নিষ্ঠুর পরকীয়া, মেয়ের প্রাণ নিলেন বাবা!
২০১২ সালে প্রেমের সম্পর্কের জেরে রফিকুল ইসলামকে বিয়ে করেন নাসরিন। এটা তার তৃতীয় বিয়ে। এর আগে আরো দুটো বিয়ে হয় নাসরিনের। বিয়ের পর দুই বছর পর স্বামী রফিকুল বিদেশে চলে যান। তারপর নাসরিনের কোল আলো করে আসে মেয়ে মনিরা খাতুন। স্বামী বিদেশ, সেই সুযোগে স্ত্রীর পরকীয়াও শুরু হয়। এই খবর বিদেশ পর্যন্ত গড়ায়। দেশে ফিরে আসেন রফিকুল। তারপর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পরকীয়ার সন্দেহে কলহ লেগে থাকত।
এ অবস্থায় নাসরিন ২০১৭ সালে গাজীপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়া এলাকায় বসবাস শুরু করেন। সেখানে একটি কারখানায় চাকরি করতে থাকেন। পরকীয়ার পানি সেখানেও গড়িয়েছে। একপর্যায়ে এক গার্মেন্টকর্মীর সঙ্গে নিরুদ্দেশ হয়ে বিয়ে করেন। চার মাস পর ওই সংসার থেকে ফিরে এসে আবারো রফিকুলের সঙ্গে সংসার শুরু করেন নাসরিন। সে সময় নাসরিন আর কোনো ছেলের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়াবে না বলেও স্বীকারোক্তি দেন।
প্রায় তিন মাস আগে তারা গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে পার্শ্ববর্তী শ্রীপুর উপজেলার গিলারচালা গ্রামে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন। দুজনই স্থানীয় ডেনিম্যাক গার্মেন্টস লিমিটেডে চাকরি নেন। এরপরও কারখানার এক সহকর্মীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন নাসরিন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রফিকুল গত শুক্রবার স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করে কাপাসিয়ার চাপাত গ্রামের নিজ বাড়িতে চলে যান। ওই রাতে কন্যা সন্তানকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করার পরিকল্পনা নিয়ে পরের শনিবার বিকালে গিলারচালা ভাড়া বাড়িতে আসেন রফিকুল। ওই দিন নিজ সন্তানকে হত্যার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তিনি। পরদিন রোববার বিকাল সোয়া চারটায় দিকে তার একমাত্র কন্যা মনিরাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে মেয়ের মরদেহ ঘরের খাটের নিচে পাতিলের ভেতর রেখে পালিয়ে যান তিনি।
গতকাল সোমবার ভোরে গাজীপুর মহানগরের নীলেরপাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর এভাবেই মেয়েকে খুনের বর্ণনা দেন তিনি। অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম (২৮) গাজীপুরের কাপাসিয়ার উপজেলার চাপাত গ্রামের মৃত মাইন উদ্দিনের ছেলে। তার স্ত্রী নাসরিন আক্তার (২৭) একই উপজেলার হালজোড় গ্রামের গোলাপ হোসেনের মেয়ে। রফিকুল-নাসরিন দম্পতির একমাত্র কন্যা সন্তান ছিলেন নিহত মনিরা খাতুন। শিশু মনিরা স্থানীয় মোহাম্মদ আলী কিন্ডার গার্টেনের প্লে শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
শ্রীপুর থানা পুলিশের এসআই মাহমুদুল হাসান জানান, সন্ধ্যায় শিশুটির মা নাসরিন আক্তার মুঠোফোনে মনিরা নিখোঁজের বিষয়টি জানান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রোববার রাত পৌনে নয়টার ভাড়া বাড়ির ঘরের ভেতর খোঁজাখুঁজি শুরু করে। একপর্যায়ে ঘরের খাটের নিচে পাতিলের ভেতর থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
শ্রীপুর থানা পুলিশের ওসি জাবেদুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় নাসরিন আক্তার বাদী হয়ে স্বামী রফিকুল ইসলামের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ হত্যার ঘটনায় বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শামীমা খাতুনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন রফিকুল।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন