে তো শরীরের প্রতি একটু খেয়াল রেখো!
রাফাত শোনো, তুমি এখন কী করতেছো?
তুমি তো জানো আমি এই সময় কি করি, আমি পড়তেছি!
ওহ ঠিক আছে তুমি পড়ো কিন্তু ফোন রিসিভ অবস্থায় রেখে দাও,তুমি পড়তে থাকো আমি তোমার পড়া শুনি!
আমার মনে আছে সেদিন টানা দেড় ঘন্টা আমার ফোন রিসিভ অবস্থায় ছিলো এই দেড় ঘণ্টা একজন মানুষ আমার পড়া শুনতেছিলো!।
রাফাত রাফাত ঘরে আছিস? এইতো আম্মুর ডাক এসেছে,নিশ্চয়ই কোন কাজ,
রাফাত বাবু একটু বাজারে যা তো! মাছ নিয়ে আয় আর নিশুর জন্য ওষুধ নিয়ে আয়!
আমি কোনো কথা বার্তা না বলে নেট অফ করে মোবাইলটা পকেটে রাখলাম!
এখন আমি ব্যাগ হাতে বাজারে যাচ্ছি।
পকেট বড় থাকলে ব্যাগটা পকেটে রাখা যেত! মাঝে মাঝে নিশু আমার সাথে বাজারে যায়,ওর নাকি বাজার করতে ভারি মজা লাগে, আজ যেতে পারবেনা, নিশুকে সাথে নিয়ে ঘোরাফেরা করা কিছুটা ইন্টারেস্টিং, একবার আমরা দুজন হাঁটছিলাম কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে, আমার ডান হাতে মোবাইল আর ওর বাঁ হাতে মোবাইল,
হঠাৎ নিশু বলল, তোমার বাঁ হাতে কী?
আমি বললাম কিছু নেই !
নিশু বলল, আমার ডান হাতে কী? কই কিছু দেখছি না তো!
বলার সাথে সাথেই ও দাঁত খিটমিট করে বলল, তুমি আসলেই একটা পাগল, তোমার মাথায় কিছু নেই, আমার হাতটা ধরতে পারো না? কিসমিস কোথাকার!
ও আমাকে মাঝে মাঝে রেগে কিসমিস বলে, কিসমিস নামের শানে নুঝুল কী! আমার জানা নেই!!
আমি নিশুর হাতটা ধরলাম, অনেক শক্ত করে! পিছন থেকে গাড়ি আসছে, হর্ন দিচ্ছে, হর্নের আওয়াজে মাথা ঝিমঝিম করছে, আমি নিশুর হাত ধরে আছি, হাত ছাড়ছিনা বরং আরো বেশি শক্ত করে ধরলাম, আশপাশের সবকিছু আবছা লাগছে, কিছুটা ধোঁয়াটে!।
বাজারে ঢোকার সাথে সাথেই জামে মসজিদটি দৃষ্টিগোচর হলো। মসজিদটি নতুন রঙ করা হয়েছে, দেখতে ভারি সুন্দর লাগছে।
মসজিদের পাশেই একটা বসার জায়গা আছে, মুসল্লিরা ওখানে বসে, যারা বসে তারা অধিকাংশই মুরুব্বী টাইপ, নিশু বাড়ি থেকে যেদিন পালিয়ে এসেছিল এখানে বসেই কাঁদছিলো, আমাকে হঠাৎ ফোন করে বলল এই শোনো, আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না!
থাকতে পারবে না তাহলে কি করবে?
কি করবো মানে? আমি তো করেই ফেলেছি!! আমি বাড়ি থেকে চলে এসেছি না বলে, এখন তোমাদের বাজারে আছি, আমাকে নিয়ে যাও!
আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো, তারপরেও আম্মুকে অনেক কষ্টে বুঝিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসলাম কিছুটা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে!!
মাছের দোকান ঘুরতেছি কি মাছ কিনবো বুঝতে পারছি না, আম্মু ইলিশ মাছ ভালোবাসেন আর নিশু পাঙ্গাশ, আমি সবকিছুই!
অসুস্থ মানুষের দিকে লক্ষ্য করে পাঙ্গাশ কিনলাম, পাঙ্গাশ মলমূত্র খেতে বেশি পছন্দ করে, যার কারণে পাঙ্গাশ দেখলেই নাকি আম্মুর মলমূত্রর কথা মনে পড়ে! না খাওয়ার এটাই কারণ!
ওষুধের দোকানে গেলাম, নিশু বরি গিলতে পারে না, এটা একটা মহা প্রবলেম, জ্বরের ওষুধ নিতে হবে বরি ছাড়া, খুঁজে পাওয়া দুষ্কর! আমি যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছি!
হঠাৎ একটা দৃশ্য দেখে আমি চোখ নিচে নামিয়ে ফেললাম, দৃশ্যটা ঘটেছে ফার্মেসীর দোকান বরাবর তৃতীয় তলায়, আধো আলো অন্ধকারের মধ্যেও আবছা চোখে পরলো, বোধ হয় উত্তেজনায় জানালা বন্ধ করতে ভুলে গেছে, ছেলেটি মেয়েটাকে দুইটা চড় দিল তারপর জড়িয়ে ধরলো! মেয়েটি নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো, সাথে সাথে আবার চড়, মেয়েটির অসহায়ত্ব আমাকে কিছুটা আঁচ করলো, কিন্তু পরক্ষনেই মেয়েটি আর বাঁধা দিলোনা, বোধহয় নিজের অপরাধ বুঝতে পেরেছে, কারণ তার স্পর্ধা পেয়েই ছেলেটি এপর্যন্ত এসেছে, আমার আর নিশুর সম্পর্কে অশ্লীলতা তেমন স্থান করতে পারেনি, শুধু একবার আমরা দুজন একটা প্রতিযোগিতা করেছিলাম, এক মিনিট সময় প্রত্যেকের জন্য, এই এক মিনিটে ও কতটা চুমু দিতে পারে আর আমি কতটা চুমু দিতে পারি! দুর্ভাগ্যক্রমে এই প্রতিযোগিতায় আমি হেরে গিয়েছিলাম!
আমি যখন বাজার থেকে বাড়িতে এলাম, আমার হাতে বড় একটা পাঙ্গাশ আর কয়েকটা বরি, আর না বলা সত্বেও একটা জুস, সাড়ে ছয়টা বাজে, আম্মুকে দেখলাম ফুঁপিয়ে কাঁদছে, মাঝে মাঝে আবার শব্দ করেও কাঁদছে, আমি আম্মুর কাছে গেলাম,
কি হয়েছে আম্মু?
আরে কি হয়েছে বলবে তো! মাথা ব্যাথা?
আর চুপ করে আছো কেনো! মেজাজ খারাপ করোনা তো! আরে এদিকে তাকাও! আমার দিকে তাকাও তোমার চোখে পানি কেন? কি হয়েছে আমাকে বল প্লিজ!!
হঠাৎ নিশুর কথা মনে পরল আমি দৌড়ে নিশুর রুমে গেলাম।
আমার চোখের পানি বাতাসের তীব্রতা উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে, আমাদের এম্বুলেন্স খুব দ্রুত গতিতে ফরিদপুরের দিকে যাচ্ছে, অন্যদিন আরিচাঘাটে জ্যাম থাকে, আজ কোন জ্যাম ছিলোনা, গাড়ির গ্লাস খুলে দিয়েছি, গায়ে বাতাস লাগছে, গাড়িতে ড্রাইভার সহ আমরা তিনজন, অন্য দিন হলে নিশু অনেক বকবক করতো আজ নিশ্চুপ, আমি মৃত মানুষের কাছে যেতে ভয় পাই, আজ পাশে নিয়ে বসে আছি, কোন ভয় লাগছেনা, মনে হচ্ছে ও আমার সাথে কথা বলছে,
ঐ কিসমিস, তুমি কাঁদছো কেন?
চুপ একেবারে চুপ! আর এক ফোঁটা পানিও যেন না পড়ে! তাহলে কিন্তু তোমাকে মার দেবো! আমার মার তো চিনো, ধুমধাম কিল!! আমার বিবাহের গহনাগুলো তোমার স্ত্রীকে দিয়ে দিও! তোমার বিবাহ খুব ধুমধাম করে হবে! আমি দেখবো, অনেক দূর থেকে আমি দেখব!! আমার খুব খারাপ লাগছে, তোমার বিবাহতে আমি দাওয়াত পাবো না, তোমার সুন্দরী স্ত্রীকে কোন গিফট দিতে পারবো না!
আমি গাড়ির গ্লাসটা বন্ধ করে দিলাম, শীত শীত লাগছে, নিশুরও কি শীত লাগছে?
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন